গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

পর্যটনে খরার আশঙ্কা : ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উৎসবের ছুটি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হরলাল রায় সাগর : ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে বরাবর পর্যটন খাত গতি পেলেও এবার ভাটা পড়ছে। দুই উৎসবের লম্বা ছুটিতেও পর্যটক কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা ও তীব্র তাপদাহ। আগ্রহী হচ্ছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অর্ধেকে নামতে পারে পর্যটকের সংখ্যা। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে পর্যটন খাতের স্টেক হোল্ডারদের। এবার পর্যটন শিল্পে বাণিজ্য হতে পারে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য পর্যটকদের অবকাশ যাপন নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি রমজানে পর্যটক শূন্যতা পুষিয়ে নিতে দুই উৎসবের ছুটিকে কেন্দ্র করে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলো সাজানো হচ্ছে আকর্ষণীয়ভাবে। ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে থাকছে বাড়তি যত আয়োজন। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-রেন্ট এ কার ও পরিবহনসহ সেবা খাতগুলোতে থাকছে আকর্ষণীয় অফার। নতুন-নতুন ট্যুর প্যাকেজ সাজাচ্ছে ট্রাভেল এজেন্টরা। ডলার সংকট ও বিমান টিকেটের বাড়তি দামের কারণে বিদেশ ভ্রমণেও আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা।
ঋতুরাজ বসন্তে এবার ঈদের ছুটি পড়েছে ১০ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি। ৮ ও ৯ এপ্রিল মাঝের দুই দিন ছাড়া শবে কদর, পহেলা বৈশাখ ও সাপ্তাহিক মিলে ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের ছুটি। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে নয়। গোটা দেশে বইছে তীব্র তাপদাহ। কয়েকটি জেলায় ঘোষণা করা হয়েছে হিট এলার্ট। এ কারণে দেশের শীর্ষ পর্যটনগুলো ছাড়াও স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ ছেটে ফেলেছেন ভ্রমণবিলাসীরা। এছাড়া অবকাশ যাপনে রিসোর্টে যারা বেড়াতে অভ্যস্ত, তারাও কাটছাট করেছেন ট্যুর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ আকর্ষণীয় পর্যটনের শীর্ষে রয়েছে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পর্যটকদের চাপ বেশি পড়ার কথা। পদ্মা সেতুর কারণে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে ভ্রমণপিপাসুদের থাকে বাড়তি চাপ। আর রাজধানী ঢাকাতে রয়েছে চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু সব কিছু উবে যাচ্ছে প্রচণ্ড গরমে।
এ পর্যটন খাতরে সঙ্গে সেবা খাত হিসেবে রয়েছে খাবারের দোকান, সড়ক পরিবহন, বিমান পরিবাহন ও ভাড়া গাড়ি বা রেন্ট এ কারের মতো খাতগুলো। পাশাপাশি পোশাকের দোকান, বিভিন্ন কারুকার্যের বাহারি পণ্যসহ আরো বেশ কিছু পরোক্ষ সেবা খাত রয়েছে। এসব খাতে প্রচুর অর্থ লেনদেন হয়। কিন্তু সব কিছু নিয়েই শঙ্কা এবার।
ঈদ ও পহেলা বৈশাখ মিলে দীর্ঘ ছুটি মিললেও এবার পর্যটন শিল্পের জন্য সুখবর নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দুইটি কারণে এবার অন্যান্য বছরের

তুলনায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক কম হবে। প্রথমত, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তেমন ভালো নয়। মানুষ অর্থ সংকটে রয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আবহাওয়াগত কারণে সময়টা ভ্রমণের উপযোগী নয়। প্রচণ্ড গরম চলমান। ফলে এবারের ঈদে সারা বছরের পর্যটকের হারে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ বা ২৫-৩০ শতাংশের মতো পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারেন। দেশীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বছরে সোয়া কোটির মতো মানুষ অবকাশ যাপন করেন জানিয়ে শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, এ হিসাবে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বাণিজ্য হয় পর্যটন শিল্পে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন হওয়ায় এ খাতে ব্যবসা হতে পারে দুই হাজার কোটি থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
কক্সবাজারের হোটেল ওশান প্যারাডাইসের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইয়েদ আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাকের উৎসবে লম্বা ছুটি থাকলেও আশানুরূপ হোটেল বুকিং হচ্ছে না। হোটেল বুকিং হয়েছে মাত্র দুই দিনের জন্য ১২ ও ১৩ এপ্রিল। এর মধ্যে ফুল বুকিং হয়েছে ৯০-৯৫ শতাংশ। আর বৈশাখের ছুটির জন্য হোটেল বুকিং হয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সমুদ্র উপকূলে তুলনামূলক গরমের তাপমাত্রা তীব্র থাকে। এ দাবদাহে পর্যটকরা বেড়াতে চান না। তিনি বলেন, পর্যটন মৌসুমের মধ্যে গোটা রমজান মাস প্রায় পর্যটক শূন্য গেছে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসবের অপেক্ষায় থাকলেও ব্যবসা আশানুরূপ হবে না বলে আশঙ্কা করেন।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম এবং কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির ভোরের কাগজকে বলেন, এবারের ঈদের ছুটি উপলক্ষে কুয়াকাটায় ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের সাড়া তেমন মিলছে না। তারপরও রমজানে পর্যটকশূন্যতা কাটাতে আশায় বুক বেঁধেছেন স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তারা জানান, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত সি বিচ ম্যানেজমেন্ট ইতোমধ্যে পর্যটকদের নির্বিঘœ ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ বিষয়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আশার কথা বলেছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ভালো মানের হোটেল-মোটেল-রিসোর্টগুলো অনেক বুকিং হয়েছে। সাধারণ মানের হোটেলগুলোতেও কিছু বুকিং হয়েছে। তবে ঈদের দিন বা পরের দিন বরাবরে মতো উপচে পড়া ভিড় হবে বলে প্রত্যাশা তার। এখানের হোটেল-মোটেলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। এবার অন্তত এক লাখ পটর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করে মোতালেব শরীফ বলেন, ইতোমধ্যে হোটেলগুলো সংস্কার করা হয়েছে। পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করা হবে।
বিমান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে দেশের ভ্রমণবিলাসীদের প্রথম পছন্দ ভারতের কলকাতা, সিমলা, মানালী, মেঘালয়, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ড। ডলার সংকট ও টিকেটের দাম বাড়ার কারণে পর্যটনকেন্দ্রিক বিদেশের প্যাকেজগুলোতে খরচ বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। তাই ঈদের ছুটি কাটাতে বিদেশ ভ্রমণ গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেকে নামতে পারে।
ফ্লোরি হলিডেজ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, চার রাত ও পাঁচ দিনের যে প্যাকেজগুলো আগে মূল্য ছিল ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। মানে ৩০ শতাংশ খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে আগে সাধারণ পর্যটকদের প্রচণ্ড চাপ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। এছাড়া সাধারণ পর্যটকদের বাইরের দেশে ভ্রমণের প্রবণতাও কমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়