গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

সক্রিয় মৌসুমি অপরাধীচক্র তৎপর র‌্যাব-পুলিশও

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আর কয়েকটা দিন পরই ঈদ। আর তাই সব পরিকল্পনা এই দিনকে ঘিরেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদআনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়ে মানুষ ফিরতে শুরু করেছে নিজ নিজ গ্রামে। খালি হচ্ছে রাজধানী। তবে এই আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ ঘিরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধীচক্র। ঈদকে ঘিরে সংঘবদ্ধ জালটাকার কারবারি, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, টানাপার্টি ও কিশোর গ্যাং চক্রের তৎপরতা দেখা গেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তাদের কঠোর নজরদারির ফলে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগে হাতি দিয়ে রাস্তায় চাঁদা তোলার সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় হাতির পায়ে হেলাল মিয়া (৫০) নামে এক রিকশাচালক পৃষ্ট হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর মাহুত ওই হাতি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ২৫ মার্চ রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব-২ এর একটি দল। র‌্যাব বলছে, রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে ওঠে এসব অপরাধীচক্র।
এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রতারকচক্রকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। গত ৩০ মার্চ হাসপাতালে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে বেদানা খাতুন নামে এক নারী সর্বস্ব খোয়ান। ওই ঘটনায় মকবুল ও সুমন নামে দুজনকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগীর ভাষ্য, প্রতারকচক্রের দুই সদস্য তার হাতে একটি ব্যাগ রাখতে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই তার যেন কী হয়। ব্যাগ দেয়া ব্যক্তিরা তার মোবাইল ফোন, পরনের ৫ আনা ওজনের কানের দুল, ২ ভরি ওজনের গলার চেইন শরীর থেকে খুলে নিলেও নির্বিকার থাকেন তিনি। রমজানকে কেন্দ্র করে ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ও কিশোর গ্যাং চক্রের তৎপরতাও দেখা যায়। এরই মধ্যে অভিযানে রাজধানীর বিমানবন্দর, বনানী, মহাখালী, ভাটারা, আব্দুলাহপুর, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের ৩২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা থেকে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত পাঁচটি কিশোর গ্যাংয়ের ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, রাজধানীর সব এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘শূন্য সহিষ্ণু নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির তৎপরতা ঠেকাতে মাঠে আছেন পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও শপিংমলে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। এসব এলাকা চিহ্নিত করে ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের চাঁদাবাজিও বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারীর বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজি করছে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। যদিও এমন ঘটনা রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় একটি ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের একজনের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের বিভিন্ন সদস্যের নামে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে, এ সময় রাজধানীতে চুরির ঘটনাও বাড়তে দেখা যায়। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানায়, প্রায়ই গ্রেপ্তার হওয়া চোরচক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চুরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দুর্বৃত্তরা মূলত ওইসব এলাকার বাসা বা বাড়িকে টার্গেট করে, যে বাসায় দারোয়ান ও সিসি ক্যামেরা নেই। ডিএমপির অপরাধ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২৩ সালে সিঁধেল চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে, ৫৪৭টি। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৮২টি ও ২০২২ সালে ৭১৩টি। পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি সিঁধেল চুরির মামলা হয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। এই বিভাগে মামলা হয় ৯৯টি। এরপরই সবচেয়ে বেশি ৯৫টি মামলা হয়েছে মতিঝিল বিভাগে। এর বাইরে ৭০ এর বেশি মামলা হয়েছে ওয়ারী, গুলশান ও মিরপুর বিভাগে। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের চাঁদাবাজিও বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারীর বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজি করছে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। যদিও এমন ঘটনা রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে ডিএিমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় একটি ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের একজনের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের বিভিন্ন সদস্যের নামে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে রাজধানীবাসীকে ১৩টি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেছেন ডিএমপি কমিশনার। তা মেনে চললেই নিজেসহ অন্যকে নিরাপদে রাখা সম্ভব। শুধু পুলিশের নিরাপত্তাব্যবস্থা অপরাধ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
ঈদ নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। তাই এ সুযোগে কেউ যাতে অপরাধ সংগঠিত না করতে পারে সেজন্য ফ্ল্যাট-বাড়ির নিরাপত্তায় পাহারাদার নিয়োজিত করুন। সিসিটিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করে সঠিক দিকে তাক করে রাখুন। যাতে করে অপরাধ সংগঠিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি। জাল টাকার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলেন তিনি। এ সময় যে কোনো প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করে আপনারা পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন। টাকা নিরাপদে সতর্কতার সঙ্গে পরিবহন করুন। প্রয়োজনে টাকা পরিবহনের সময় পুলিশের সহযোগিতা নিন। টাকা পরিবহনে আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা প্রস্তুত আছি। ছিনতাই বিষয়ে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বাড়ায়, তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনিব্যবস্থা নিচ্ছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়