গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

চলচ্চিত্রশিল্পে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব : মো. মোরশেদুল আলম > চলচ্চিত্র

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রযুক্তির অনস্বীকার্য প্রভাবে চলচ্চিত্রশিল্পেও পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থানে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মতো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকেও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংসের অগ্রগতির দ্বারা চালিত বিশ্ব অর্থনীতির চলমান রূপান্তরকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বলা হয়। আশঙ্কা কিংবা সম্ভাবনা যাই বলা হোক না কেন এর ইতিহাস ও বিবর্তন সরলরৈখিক নয়। এর সঙ্গে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ইতিহাসের জটিল সম্পর্ক রয়েছে। প্রযুক্তি যতই আধুনিক ও উন্নত হোক, সেটিকে সফল করতে হলে এসব সম্পর্কের সমীকরণ মেলাতে হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা মুক্ত চিন্তার ও সচেতন কম্পিউটার সিস্টেমকে বোঝায়; যা মানুষের মতোই নিজস্ব মতামত পোষণ করতে পারে। যদিও বাস্তবে আমরা এমন কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা থেকে এখনো দূরে রয়েছি। তবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জানান দিচ্ছে।
এআই মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেক ক্ষেত্রে সহজতর করে তুলেছে। তবে উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে হুমকিও রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এআই মানুষকেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৯৭ সালে দাবা খেলায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিয়ে আইবিএমের ডিপ ব্লু সুপার কম্পিউটার খুব হইচই ফেলে দিয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাডভান্স লেভেলের উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, মেশিন সেভাবে চিন্তা করবে। যদিও এটি বলা হচ্ছে, তবে মানুষের ক্ষমতা বেশি। মেশিনকে চিন্তা করার প্রোগ্রামতো মানুষই দিচ্ছে। এআইর মাধ্যমে কাজের গতি ত্বরান্বিত হবে। তবে মানুষের বুদ্ধিকে ছাপিয়ে যাবে, সৃষ্টিশীলতাকে ছাড়িয়ে যাবে, এটা এখনো সেই পর্যায়ে নেই। এআই বেজ সলিউশন বিভিন্ন প্রোডাক্টে বা সফটওয়্যারে থাকতে পারে। আমরা স্টক মার্কেটের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সলিউশনগুলো, সাইবার সিকিউরিটিতে প্রোটেকশনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে যেসব সফটওয়্যার বানানো হচ্ছে এবং বিদেশ থেকে যেসব সফটওয়্যার আনা হচ্ছে; সেখানে মেশিন ইন্টেলিজেন্ট আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চলচ্চিত্রশিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। হলিউডে প্রযুক্তি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। হলিউডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব প্রভাব পড়েছে। তবে এআই কর্মসংস্থানে বাধা সৃষ্টি করবে না বরং সৃজনশীলতায় সহায়তা করবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি প্রায় সাড়ে আট লাখ লোকের কর্মসংস্থানের জায়গা। টেলিভিশন ও সিনেমায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ প্রসঙ্গে হলিউডের অভিনেতা ও লেখকরা ধর্মঘট ডেকেছিলেন। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে এখনো এআই নিয়ে তেমন গঠনমূূলক আলোচনা হয়নি। তবে এআই আগামীতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা বলা মুশকিল। হলিউড, প্রযুক্তি, ধর্মঘট, প্রযুক্তির ব্যবহার হলিউডের নিকট নতুন কোনো বিষয় নয়। ১৯২৭ সালে নির্মিত জার্মান ছবি ‘মেট্রোপলিস’ এ রোবট ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে আমেরিকার ‘দি ইনভিজিবল বয়’তেও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সহযোগিতা নেয়া হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় ‘ব্লেড রানার’, ‘সুপারম্যান থ্রি’, ‘দ্য টার্মিনেটর’, ‘স্টার ট্রেক ফ্র্যাঞ্চাইজি’, ‘দ্য মেট্রিক্স’, ‘আয়রন ম্যান;, ‘এক্স মেন’, ‘ইন্টারস্টেলার’, ‘অ্যাভেঞ্জারস’, ‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ‘এন্থিরন,, ‘২.০’, ‘রা. ওয়ান’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বর্তমানে বেশি চর্চা হচ্ছে। একদল বিশ্লেষক একে প্রযুক্তির স্বাভাবিক বিবর্তনের অঙ্গ হিসেবেই দেখছেন। আবার কারো কারো মতে, এআইর ফলে অনেকেই চাকরি হারাতে পারেন। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনোই শিল্পীর ক্রিয়েটিভ ভিশনের বিকল্প হতে পারে না, এ বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত পোষণ করেছেন। তা চলচ্চিত্রের ক্রিয়েটিভ এনহ্যাসমেন্টে সহযোগিতা করতে পারে। হলিউড যেখানে নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে, সেখানেই জেনারেটিভ এআই নিয়ে প্রায় ১৪৮ দিন ধর্মঘট করেছিলেন স্ক্রিপ্ট রাইটাররা। অভিনেতারাও একাধিক ইস্যু নিয়ে ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার জেনারেটেড চেহারা বা কণ্ঠশিল্পীদের বদলে অন্যভাবে ব্যবহার করা যাবে না।
পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বহু আগেই সতর্কবার্তা দিয়ে গেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের কর্মসংস্থানকেও অনিশ্চয়তায় ফেলছে। এটি আরো উন্নত হলে এবং এর ব্যবহারের ব্যাপক প্রসার হলে- বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারটি অনেক মানুষের কাজ নিয়ে নেবে। ‘আর্টিস্ট রিপ্লেসমেন্ট’ বা শিল্পী প্রতিস্থাপনের ধারণাটি এখন বহুল প্রচলিত শব্দগুচ্ছ। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, শিল্পীর সৃজনশীলতার জায়গা দখল করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো পরিচালকদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু হিউম্যান ফিল্ম মেকিংয়ের বিকল্প হতে পারবে না। এটি কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমাবে। প্রি-প্রডাকশনের কাজেও সুবিধা হবে। সাউন্ড ডিজাইনেও এ প্রযুক্তি সহযোগিতা করতে পারে। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কস্টিউম আইডিয়াও দিতে সক্ষম হবে এআই। বিশেষত পিরিয়ড চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সময়ের কথা মাথায় রেখে পোশাক পরিকল্পনা করতে হলে এআই সহযোগিতা করতে পারে। যারা প্রচুর বাজেটের ডিএফএক্স অ্যাফোর্ড করতে পারবেন না, তাদের জন্য এআই ওই কাক্সিক্ষত আউটপুটের অন্তত ৮০ শতাংশ দিতে পারবে, তাও আবার এক-তৃতীয়াংশ বাজেটে- এমনটা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভার্চুয়াল প্রোডাকশনের কদরও বাড়বে। যেমন- বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়ায় অ্যাকশন দৃশ্য শুট করা কঠিন। সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল স্টুডিওতেই তা সম্ভব হতে পারে।
বলিউডের ভিশুয়াল আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করা অনিকেত মিত্র বলেন, ক্যাসেট, সিডি আগে একটা সময়ে মানুষ টাকা দিয়ে কিনতেন। এখন সবাই অনলাইন স্ট্রিম করেন। ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল ক্যামেরায় এসেছি। অনেকেই মনে করেছিল, ডিজিটাল ক্যামেরা আসা মানেই ফটোগ্রাফির যুগ শেষ। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে শোরগোলের কিছুই নেই বলে মনে করেন তিনি। এআই নিজে থেকে কিছু করতে পারে না। তাকে নির্দেশ দেবে মানুষ। এআই আসায় কর্মসংস্থান তখনই হারাবে, যখন মানুষের বুদ্ধিমত্তায় ঘাটতি হবে। শিল্পীর ভাবনাচিন্তার পরিসর ব্যাপ্ত হলে কোনো অসুবিধা নেই। ডিজিটাল পেইন্টিং তো বড় শিল্পীদের ছবিকে রিপ্লেস করতে পারেনি। ভারতে ফিচার ফিল্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে তামিল চলচ্চিত্র ‘ওয়েপন’ এ। চলচ্চিত্রটি একাধিক ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক গুহান সেনিয়াপ্পন এ প্রসঙ্গে জানান, আমার ছবি একজন সুপারহিউম্যান চরিত্রকে নিয়ে। হলিউডে যেমন ‘এক্স মেন’ বা ‘মার্ভেল’ চলচ্চিত্রে দর্শকরা চরিত্রগুলোর অতি মানবীয় কাজ দেখেন। এই ছবিতেও সত্যরাজ স্যার এক সুপার হিউম্যানের চরিত্রে। ছবিতে একটি ফ্ল্যাশব্যাকের দৃশ্য আছে, যেখানে দেখানো হয় তিনি কীভাবে সুপার হিউম্যান হয়ে উঠলেন। ওই ট্রান্সফর্মেশনকে ধরার জন্য অ্যানিমেশন, স্কেচ প্রভৃতি ট্রাই করার পরে এআই প্রযুক্তির কথা চিন্তা করি। দৃশ্যগুলো বেশ ভালো তৈরি হয়। আমাদের ইনহাউস টিম আছে, তারাই এআই এর পুরো কাজটা করেছে। আমি গল্প ও ভাবনাগুলো ওদের বলেছি, বাকিটা ওদের তৈরি।’ চলচ্চিত্র নির্মাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হলেও এটি এখনো এ শিল্পের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি। কাজেই এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের সৃজনশীল সিদ্ধান্তগুলো শেষ পর্যন্ত মানুষের ইনপুটের ওপরই নির্ভর করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটিকে সহায়তার জন্য হাতিয়ার মাত্র। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্রশিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ বা কনটেন্ট বিতরণ এবং বাজারের প্রকৃতিতে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ক্ষেত্রে অবশ্য এটি ব্যাপক সুযোগ নিয়ে এসেছে। তাদের কাজগুলো অনেক বড় পরিসরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইউটিউব এবং ভিমিওর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থানের সঙ্গে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দর্শকের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য নতুন বিজনেস মডেল বিকাশের দিকেও ঠেলে দিয়েছে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখন গল্পের জন্য ধারণা তৈরি, স্ক্রিপ্ট বিশ্লেষণ এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ভার্চুয়াল চরিত্র এবং সেট তৈরি করতে পারেন। ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং পোস্ট প্রোডাকশনের মতো কিছু প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করে চলচ্চিত্র নির্মাতারা ব্যয়বহুল মানবশ্রম এবং সরঞ্জামের ওপর তাদের নির্ভরতা কমাতে পারেন। এতে করে নতুন নির্মাতারা চলচ্চিত্রশিল্পে প্রবেশ এবং উদ্ভাবনী বিষয়বস্তু তৈরি সহজ করে তুলেছে। এআই অনুবাদ কৌশলের সাহায্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর সুযোগটি নিতে পারেন। এটি সাংস্কৃতিক সংযোগ, বিনিময় এবং সৃজনশীলতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তবে চলচ্চিত্রে শিল্পে এআইর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কারণে বিষয়বস্তুর মান, সৃজনশীলতা এবং মৌলিকত্ব হারাতে পারে। নির্মাতাদের জন্য চলচ্চিত্রশিল্পে এআই ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং নৈতিক বিবেচনার মিথষ্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার না করলে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে অন্তর্দৃষ্টি ও আবেগের অভাব হতে পারে। তাই চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানব সৃজনশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ফিল্ম প্রোডাকশনের নির্দিষ্ট কাজগুলো স্বয়ংক্রিয় করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে হবে।
সম্প্রতি মৌলিক কিছু বিশেষ করে সৃজনশীল কিছু তৈরি করে এআই যে দক্ষতা দেখিয়েছে, তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এআই ইমেজ জেনারেটরগুলো কোনো লেখার বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে সহজেই ছবি বানিয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এআই স্পিচ জেনারেশনে এসেছে অভূতপূর্ব অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কসমোপলিটন’ ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ সাজিয়েছিল। এটি বানাতে মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় লেগেছিল। জিপিটি-থ্রি নামক ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল সাবলীলতার অনেক শীর্ষে পৌঁছে গেছে। মানুষের কাছাকাছি পর্যায়ের ক্ষমতা দেখে গুগলের কথোপকথন বিষয়ক প্রযুক্তি দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশনকে (ল্যামডা) সংবেদনশীল অর্থাৎ অনুভূতিসম্পন্ন বলেছিলেন কোম্পানিটির সফটওয়্যার প্রকৌশলী ব্লেক লেমোইন। এআই প্রযুক্তি এখন কোনো সংগীত শিল্পীর স্টাইল অনুসরণ করেও গানের সুর করতে পারে। এক শিল্পীর গান দিয়ে এআই একই ধাঁচে গানটির সুরের রচনা করতে পারবে। তামিল গীতিকার ও সংলাপ লেখক মাধান কার্কি বলেছেন, একটি বড় মাপের প্যান ইন্ডিয়া ছবির জন্য তিনি কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগিতা নিয়েছেন। ৩৮টি ভাষায় মুক্তি পাবে সূরিয়া অভিনীত চলচ্চিত্র ‘কঙ্গুভা’। চলচ্চিত্রটির কনসেপ্ট ডিজাইনের কাজে সাহায্য করছে এআই। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিখ্যাত জার্মান সুরকার এবং সংগীতশিল্পী সেবাস্টিয়ান বাখ এর গানকে ভিত্তি করে এআই এমন গান তৈরি করেছে; যা মানব বাদকদলের পক্ষে বাজানো সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন। এ ধরনের সৃজনশীল প্রযুক্তিকে বলা হয় জেনারেটিভ এআই। ‘ডিফিউশন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি কাজ করে। তবে এআই ইমেজ টুল এখনো পারফেক্ট নয়। এখনো অনেক ভুলত্রæটি রয়েছে। অনেক সময় হয়তো মানুষের হাতের ছবি তৈরিতে সমস্যা হবে কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অনুপাত সঠিক হয় না এবং অনেক সময় লেখার ক্ষেত্রেও যথার্থতা মেনে চলতে পারে না।

এআইকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে ক্রিয়েটরদের এমপাওয়ার করবে। তবে মানুষের আবেগ ও অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রে আমরাই এগিয়ে থাকব। জার্মান চিত্রশিল্পী লেয়ন ল্যোভেনট্রাউট বলেন, ‘শিল্পকলার জগতে দুটি উপাদানের মধ্যে মেলবন্ধনের সুযোগও আমার কাছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। একদিকে শিল্পকলা, অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে শিল্পকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সত্যি অভিনব। সেইসঙ্গে শিল্পের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পথে পাড়ি দেয়া, শিল্পকলাকে আরো উদ্ভাবনী করা যাচ্ছে।’ যন্ত্র মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত নতুন প্রযুক্তিগুলো নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। যন্ত্র যদিও কিছু কাজ করতে পারে, তবে সব কাজ করতে পারে না। পুরো বিষয়টাই নির্ভর করে কিন্তু সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির ওপর। ঝুঁকি মূল্যায়ন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিশ্রæতির ভারসাম্য বজায় রাখা ও মানিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়