গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

খাসী বৃত্তান্ত : শিবলী কায়সার > গল্প

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ হিয়ার বিয়ে। হিয়া এক অনিন্দ্য সুন্দরী রূপবতী তরুণী। তার জন্ম কোথায়? কাদের ঘরে? সে আজ আর জানা যায় না। সে এক অদ্ভুত সমাজে এক অদ্ভুত সময়ে বেড়ে উঠেছিল। সেই সময়ের মানুষেরা কোনোদিন ক্লিওপেট্রা, রম্ভা, উর্বশীদের দেখেনি, তারা যাদের দেখেছিল তাদের মধ্যে হিয়াই শ্রেষ্ঠ রুপসী। তার চোখ পটলচেরা, তাকালে হারিয়ে যেতে হয়। ধারালো চোয়াল পুরুষের হৃৎকম্প বাড়িয়ে তোলে, কখনো কখনো হৃৎযন্ত্র বিকলের কারণ হয়েছে। তার ঈষৎ প্রস্ফুটিত ওষ্ঠ যুগল অনেকদিন ধরেই উপযুক্ত প্রেমিকের অপেক্ষায় ক্লান্ত। তার শরীরের গঠন, যাকে বলে আদর্শ কামসূত্রের নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছিল। শুধু কি রূপ! গুণের তো তার শেষ ছিল না। সে সংগীতে পারদর্শী, নৃত্য পটিয়সী, ছলাকলা হাবভাব কোনো বিষয়েই তাকে জিপিএ ফাইভ না দেবার কোনো সুযোগ ছিল না। এরকম এক নারী সে তো সকলেরই আকাক্সিক্ষতা। কাজেই যা হবার তাই হলো, তার বিশাল ফ্যান ফলোয়ার জুটে গিয়েছিল বহু আগেই। যেখানেই সে পদার্পণ করে সেখানেই ভিড় লেগে যায়। তার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়। একটু ঢিলে দিলেই যখন-তখন ল’ অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ডিটরয়েট করে যায়।
একসময় তার বিয়ের বয়স হলো। যুব সমাজ তো লাইন দিয়ে পড়লো। সমাজের সকল মাথা মাথা পরিবারের ছেলেরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো। এছাড়াও যোগ দিল যোগ্যতম প্রার্থীগণ। কী নেই তাদের? কারো আছে টাকার পাহাড়, কারো সম্পদের। কেউবা পড়তে পড়তে জ্ঞানের ভাড়ে ন্যুজ। কেউ সারাটি জীবন সকল পরীক্ষায় কেবল প্রথম হয়ে এসেছে। কেউ খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন, কেউ গায়ক, গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় হরণ করেছে। এসেছে অভিনেতা, যেন তেন অভিনেতা নয়। দু’তিনবার অস্কার পেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে এমন অভিনেতা, এসেছে নায়ক, মহানায়ক, সুপারস্টার, ডিগবাজি নায়ক, বউ পালানো নায়ক, বউ ভাগানো নায়ক। এসেছে সাহিত্যিক, তাদের মধ্যে আছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও কবি, আছে নন্দিত কথাসাহিত্যিক, আছে ফেসবুক কথাসাহিত্যিক, আছে ব্লগার কথাসাহিত্যিক, আছে ভাইরাল কথাসাহিত্যিক, আছে বই চলে না কথাসাহিত্যিক, আছে অন্যের লেখা চুরি করা কথাসাহিত্যিক, আছে গুগল ট্রান্সলেটর কথাসাহিত্যিক। এসেছে নানা সমর নায়ক, এসেছে গোয়েন্দা, এসেছে রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু বেচারির বিয়ে হতে পারছিল না। কেন?
আমাদের এই হিয়া তার ষোড়ষীকালেই এক লম্পট ডাকাতের খপ্পরে পড়ে যায়। সেই ডাকু মনসুর, ডাকাত হলেও ছিলেন রবিনহুডের মতো, তিনি আবার হিয়াকে খুব মহব্বত করতেন। ডাকু মনসুর নানান অভিযানে ব্যস্ত থাকতেন, তাকে কত কাজ করতে হতো! কাজের চাপে তিনি দম ফেলার সময় পেতেন না। তাকে অর্থের হিসাব-নিকাশ সামলাতে হতো, তাকে অভিযানের পরিকল্পনা করতে হতো, তাকে ডাকাতির সময় নিজের ও কলিগদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হতো। যদিও তিনি দম ফেলার সময় পেতেন না, তথাপি কিছুটা সময় তিনি হিয়ার জন্য বরাদ্দ করেছিলেন, মারহাবা, মারহাবা।
তাহলে তো হয়েই গেল, সেই ডাকু মনসুর যদি হিয়াকে বিবাহ করে ফেলতেন তাহলে তো গল্পটা হতো না। তিনি তো হিয়াকে বিবাহ করতে পারছিলেন না। তার স্ত্রী ছিল, সন্তান ছিল। সমাজের চোখে তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী। স্ত্রীর প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা, তিনি তো দ্বিতীয় স্ত্রী পরিগ্রহণ করে সেই ভালোবাসাকে অপমানিত করতে পারেন না! তাছাড়া একটা ভাবমূর্তির বিষয়ও রয়েছে, সারাজীবন খাটাখাটনি করে যে ভাবমূূর্তি তিনি গড়ে তুলেছেন, তা তো তিনি তুচ্ছ কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারেন না। এদিকে হিয়ার বিয়ের বয়স হয়ে এসেছিল, তাকে তো পাত্রস্থ করতে হবে। তা না হলে যে ডাকু মনসুরের সম্মান থাকে না। হিয়াকে বিয়ে দিয়ে দিলে তার নিজের কী হবে এই চিন্তায় ডাকু মনসুর কিছুদিন খুব অস্থির হয়েছিলেন। পাত্রস্থ করা হলেই তো তার ভোগ বিলাসের রঙের দুনিয়া আগুনের পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সমস্যার সমাধান দিলেন তারই দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা পণ্ডিত পূর্ণাইয়া।
এই পণ্ডিত পূর্ণাইয়া যে সে লোক না, তিনি মহাপণ্ডিত। তিনি একাধারে মহান ডাকু মনসুরের বন্ধু প্রবর, কবিকুল শিরোমনি, সিতারা এ মূলক, হাবিবে ইমতিয়াজ, তরুণ সমাজের অহংকার, মেধাবী চিন্তাবিদ, জ্ঞানতাপস, নাট্যসঙ্গীতচিত্রচলচ্চিত্র বিশারদ, উপমহাদেশের বিজ্ঞান চর্চার অগ্রপথিক, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, বিশিষ্ট নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সময়ের সাহসী সূর্য সন্তান, শামছুল মূলক, রাজ্যভূষণ, টাইগারে দৌলা, জনাবে আলম, প্রফেসর ব্রিগ. জেন (অব.) প্রকৌশলী ড. পণ্ডিত পূর্ণাইয়া ম্যাট্রিক, ইন্টার, বিএ হন্স ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট (গোল্ড মেডেল) এমএ (ডাবল) (চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল), এমবিএ (সিজিপিএ-৪), এলএলবি (রেকর্ড মার্ক প্রাপ্ত), বার-এট-ল, এমফিল, পিএইচডি, অনারারি ডক্টর অব লিটারেচার (উগান্ডা), অনারারি ডক্টর অব সাইন্স (নামিবিয়া), অনারারি ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং (ইরিত্রিয়া) মহোদয় তাশরিফ আনছেন। হুশিয়ার। তিনিই দিলেন সমস্যার সমাধান। তিনিই তো দেবেন, তার চেয়ে জ্ঞানী আর কে আছে?
তার পরামর্শ মোতাবেক ডাকু মনসুর ফয়সালা করলেন, হিয়াকে বিবাহ দেয়া হবে। উপযুক্ত পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিতে হলো না, তার আগেই লাখো তরুণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সেই লাইন দিন কে দিন লম্বা হতে হতে সারাদেশ প্রদক্ষিণ করে গিনিজ বুকে নাম উঠিয়ে ফেললো। লাইন যতই লম্বা হোক, ডাকু মনসুরের এক কথা, এখানে কোনো কারচুপি হবে না। তিনি কমিটি গঠন করে দিলেন। কমিটিতে সবচেয়ে জ্ঞানী মেধাবী আর সৎলোকের সমাবেশ ঘটালেন। সেই কমিটি এক এক করে সকল প্রার্থীর ভাইভা নিতে শুরু করলো। ডাকু মনসুরের ন্যায় পরায়নতায় চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল।
কিন্তু সমস্যা হলো অন্যখানে। পরীক্ষায় তো কেউ পাস করতে পারছিল না। ডাকু মনসুর এমন কঠিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেখানে না ছিল কোনো নকলের ব্যবস্থা, না ছিল কোনো প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধা, না ছিল কোনো তদবিরের সুযোগ। এত কঠিন হলে তো এরকমই হবে। অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পরীক্ষার পদ্ধতিটি একটু হালকা নমনীয় করে দেবার, কিন্তু ডাকু মনসুরের এক কথা, কোনো ছাড় হবে না, পাত্রকে উপযুক্ত হতেই হবে। পরীক্ষা দিতে এসে নাকাল হলো অক্সফোর্ড পিএইচডি, সারাজীবনের সকল পরীক্ষাতেই তিনি কেবল প্রথম হয়েছেন, এবার ধরা খেলেন। টাকা-পয়সার হিসাবে আর চেহারা ছবির হিসাবে একটু মার খেয়ে গেলেন। হলিউডের এক নায়ক এসেছিলেন, তার টাকা পয়সার কমতি নেই, তবে তার আবার পিএইডি ডিগ্রি নেই। দেশি এক নায়ক লাফ দিলেন, তার টাকাও আছে পিএইচডি ডিগ্রিও আছে। তারপরও তিনি ধরা খেলেন, কারণ তার পিএইচডিটা নাকি অনলাইন পিএইচডি টাকা দিয়ে কেনা। এবার এক আসল পিএইচডি লাফ দিলেন, তিনিও ধরা খেলেন, তিনি ঋণখেলাফী। একজন সরকারি কর্মকর্তা হত্যে দিয়ে পড়লেন, তার দাবি যৌক্তিক। তিনিও জীবনে দ্বিতীয় হননি, তারও পিএইচডি আছে, টাকা-পয়সাও কম নেই, তিনি ঋণখেলাফীও নন। তারপরও তিনি পাস করতে পারলেন না, কারণ তিনি দুর্নীতিবাজ।
বিভিন্ন কারণে প্রার্থিতা বাতিল হতে লাগলো- কেউ আমাদের লোক না, কেউ অমুক জেলার লোক, কারো দাদার ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না, কেউ বনেদি না, কারো নতুন পয়সা, কারো আলুর দোষ আছে, কারো গোয়েন্দা প্রতিবেদন ভালো না, কেউ মুখের উপর সত্য কথা বলে দেয়, কারো জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে, কারো বিদেশে টাকা পাচারের ইতিহাস রয়েছে, কারো বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, কারো আশিটা গার্লফ্রেন্ড রয়েছে, কারো রয়েছে কালোবাজারির ইতিহাস, কেউ বেশি সৎ, কারো ম্যাচুরিটির সমস্যা, কেউ বেশি লম্বা, কেউ বেশি খাটো ইত্যাদি নানা কারণে প্রার্থীগণ ফেল করতে লাগলো।
তথাপি জনাপঞ্চাশেক পাত্র প্রায় পাস করে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ প্রশ্নে তারাও ফেল করে গেল। পরীক্ষা কমিটির লোকজন দফায় দফায় মিটিং করলেন, কোনো কূল-কিনারা করতে পারলেন না। অবশেষে তারা একমত হলেন যে, শেষ প্রশ্নের বিষয়টি ছাড় দেয়ার বিষয়ে ডাকু মনসুরকে অবহিত করা হবে, তা না হলে যে পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না! কিন্তু সে পর্যন্ত তাদের যেতে হলো না, তাদের জন্য মহাচমক অপেক্ষা করছিল।
সবাইকে চমকিত করে একজন পরীক্ষায় পাস করে গেল। প্রার্থীর নাম রবিউল। যে পরীক্ষায় কেউ পাস করতে পারছিল না, সে পরীক্ষায় পাস করে রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিল রবিউল। অবশ্য পরীক্ষাটাও সত্যি সত্যি কঠিনও ছিল। যে সে ছেলের কাছে তো আর হিয়াকে সোপর্দ করা যায় না, কাজেই ডাকু মনসুর কঠিন পরীক্ষার ব্যবস্থাই করেছিলেন। কী ছিল না সেই পরীক্ষায়? কাব্য, নৃত্য, বিজ্ঞান, কলা, ছলাকলা, দর্শন, সমুদ্র জ্ঞান, খনিজের ব্যবহার, পদার্থের রসায়ন, শক্তির কারগরি, ব্যবসায় শিক্ষা, অর্থশাস্ত্র, অর্থায়ন ও বিপণন, কৌলিতত্ত্ব ও প্রজনন, চিকিৎসা শাস্ত্র ও প্রকৌশল, মহাকাশ ও ধর্মতত্ত্ব, নৃ-বিজ্ঞান, নাট্যতত্ত্ব, প্রতœতত্ত্ব, খেলাধুলা ইত্যাদি জ্ঞানের সকল শাখায় প্রার্থীর পারদর্শিতা পরীক্ষণের ব্যবস্থা ডাকু মনসুর রেখেছিলেন। মুষ্ঠিমেয় কিছু প্রার্থী এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শেষ প্রশ্নের উত্তরে আটকে যাচ্ছিল। কিন্তু রবিউলকে আটকানো গেল না, শেষ প্রশ্নের উত্তরেও সে পাস করে গেল। একহাজার নম্বরের পরীক্ষায় শেষ প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯৯৫ নম্বর। কাজেই সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে সে পাস করে গেল। এই কঠিন পরীক্ষায় পাস করার ফলে সে পড়ে গেল নতুন বিড়ম্বনায়। বিয়ে করার সময় তো তার আর হয়ে উঠছিল না। হবে কীভাবে? একি আর যে সে ব্যাপার!
সাহিত্য পত্রিকাগুলো হত্যে দিয়ে পড়লো তাদের পত্রিকাগুলো সম্পাদনা করে দেবার জন্য। বছর শেষে সিনেমার পুরস্কারের জন্য জুরিবোর্ডে দেখা গেল রবিউলের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যবৃন্দ তীর্থের কাকের মতো রবিউলের বারান্দায় জ্ঞানের আশায় বসে থাকতে লাগলেন। কোনো একটা বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে, রবিউলের পরামর্শ ছাড়া তো কল্পনাতীত। কোনো একটা বৈজ্ঞানিক কর্মশালা হবে, প্রধান অতিথি রবিউল ছাড়া কে হতে পারে? কাজেই বিয়ে করার জন্য সময় তার হয়ে উঠছিল না। তাই বলে ডাকু মনসুর কি অপেক্ষা করতে পারে? হিয়াকে তো বসিয়ে বসিয়ে তিনি আইবুড়ো বানাতে পারেন না। পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে একসময় রবিউলের সময় হলো। তিনদিন আগে সে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিল।
আজ হিয়া-রবিউলের বিয়ে। একটি স্বনামধন্য কনভেনশন সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। হিয়ার সাজের জন্য বলিউড থেকে কস্টিউম ডিজাইনার আনা হয়েছে। বিয়ের শাড়িটা তৈরি করতে এগারো হাজার কারিগরের তের বছর সময় লেগেছে। প্রতিটি গয়না পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামকরা গহনা নকশাকারের ট্রেডমার্ক ক্রিয়েশন। বধূবেশে রানীর মতো বিয়ের মঞ্চে বসে আছে হিয়া। সারাদেশেই এই বিয়ে নিয়ে সাজসাজ রব। সকল অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিবর্গ এই বিয়ের নিমন্ত্রণে হাজির। যারা এই বিয়ের নিমন্ত্রণ পায়নি, সমাজে তাদের আভিজাত্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে, সমাজে মুখ দেখানোই দায়! একটি দাওয়াত কার্ড হাতে পাবার জন্য অনেকে বিস্তর লবিং-তদবির পর্যন্ত করেছেন। এই বিয়েতে কে আসেনি? ব্যাবসায়ী নেতা, চিকিৎসক নেতা, গায়ক, নায়ক, নাট্যকার, সাংবাদিক সমিতির একাংশের নেতা (নির্বাচনে কারচুপির দ্বারা ফেল করা দের সংগঠন,), আইনজীবী সমিতির একাংশের নেতা (নির্বাচনে ফেল করে স্বঘোষিত কমিটি), ভাস্কর্র্য রক্ষা কমিটির নেতা, মূর্তি ভাঙা কমিটির নেতা, মানবাধিকার কর্মী, বিদেশি রাষ্ট্রের এ দেশি দালাল, টিভি চ্যানেলের মালিক, চিন্তাবিদ, স্কলার, বুদ্ধিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, নব্য ভিসি ক্যান্ডিডেট, শিক্ষক সমিতির নেতা, শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে ফেল করাদের কমিটির নেতা, দালাল শনাক্ত কমিটির চেয়ারম্যান, দালালদের নেতা, আমাত্যদের চামচা, চামচাদের চামচা, আমাত্যদের মধ্যে যাদের টুকটাক আলুর দোষ রয়েছে তাদের সাপ্লায়ার, মডেল সাপ্লায়ার, নায়িকা সাপ্লায়ার, ফিল্ম স্টার, বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানির দালাল, বিদেশি চলচ্চিত্র ঠেকানোর নেতা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, টকশো স্টার, পরিবহন শ্রমিকদের নেতা, রক্ষিতাদের সর্দারনী, তেল গ্যাস বন্দর বেচা কমিটির কনসালট্যান্ট, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির প্রেসিডেন্ট, সুশীল সমাজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সংখ্যালঘু পরিষদের নেতা, সংখ্যালঘু কতল কমিটির নেতা, সাবেক ছাত্রনেতাদের নেতা, তল্পীবাহক সমিতির প্রধান, চাটুকার কমিটির নেতা, আন্ডারওয়্যার পরিষ্কারক সমিতির প্রেসিডেন্ট, প্রক্ষালন কক্ষের জিম্মাদার, রবিউলের স্কুল জীবনের বন্ধুবৃন্দ ইত্যাদি সমাজের সর্বস্তরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
সব আয়োজন সম্পন্ন কিন্তু বরের দেখা নেই। সকলেই বরের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ। একসময় হাতির পিঠে চড়ে বরবেশে রবিউল এলো। দীর্ঘসময় নিয়ে অনেক কলাকৌশল করে তাকে হাতির পিঠ থেকে নামানো হলো। কনভেনশন সেন্টারের গেট থেকে কনের মঞ্চ পর্যন্ত লালগালিচা বিছানো পথে রবিউল দাঁড়িয়ে আছে। আগত অতিথিবৃন্দ বরের দর্শনে কিছুটা হতাশ। বরের গায়ে রাজকীয় পোশাক, মাথায় পাগড়ি, কোমরে তলোয়ার। জনতা যেমন কল্পনা করেছিল, তেমন রাজকুমার সে তো নয়ই, সাধারণ ছাঁপোষা মার্কা চেহারা। এ কীভাবে এই কঠিন পরীক্ষা পাস করলো?
জনতার প্রশ্নটা রবিউল বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল। জনতার প্রশ্ন জনতার কাছে থাকুক, তাতে তার কি? হিয়াকে তো সেই পেয়েছে, সেই তো হিয়ার স্বামী। কোনো অর্বাচীনের প্রশ্নের মুখে তো ‘হিয়ার স্বামীর’ এই পদবী তার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সে লাল গালিচা ধরে কনের মঞ্চের দিকে হাঁটতে লাগলো। পরীক্ষার শেষ প্রশ্নের শর্ত মোতাবেক তিনদিন আগে তার ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। দু’পায়ের উরুর সংযোগস্থলে ঝুলে থাকা একটি থলি ছুরি-কাঁচি চালিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঘাঁ এখনো শুকায়নি, ব্যথাটাও আছে। সে ব্যথাটাকে পাত্তা দিল না, হাঁটতে লাগলো। যদিও তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, তথাপি তাকে তো যেতে হবে, এত কিছু পাত্তা দিলে চলে..

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়