মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ/রাসেল আহমদ, সুনামগঞ্জ ও মধ্যনগর থেকে : হাওরাঞ্চলের নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকিতে রয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী ফসলরক্ষা বাঁধ। এদিকে ক্ষেতের সোনালি ফসলরক্ষা করতে হাওরপাড়ের শত শত কৃষক বাঁধটিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয়ে হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতে হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদনদীতে পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পাউবো। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী পাটলাইয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নজরখালি বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরের উঁচু এলাকার গইন্যাকুড়ি ও এরাইল্যাকোণা হাওরের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। এই বাঁধ ভাঙলে তাহিরপুর ও মধ্যনগরের নন-হাওরের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে সামসাগর, এরাইল্যাকোণা, পইল্যার বিল, গইন্যাকুড়িসহ কয়েকটি ছোট হাওর রয়েছে। যেখানে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করেন। এবারো এসব হাওরে জমি চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইটভুক্ত সংরক্ষিত এলাকা হয়ায় এখানে কেনো ধরনের কার্যক্রম চালানোর আইনগত সুযোগ নেই। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি। তবে প্রতি বছরই স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করে এসব হাওরের ফসলরক্ষা করেন। কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত নদী পাটলাইয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নড়বড়ে বাঁধটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এ অবস্থা দেখে শনিবার সকাল থেকে মধ্যনগর ও তাহিরপুরের হাওরের তীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকরা আবারো স্বেচ্ছায় বাঁধে মাটি দিচ্ছেন। তবে এ বাঁধটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নজরখালি বাঁধ এলাকায় ২৫-৩০ হেক্টর জমি রয়েছে। তবে হাওরের বাইরের আরো প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করেন কৃষকরা। এবারো তারা এসব হাওর বোরো ধান চাষ করেছেন। মধ্যনগরের উত্তর ও দক্ষিণ বংশিকুন্ডা, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দল এলাকার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর নন-হাওরি জমিও রয়েছে। এ বাঁধ ভাঙলে নন-হাওরি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে হাওরাঞ্চলের আবহাওয়া বিরূপ। টানা রোদ নেই, হাল্কা বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত ও ঝড় হচ্ছে। তাছাড়া মেঘালয়েও মাঝারি ও হাল্কা বৃষ্টিপাত হওয়ায় সীমান্ত নদনদীগুলোতে পানি বাড়ছে। এ কারণেই নজরখালি বাঁধে পানি ছুই ছুই করছে।
পাউবোর মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নদীতে ৫০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। শনিবার বিকালে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ২.৭৩ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এ মৌসুমে পানির বিপদসীমা হলো ৬.০৫ মিটার। তাছাড়া মেঘালয়ে আগামী এক সপ্তাহ হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে বলেও জানিয়েছে পাউবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, মেঘালয়ের হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতে সীমান্ত নদনদীতে পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি। তবে নজরখালী বাঁধ পাউবোর আওতাভুক্ত নয় বলেও জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, নজরখালী এলাকায় ২০-২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বাকি যা আবাদ হয়েছে তা নন-হাওরে টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায়। মধ্যনগর ও তাহিরপুর মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।