বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

দেখার হাওরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ৫০ হেক্টর জমির ফসল : মহাসিং নদীতে সøুইসগেট নির্মাণের দাবি স্থানীয় কৃষকদের

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ/ছায়াদ হোসেন সবুজ, সুনামগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জ থেকে : হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে কয়েকশ কৃষকের সারা বছরের স্বপ্নের সোনালি ফসল। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে মহাসিং নদীর তীরে ফসলরক্ষা বাঁধে স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরজমিন দেখা যায়, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে গত এক সপ্তাহ ধরে দিনে রোদ রাতে থেমে থেমে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানিতে দেখার হাওরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাওর থেকে পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় কৃষকের চোখের সামনেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে তাদের সারা বছরের স্বপ্নের সোনালি ফসল। ইতোমধ্যে এ হাওরের ৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করা না গেলে কমপক্ষে দুইশ একর জমির সোনালি ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হাওর পরিদর্শন করে সেখানে চারটি সেচ মেশিন দিয়ে হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ছোট-বড় ৯৫টি হাওরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হাওর দেখার হাওর। এ হাওরে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষাধিক কৃষকের ২৪ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারো এ হাওরে বোরো চাষ করা হয়েছে এবং হাওরে ফলনও হয়েছে ভালো।
কিন্তু গত কয়েকদিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ, কলাউড়া, ইছাগুড়ি, হুরমতনগর, রউয়ারপাড়, গুয়ারছড়া, হরিপুরসহ ৭টি গ্রামের কয়েকশ কৃষকের কাঁচা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধান পুরোপুরি কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটতেও পারেননি কৃষকরা। এদিকে অনেক কৃষকই হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়া দেখে কাঁচা ধানই কেটে ফেলছেন।
হাওরে অসময়ে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার মহাসিং নদী তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা জানান, বৃষ্টি হলে হাওরে যে পানি জমে সে পানি নদীতে নামার পথে ফসলরক্ষা বাঁধ দেয়ায় প্রতি বছরই এ হাওরে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ফসলহানির ঘটনা ঘটে।
দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে ফসলরক্ষার দাবি কৃষকদের। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে মহাসিং নদীর তীরে ফসলরক্ষা বাঁধের স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
দেখার হাওরপাড়ের দরিয়াবাদ গ্রামের কৃষক নুর আহমেদ বলেন, দেখার হাওরের এ অংশে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি জমি আছে। আর দশ-পনেরো দিন পর ধান কাটা যেত। এমন সময় বৃষ্টি ও বিলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের সোনালি ফসল। তিনি আরো বলেন, মহাসিং নদীতে হাওরের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নামানোর ব্যবস্থা না করলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।
শুধু সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়ই নয় জলাবদ্ধতার ফলে এ হাওরের শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের ফসলও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় এমন সমস্যায় পড়েছেন এ হাওরের প্রান্তিক কৃষকরা। ফলে হাওরের সোনালি ফসল গোলায় তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।
উপজেলার আস্তমা এলাকার একাধিক কৃষক জানান, এ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য স্থায়ী সমাধান হলো এখানে স্লুইসগেট নির্মাণ করা। মহাসিং নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণ হলেই এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এখানে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করার জন্য।
হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে হাওর পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যেই জলাবদ্ধতা থেকে ফসলরক্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্প বসিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, প্রতি বছর বৃষ্টির পানিতে এ হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছর শান্তিগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমে কিছুটা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হওয়ায় কৃষকরা তাদের সোনালি ফসল গোলায় তুলতে পেরেছিল। আমরা চেষ্টা করব পানি নিষ্কাশনের জন্য। যাতে কৃষকরা ফসল তাদের গোলায় তুলতে পারেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাব। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সহযোগিতা পাবেন বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, দেখার হাওরের জলাবদ্ধ এলাকার গ্রামবাসী ও কৃষকদের দাবি পানি নিষ্কাশন করা হলে ফসলরক্ষা পাবে। কৃষকদের প্রস্তাব অনুযায়ী পানি নিষ্কাশনের জায়গাটি পরিদর্শন করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়