গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

মেয়র জাহাঙ্গীরকে ঘিরে কী হচ্ছে গাজীপুরে : প্রতিপক্ষ তৎপর, ষড়যন্ত্র বললেন জাহাঙ্গীর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সিটি করপোরেশন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে ঘিরে গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত। মহানগর সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল সমর্থকরা জাহাঙ্গীরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছেন। চলছে বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। গাজীপুরের উত্তাপ ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রেও। এর মধ্যে গতকাল রবিবার জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় ‘স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে ওই নোটিসে। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের নিয়ে একটি মন্তব্যের অডিও এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে উত্তপ্ত গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। অবশ্য নোটিস পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেছেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে একটি এডিটেড ভিডিও বের করেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, এমনকি কিছু

গণমাধ্যমও প্রকাশ করেছে। আজকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ একটি শোকজ দিয়ে আমার কাছে ঘটনা জানতে চেয়েছে। আমি যথা সময়ে এর জবাব দিয়ে দেব।’
অন্যদিকে মেয়র জাহাঙ্গীর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা মিথ্যে প্রমাণ করা না পর্যন্ত তার সঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ। টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে জাহাঙ্গীর ও আজমত উল্লাহ দুজনেরই বিশাল জনসমর্থন থাকায় নতুন করে তারা মুখোমুখি হওয়ায় বেড়েছে সাধারণ মানুষের কৌতূহল।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহ খানেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও এবং ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং বঙ্গবন্ধু ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। ৪ মিনিটের একটি অডিও প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রচার পায় ১১ মিনিটের একটি ভিডিও। গাজীপুরের সংসদ সদস্য, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য আছে সেই অডিওতে। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা নিয়েও মন্তব্য রয়েছে তাতে। দাবি করা হচ্ছে, মধ্যরাতে নিজ বাসায় বসে একজনের সঙ্গে কথোপকথনের অডিওতে ওইসব মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তবে তিনি তা অস্বীকার করে দাবি করছেন, সব সাজানো।
একাধিক সূত্রের দাবি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও ২০১৫ তারা দুজন এক হয়ে যান। নিজেদের মধ্যে কমিটিকে কেন্দ্র করে একটা সমঝোতা হয়। যা দীর্ঘদিন ধরেই বলবৎ ছিল। এই দুজনের সমঝোতার কারণে একই এলাকার একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব কিছুটা পাশে পড়ে যান। যা মেয়র জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়। চলমান প্রেক্ষাপটে আগামী সিটি নির্বাচনকে ঘিরে সমীকরণও আছে। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল এবার মেয়র নির্বাচনে আগ্রহী। তিনি মেয়রের শাস্তির দাবিতে কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। তারও একটি বড় সমর্থক গোষ্ঠী আছে সেখানে। মামুন গাজীপুরের প্রভাবশালী একাধিক নেতা এমনকি আজমত উল্লাহ খানেরও সমর্থন পাচ্ছেন বলেও এলাকায় প্রচার আছে।
টঙ্গী পৌরসভার একাধিকবারের মেয়র আজমত গাজীপুরে জনপ্রিয় ছিলেন। ২০১৩ সালের মেয়র নির্বাচনে তার পরাজয় তার জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত। সে সময় তিনি জাহাঙ্গীর অনুসারীদের সমর্থন পাননি বলে প্রচার আছে। এও প্রচার আছে, জাহাঙ্গীর সমর্থকরা তার বিপক্ষে কাজ করেছে। এই বিষয়টি আট বছর পর আবার সামনে এসেছে। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের আগেই তুমুল আলোচনায় ছিলেন জাহাঙ্গীর। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে সে সময় দলের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ উঠে এসেছিল, তার মধ্যে ভোট থেকে সরে গেলেও জাহাঙ্গীর অনুসারীদের তৎপর না থাকা ছিল একটি। পরে ২০১৮ সালে যখন জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তখন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তার কাছে হালে পানি পাননি। এরপর থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশ ভিড়তে শুরু করে জাহাঙ্গীরের ছায়াতলে। তবে এবার তার গুণমুগ্ধদের একটি অংশই বেঁকে বসেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের যে নেতারা এতদিন জাহাঙ্গীর বলয়ে ছিলেন, তারাও যোগ দিয়েছেন তার শাস্তি ও মেয়র পদ থেকে অপসারণের আন্দোলনে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে বাঙালিদের মর্যাদা বাড়িয়েছেন- মেয়র জাহাঙ্গীর আলম : এদিকে গাজীপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি এম নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গাজীপুরের উন্নয়ন ব্যাহত করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন করে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়ে বিশ্ব দরবারে আমাদের বাঙালি জাতির মর্যাদা বাড়িয়েছেন। এতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া এ দেশের মানুষের সম্মান অন্যমাত্রার উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বিশ্ববাসীর কাছে আজ এটা স্বীকৃত যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে আরো সমাদৃত হয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসায় আমরা উচ্ছ¡সিত, আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জনে গাজীপুর নগরবাসীও গর্বিত। গতকাল রবিবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. জাহাঙ্গীর আলম এসব কথা বলেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও আগ্রহে গাজীপুর সিটিতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে। বিগত ৪০/৫০ বছরে যে কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি সেগুলো এখন করা হচ্ছে। গাজীপুরবাসীর প্রতি দেশরতœ শেখ হাসিনার ভালোবাসায় গাজীপুর মহানগরের গ্রাম অঞ্চলগুলো, যেগুলো কয়েক বছর আগেও ইউনিয়ন পর্যায়ে ছিল, সেগুলো এখন শহরে পরিণত হচ্ছে। শত শত কিলোমিটার সুপ্রশস্ত সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও যেখানে অন্ধকার ছিল, সেখানকার সড়কে এখন এলইডি লাইট লাগানো হচ্ছে। পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, খেলার মাঠ, কবরস্থান করে দেয়া হচ্ছে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা চলাকালে সময়ে অনেক উন্নত দেশও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে থমকে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের কারণে অর্থনীতির চাকা থমকে দাঁড়ায়নি। এই কারণেই করোনা চলাকালেও গাজীপুর সিটির হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের একটাও থেমে থাকেনি। বরং আমরা নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছি।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মহামারি করোনা মোকাবিলা, চিকিৎসকসহ নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় গাজীপুর সিটির অগ্রণী ভূমিকা সবারই জানা রয়েছে। ঠিক এমনি সময়ে একটি মহল উন্নয়ন-অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে নেমেছে। কিন্তু জাতির পিতার আদর্শ ধারণ ও লালন করে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। এজন্য নগরবাসী সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়