গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

৪ জেলার ৯৬ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হুমকিতে : হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ধু-ধু বালির চর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসমাইল হোসেন বাবু, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে : দেখে চেনার উপায় নেই এখন। এককালে ছিল প্রমত্তা পদ্মা। অথই পানি আর ঢেউয়ের খেলা ছিল। আজ পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে বিশাল বালুচর। চোখে পড়ে ধু-ধু বালুর। নৌকার বদলে গরু, ঘোড়া, মহিষের গাড়ি ছুটছে। কখনো পণ্য নিয়ে কখনো পণ্য আনতে। পদ্মার কোথাও কোথাও পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে মানুষ। পানিপ্রবাহ না থাকায় পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। পানিপ্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় সেচের পানির সংকটও তীব্র। প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যেই অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। নৌ পারাপার নেই। নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের। পদ্মায় স্রোত না থাকায় এতে প্রত্যেক বছর লাখ লাখ টন পলি জমা হচ্ছে। এভাবে পদ্মায় জন্ম নিয়েছে চর। ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নানা পেশার মানুষ পদ্মার বালুচর দিয়ে হেঁটে পার হয়ে পাবনা ও কুষ্টিয়া শহরে যাতায়াত করে। যেটুকু পানি আছে তার কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত। গত ৫০ বছরে পদ্মার তলদেশ ভরাট হওয়ায় এর উচ্চতা দাঁড়িয়েছে আঠারো মিটার। বর্ষায় পানি থাকলেও বাকি সময়ে পানি থাকে তলানিতে। বিশাল পদ্মা খালের রূপ নিয়েছে। পদ্মা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাখা-প্রশাখা নদনদী বড়াল, মরা বড়াল, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়া সাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবতসহ পঁচিশটি নদনদীর অস্তিত্ব প্রায় শেষ। নদীতে অস্বাভিকভাবে পানি কম থাকায় এ বছর চালু করা যায়নি গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প। আর এতে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলার ৯৬ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে।
সরজমিন দেখা যায়, নদীর প্রায় অর্ধেকের বেশি এলাকা পার হয়ে কিছুটা পানির দেখা মিললেও সেখানে পণ্যবাহী নৌকা চলে না। আর এতে সবচেয়ে দুর্ভোগে আছে পদ্মাপাড়ের জেলেরা। জেলে সাদেক আলী বলেন, জীবনে এত কম পানি আগে দেখিনি। গত দুই মাসে দিনে দুই কেজির বেশি মাছ ধরতে পারিনি। অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে শতাধিক জেলে পরিবারকে। জিকে প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হামিদ বলেন, সেচ পাম্প চালাতে কমপক্ষে সাড়ে চার মিটার উচ্চতার পানির প্রয়োজন হয়। অথচ এ বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল চার দশমিক শূন্য সাত মিটার। এছাড়া প্রকল্পের তিনটি প্রধান সেচ পাম্পের দুটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। পানি পরিমাপক দপ্তর হাইড্রলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকেই প্রতি দফাতেই কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার কিউসেক কম পানি পাওয়া যাচ্ছে। যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রতি দফায় (প্রতি দশ দিন অন্তর) পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৬৩ হাজার ১১৩ কিউসেক, ৪৮ হাজার ৫১৮ কিউসেক, ৪৮ হাজার ৩৫৯ কিউসেক, ৪৩ হাজার ৯২৬, ৩৪ হাজার ৬৯৭, ৩৫ হাজার ৭৫১ কিউসেক ও ৩৬ হাজার ৮১৮ কিউসেক।
গত বছর একই সময়ে পানির প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৮৫ হাজার ৩১৬ কিউসেক, ৭০ হাজার ৮২৭, ৬৯ হাজার ৯৯০, ৬৭ হাজার ৩৬৪, ৫৯ হাজার ৩৭৬, ৪৭ হাজার ৮৯১ কিউসেক ও ৪২ হাজার ৩৭২ কিউসেক। চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে প্রথম ১০ দিন ৭০ হাজার কিউসেক বা কম পানি থাকলে দুই দেশ ৫০ শতাংশ করে পানির হিস্যা পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিন ৭০ থেক ৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পাবে এবং অবশিষ্ট পানি ভারত পাবে। চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ দিনের একটি চক্র বাদ দিয়ে গ্যারান্টিযুক্তভাবে বাংলাদেশ ও ভারত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে।
শুকনো মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা ও বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে দুই দেশ। পাবনা হাইড্রলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, এ বছর শুরু থেকেই পদ্মার উজানে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ কম থাকায় চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও পরিমাণের দিক থেকে পানি অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে পানি চুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই অনেকটাই শুকিয়ে গেছে পদ্মা। এবার বর্ষায় পদ্মায় বান ডাকেনি। প্রতি বছরই ভারতের মালদা ও বিহারের বন্যা ঠেকাতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়। এ সময় পদ্মায় পানি অভাব থাকে না। এবারের চিত্র ভিন্ন। বৃষ্টিপাত ছিল কম। ফলে পানি কমেছে। বেড়েছে চরের বিস্তৃতি।

খাল সদৃশ্য পদ্মা বয়ে যাচ্ছে। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও খানিকটা পানি দেখা যায়। শুকনো মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ছে। এখনই তাপমাত্রা প্রায় চল্লিশ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। পদ্মার বুকজুড়ে বিশাল বালিচর যেন তপ্ত বালির কড়াই। আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠছে। এবার পদ্মা ও শাখা নদীগুলো না ভরায় পানির স্তর রিচার্জ হয়নি। ফলে পঞ্চাশ ষাট ফুট নেমে গেছে পানির স্তর। কৃষি ও জীবন জীবিকার প্রয়োজনে পাতাল থেকে পানি উঠানো চলছেই। বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়েই শুরু হয়েছে পানির হাহাকার। অনেক স্থানেই গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ব্রিজের পনেরটি পিলারের মধ্যে সাতটির নিচ দিয়ে পানির প্রবাহ রয়েছে। ভেড়ামারা পয়েন্টের পাঁচটি পিলারে দ্রুত পানি কমছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়