গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

ক্রিকেট ভাষা আর অভিধান : জাফর ওয়াজেদ > খেলা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজরাজড়াদের খেলা বলে একসময় পরিচিত ক্রিকেট তার সোয়া ২০০ বছরের পথ পরিক্রমায়। কত কি যে কুড়িয়েছে, কত কি যে ঝরিয়েছে, পরম্পরায় বহন করেছে কত শত আকর্ষণ আর সৌন্দর্যের অবগাহনে প্লাবিত করেছে দর্শক চক্ষু ইন্দ্রিয়, কর্ণকুহর। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে ক্রিকেট। প্রমাণ করেছে, যে কোনো ভাষার মতো ক্রিকেটের ভাষাও নিরবচ্ছিন্ন এবং ক্রমাগত বিবর্তিত হয়ে চলেছে। আবার কখনো কখনো শব্দ নয়, জিনিসটা নিজেই লুপ্ত হয়ে গেছে। ক্রিকেটের ভাষা একসময় জটিল মনে হতো। ভাষার সঙ্গে অর্থের সাযুজ্য খোঁজা দুষ্কর হয়ে যেত। অনেক শব্দই মনে হতো কৌতূহলকারী আর খামখেয়ালিতে ভরা। গত শতকের সত্তর আশির দশকে খেলাটি যারা বুঝতেন না, সেই সব সতীর্থ বা অগ্রজদের কাছে ক্রিকেটের ভাষা বেশ বাঁধানোই হয়ে যেত রীতিমতো। সোয়া ২০০ বছর আগে যার উত্থান, সেই ক্রিকেটের একটা যে নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে, তা তার পরিভাষায় প্রকাশ পেয়ে আসছে। আর এতটা পথ পেরিয়ে আসতে আসতে ক্রিকেট প্রভৃত শব্দ তৈরি বা সংগ্রহ করে ফেলেছে, যা দিয়ে আলাদা অভিধানও তৈরি হয়েছে। অবশ্য বাংলা ভাষায় ক্রিকেট অভিধান বা পরিভাষা তৈরির কাজে কেউ এগিয়ে আসছেন এমন দৃশ্য অপরিজ্ঞাত। বাংলা অভিধান নিয়ে বাঙালির এখনো হয়রান হতে হয় যেখানে, সেখানে ক্রিকেটের অভিধান বা ক্রিকেট শব্দকোষ কিংবা ক্রিকেট জগতের ভাষা জাতীয় কোনো রচনার হদিস মেলে না।
ক্রিকেট ভাষার শব্দ খানিকটা তৈরি করেছে ক্রিকেট নিজেই। যেমন গুগলি, ইয়র্কার, বডিলাইন, নচার, লবস্টার বা ফ্লিপার কিংবা সুইং, সিম ও সেøজিং। আর বেশিরভাগটাই এসেছে সাধারণ ইংরেজি শব্দের বিশেষায়িত ব্যবহার দ্বারা। যেমন স্কোয়ার, পয়েন্ট, ওয়াইড ইত্যাদি। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য যে, ক্রিকেটের প্রতি ক্রিকেটারদের তুলনায় সাধারণ মানুষের অবদান বেশি। অথচ এমনটা মনে হয় যে, ক্রিকেটের উন্নতির জন্য নানা পথ ও পদ্ধতি খুঁজে বের করা নামিদামি খেলোয়াড়ের পক্ষেই সম্ভব। মনে হতেই পারে যারা কখনো সর্বোচ্চ স্তরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট খেলেননি তারা কী করে ক্রিকেটের ভালোমন্দ বিচার করবেন? সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগীদের অবদান বেশি এটা ক্রিকেটাররা মেনে নিতে চায় না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে তাই-ই। ক্রিকেট জগতে সবচে’ বড় বিপ্লব এনেছিলেন এক সাধারণ মহিলা ক্রিস্টিনা উইলিস- এমনটাই ক্রিকেটের ইতিহাসে পাওয়া যায়।
ইউরোপীয়দের হাত ধরে বেড়ে ওঠা ক্রিকেট তার পথ চলায় মানুষের মাতৃভাষার মতোই অনেক শব্দ বা পরিভাষাকে হারিয়ে ফেলেছে। বাংলা শব্দে ব্যবহৃত লা, রা, শে, ই, বিলুপ্ত এখন। আমরা আর লিখিনা পহেলা, দোসরা, একুশে, ষোলই। ভাষার যেমন মৃত্যু আছে, শব্দের যেমন বিলুপ্ত হওয়ার অধিকার আছে, অনুরূপ ক্রিকেট জগতের ভাষা ও শব্দের বিলুপ্তিও ঘটেছে। নতুন শব্দ এসে পুরনো শব্দকে হটিয়ে দিয়েছে। কিংবা কোনো কোনো শব্দ নিজ দায়িত্বে অবলুপ্ত হয়ে গেছে, সময়ের বিবর্তনে ভাষা-পরিভাষারা উধাও হয়েছে। আবার অচল হয়ে গেছে অনেক পরিভাষা। পরিত্যক্ত বাড়ি ঘরের মতো কোনো কোনো শব্দ তার অতীত অস্তিত্বকে জানান দেয়। ক্রিকেট জগতে ভাষা বদলায়, বদলায় তার আঙ্গিক, গড়ন, গঠন, কাঠামো, নান্দনিকতা। জগৎ-সংসারের নিত্যনতুন ভাষা পরিভাষা উপভাষার সঙ্গে বোঝাবুঝি করে ক্রিকেট জগতের ভাষা-উপভাষাও। সোয়াশ বছর আগেই অচল হয়ে গেছে নচার (ঘড়ঃপযবৎ) এবং ব্যাটস অ্যান্ড শব্দ দুটো। ‘বাম্পার’ এবং ‘স্টাম্পার’ এর মতো ডাকসাইটে শব্দ সেকেলে সেকেলে ঠেকতে ঠেকতে বিশ শতকের সত্তর দশকের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। হারাবার যা, হারিয়েছে তা। এমনও হয়েছে কেবল শব্দ নয়, পুরো জিনিসটাই বেপাত্তা হয়ে গেছে। ‘ড্র স্ট্রোক’ শব্দটা কোথায় হারিয়েছে, জানে না কেউ। উনিশ শতকের ব্যাটসম্যানদের কাছে এই মার খুবই প্রিয় ছিল। অথচ প্রায় ১০০ বছর হলো কাউকে আর মারতে দেখা যায়নি। এমনকি প্রায় শ’বছর লবস্টার বলও কেউ করেনি। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যায়, পুরনো শব্দগুলো যেমন ঝরে পড়েছে তেমনি তাদের জায়গা নিতে সব সময়ই গাজিয়ে উঠেছে নতুন শব্দ। স্টপার, চার চায়নাম্যান এবং ব্যাট প্যাড ফিল্ডার এসবই বিশ শতকের জিনিস। আবার ক্রিকেটটাও প্রাত্যহিক বহু পরিভাষা, যেমন- সুইং ও সিম, বছর ত্রিশেক আগে তাদের বিশেষায়িত অর্থ পরিগ্রহ করেছে।
ভাষাতে এই পরিবর্তন, তার মধ্য দিয়েই অনেকখানি প্রতিবিম্বিত হয় খেলাতেও কত পরিবর্তন এসে গেছে এবং এই খেলাও আবার প্রায়ই বিশ্ব চরাচরের নানা ঘটনার বিকাশ দ্বারা প্রভাবিত। যেমন ধরা যায়, ‘পোজিং’ শব্দটি। অত্যন্ত আধুনিক। এর মাধ্যমে গেমস ম্যানশিপের এমন এক সন্দেহপূর্ণ কায়দা বোঝানো হয়, অনেকেই মনে করেন যার মধ্য দিয়ে সমাজের সাধারণ অসুস্থতা বোধের লক্ষণগুলোই ফুটে উঠেছিল। আর এটাতো বাড়া যে, এই পতন সেই আমলের মানসিকতা থেকে ঘটেছে যখন প্রত্যেক লোক খেলত ‘স্ট্রেট ব্যাট’ এবং ‘ক্রিকেট নয়’ এমন কিছু ব্যাপার সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা বিন্দুমাত্রও রাজি ছিল না। তবে অনেকেই মনে করতে পারেন পরিস্থিতি ঠিক অতটা তৈরি নয় বরং ত্রিশের দশকের ক্রিকেটের রমরমার দিনের ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যায়, ক্রিকেটের এক খেলায় ইংলিশ দলকে তাদের প্রতিপক্ষ স্কটিশ খেলোয়াড়রা অভিযুক্ত করেছিল ‘বডি লাইন’ কৌশল প্রয়োগের মতো ‘অখেলোয়াড়চিত’ আচরণের জন্য।
আঁতিপাঁতি খুঁজে দেখলে দেখা যাবে যে, ক্রিকেটের শব্দভাণ্ডার জগতে হরেক রকম কিংবা বিচিত্র আর রঙিন শব্দ রয়েছে। এর ভাষার উদ্ভাবন প্রবণতা অনেক কৌতূহল জাগানো বলে মনে হবেই ভব জেলুইস নামক এক ব্রিটিশ ক্রিকেটামোদি বছর পঁচাত্তর আগে ‘ক্রিকেটের ভাষা’ নামক গ্রন্থে ক্রিকেট খেলার পরিভাষার একটি তালিকা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে তিনি এই তালিকা তৈরি করেছিলেন। আর আশির দশকের মাঝামাঝি মাইকেল রান্ডেল সংকলিত ‘ক্রিকেট অভিধান’ গ্রন্থটিকেই প্রথম ক্রিকেট অভিধান বলা যায়। তিনি শুধু ক্রিকেটের পরিভাষারই ব্যাখ্যা করেননি, শব্দগুলোর প্রয়োগ উদাহরণ দিয়েছেন এবং সেগুলোর ঐতিহাসিক, আইনগত, টেকনিক্যাল এবং বুৎপত্তিগত বাড়তি তথ্যও দিয়েছেন। রান্ডেলের পক্ষে তা ছিল পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতার নিদর্শন। রান্ডেল পরবর্তীতে অন্যান্য অভিধানের কাজ করেছেন। এর মধ্যে লংম্যানের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা অভিধানের সম্পাদনা, কলিন্স এবং রিডার্স ডাইজেস্টের বিভিন্ন রকম ইংরেজি অভিধানের কর্মসূচির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিকেটমোদীর অবশ্য পাঠ্য রান্ডেলের অভিধান। এক সময় এর বিক্রিবাট্টাও ছিল বেশ। রান্ডেল আর নেই, রয়ে গেছে তার অভিধান।
অভিধানের অনেক শখই বেশ চমকপদ, নেপথ্য ঘটনা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। যেমন ‘নচার’ শব্দটি। নচ (ঘড়ঃপয) অর্থ রান। আবার একটি পাটিতে ছুরি দিয়ে গর্ত করে কাটা দাগও বোঝায় রানের স্কোর এই পদ্ধতিতেই প্রথম দিকে রাখা হতো। ‘নচার’ (ঘড়ঃপযবৎ)-এর অর্থ স্কোরার। এই শব্দটি পাওয়া যায় চার্লস ডিকেন্সের ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত ‘পিকউইক পেপারস’ উপন্যাসের সপ্তম অধ্যায়ে। ‘উইকেটের পেছনে আম্পায়াররা দাঁড়িয়ে : স্কোরাররা রান ‘নচ’ করার জন্য তৈরি, রুদ্ধশ্বাস নৈঃশব্দ্য নেমে এলো।’ ওভার আর্ম বল করার পদ্ধতি এসেছে ক্রিকেট অনুরাগীর কাছ থেকেই। দুশো বছর আগেও বোলিং হতো আন্ডার আর্ম অর্থাৎ কোমরের নিচ থেকে। এই ধরনের বোলিংয়ে না ছিল গতি, না ছিল ব্যাটসম্যানদের আহত হওয়ার আশঙ্কা। বলা যায়, ক্রিকেট ছিল গতিহীন, নির্বিষ। উনিশ শতকের শুরুতেই ক্রিকেটে ঘটে যায় এক অভিনব বিপ্লব। ক্রিস্টিনা উইলিস নামে এক ইংরেজ মহিলা নিজের সহোদর জন উইলিসকে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করাতে গিয়ে আড্ডার আর্ম বল করতে অসমর্থ হন। কারণ তার স্কার্ট ছিল, তখনকার ফ্যাশন অনুযায়ী কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত চারদিকে বেলুনের মতো ফোলানো। কোনও উপায় না দেখে ক্রিস্টিনা শুর করলেন কোমরের উপর থেকে বোলিং করতে। কোমরের ওপর থেকে লাফিয়ে আসা বল খেলতে হিমশিম খেলেন সহোদর জন। জন উপলব্ধি করলেন এই পদ্ধতিতে বল করলে বোলিংয়ে আসবে গতি এবং প্রতিপক্ষ পড়বে অস্বস্তিতে। সেই থেকে জন উইলিস কোমরের ওপর থেকে হাত ঘুরিয়ে ওভার আর্ম বোলিং চালু করেন। ক্রিকেট হয়ে ওঠে অনেক গতিময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। রাতারাতি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এটা তো বাস্তব যে, ক্রিস্টিনার কাছে ক্রিকেটের ঋণ অপরিশোধ্য।
‘ব্যাটস অ্যান্ড’ শব্দটি ক্রিকেটের গোড়ায় অর্থাৎ সোয়া ২০০ বছর আগে চালু। তখন এর অর্থ বোঝাত যে, ব্যাটের প্রান্ত যে দিকে স্ট্রাইকারের থেকে সেই অভিমুখে কয়েক গজ দূরের স্থানটি অর্থাৎ তখন যে স্থানটিকে পয়েন্ট ফিল্ডার দাঁড়ায় ক্রিকেটের একসময় পরিচিত শব্দ ছিল ‘নেলসন’। কোনো দল বা কোনো ব্যাটসম্যান ১১১ স্কোর করলেই ব্যবহৃত হতো শব্দটি। যেন আনলাকি থার্টিন। অবশ্য সে হিসেবেই একে দেখা হয়, সংখ্যাটি অপয়া। ইংরেজদের মধ্যে একটি ধারণা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত যে, এডমিরাল নেলসনের ছিল একটি চোখ, একটা হাত এবং একটা পা, অর্থাৎ তিনি ছিলেন কানা, নুলো এবং খোঁড়া। মূলতঃ তিনি একটা চোখ একটি বাহু অবশ্যই হারিয়েছিলেন। কিন্তু দুটি পা ঠিকই ছিল।
‘হ্যারো ড্রাইভ’ মানে ভালো কথাকে মন্দে পরিণত করার উদাহরণ, প্রথমে এর অর্থ দিল একস্ট্রা কভার দিয়ে ড্রাইভ। তখন ধরে নেয়া হয়েছিল হ্যারো স্কুলের ব্যাটসম্যানদেরই এটা বিশেষত্ব। রান্ডেল উল্লেখ করেছেন, ঞযব ঐধৎৎড়ি উৎরাব ঃড়ধিৎফং বীঃৎধ-পড়াবৎ ঢ়ড়রহঃ ধিং ধঃ ড়হব ঃরসব ঢ়বপঁষরধৎ ঃড় ঃযব ংপযড়ড়ষ অথচ এর ৮৫ বছর পর ১৯৮২ সালে শিল্ডবেরি তার ‘ক্রিকেট ওয়ালা’ গ্রন্থে হ্যারো ড্রাইভ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করেছেন, তার মানে দাঁড়ায়- স্বাভাবিক ‘অফ ড্রাইভ’ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল হয় লং লেগে নয়তো শিপের মধ্য দিয়ে যদি চলে যায়। বেবি লিখেছেন- ঋষবপযবৎ যধফ ঃযব ষঁপশ ঃড় ংবব ঃড়ি ড়ভ যরং হরহব নড়ঁহফধৎরবং পড়সব ড়ভভ ঃযব রহংরফব বফমব. ঐধৎৎড়ি ফৎরাবং ড়ৎ ঈযরহবং পঁঃ, অর্থ বদলে যাওয়ার কারণ হচ্ছে হ্যারো ইটন রেষারেষি। ইটনিয়ানরাই ব্যাটের কানায় লাগা বল থেকে বাউন্ডারি হলে ব্যঙ্গ করে বলতো ‘হ্যারো ড্রাইভ’। একই অর্থ ‘চায়নিজ কাট’-এরও।
‘চায়নাম্যান’ শব্দটির ব্যঞ্জনা দেখলে দেখা যায়, ব্রিটেনে এই শব্দটিতে বোঝানো হতো ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে দেয়া বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের সেই বল, যেটা অফ থেকে লেগের দিকে ব্রেক করে যায়। এর আর একটা অর্থ হচ্ছে বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের ‘স্টক’ বল। চায়নাম্যান আবার অস্ট্রেলিয়ায় একটু অন্য অর্থে চালু ছিল। ইংল্যান্ডে যে বল ‘অফ থেকে লেগের দিকে ব্রেক করে যায়’ বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় সেটা লেগ থেকে অফের দিকে বা হয়। শব্দটির আর একটা অর্থ আছে, তা হচ্ছে, বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের গুগলি। গুগলির প্রসঙ্গ এলে কথা আরো বাড়ে, গত শতকের বিশের দশকে ইয়র্কশায়ারের রয় কিলনারই প্রথম বাঁহাতি রিস্ট স্পিনের পথ প্রদর্শকের ভূমিকা নেন এবং ত্রিশের দশকে মরিস লে ল্যান্ড ছিলেন পথিকৃতদের একজন। এই সময়েই অস্ট্রেলিয়ায় বাঁ হাতে বিরাটাকার গুগলি বোলিংয়ের ভিত স্থাপন করেন ফ্লিটউড স্মিথ। এটা আরো বিকশিত হয় জ্যাকওয়ালস ও জর্জ ট্রাইবের হাতে। কিন্তু চায়নাম্যান শব্দটি যে কোথা থেকে ক্রিকেটে এসেছিল, নিশ্চিত করে তা বলা এখনো সম্ভব হয়নি। অক্সফোর্ড অভিধানে শব্দটির উল্লেখ প্রথম হয় ১৯৩৭-এ। চীনা বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদের বাঁহাতি বোলার এলিস আচং-এর নামানুসারেই এই ধরনের বোলিংয়ের নামকরণ এটাই ধরে নেয়া হয়। ইতিহাসের খেরোখাতা খুলে দেখা যায়, ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে আচং ছয়টি টেস্ট ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পথে খেলেছিলেন। ডেভিড ফ্রিগ তার ‘দ্য সেøামেন’ গ্রন্থে লিখেছেন- আচং-এর বলে স্টাম্পড হয়ে ওয়াল্টার রবিন্স ঘুরে দাঁড়িয়ে লিয়ারি কন্সটানটাইনকে বলেছিলেন, “ঋধহপু মবঃঃরহম ড়ঁঃ ঃড় ধ নষড়ড়ফু পযরহধসধহ!” সঠিক সংলাপই বটে। এমনটাও ধারণা করা হয় যে, চায়নিজ বা চায়নাম্যান শব্দের সঙ্গে ইংরেজিতে সাবেকি যে দুর্জেয়তার গূঢ়ার্থ মাখানো আছে হয়তো, তা থেকেই এই পরিভাষা জন্মলাভ করেছে।
চায়নাম্যান পেরিয়ে গুগলিতে এলে দেখা যাবে কৌতূহলের আরো নিদর্শন। যাকে ‘গুগলি বল’ বলা হয়, তার উদ্ভাবক বোসাঙ্কোয়েট প্রথম এর কার্যকারিতার প্রমাণ দেন ১৯০০ সালে। তখন অফোর্ডের হয়ে সাসেক্সের ১৫টি উইকেট তুলে নেন। ১৯০৩-০৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি চারটি টেস্ট খেলেন। ১৯০২-০৩ এমসিসির নিউজিল্যান্ড সফরের সময় একটি মাওরি শব্দ থেকে নামটি মেলে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই বাতিল করা যায়, যেহেতু ১৮৯০-এর দশকে ‘গুগলি’ শব্দটির অস্তিত্ব অস্ট্রেলিয়ায় ছিল। খুব উঁচু করে দেয়া ‘সেøাবল’কে এই নামে অভিহিত করা হতো। ধারণা করা হয়, বোসাঙ্কোয়েট আমলের আগে এবং পরে এই বল ব্যাটসম্যানদের এমনই রহস্যের মধ্যে ফেলে দিত যে তাদের চোখ ছানাবড়া অর্থাৎ গুগল (এড়ঢ়ড়ষব) হতো। ব্যাখ্যাটি খুব উপাদেয় না হলেও এর থেকে কাছাকাছি আর কিছুর উল্লেখ নেই। রাজেন তার অভিধানে ইয়র্কার শব্দটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সোজা বল, যা স্ট্রাইকারের ব্যাটের তলা গলে গেছে, বিশেষ করে পায়ের কাছে বা পপিং ক্রিজের একটু ভেতরে যে বলের পাঁচ হয়েছে- এই হলো ইয়র্কার। কিন্তু শব্দটির আগমন বা উৎস তো অবশ্যই আছে। বোলার ইয়র্কার দেয়ার চেষ্টা করতে পারে; কিন্তু বল তখনই ইয়র্কার হবে যদি ব্যাটসম্যান টোপ খেয়ে হাফভলি বা ফুল টস ভেবে বলের লেন্থের হিসাবে গোলমাল করে। সুতরাং দুতিন গজ বেরিয়ে গিয়েও লেন্থ বিচারে ভুল করে ব্যাটের তলা দিয়ে বল গলিয়ে ফেললে তাকে ইয়র্কই বলা হবে। ধারণা করা হয়, ১৮৬০-এর মাঝামাঝি সময়ে ইয়র্কার শব্দটির প্রচলন ঘটে। আর বছর তিরিশের মধ্যেই এর উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। বিতার্কিদের কেউ কেউ বুৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, এই ধরনের ‘ডেলিভারি’ ইয়র্কশায়ারে হয়েছিল বলেই এর নাম। তবে এই ব্যাখ্যা সন্দেহ নাশ করে না। বরং আঠারো ও উনিশ শতকে চলিত আঞ্চলিক অপভাষায় ‘ইয়র্কশায়ার’ ও ‘ইয়ক’ এই দুটি শব্দের সঙ্গে ঠকানো বা জোচ্চুরির কী সম্পর্ক ছিল সেই বিষয়ে অনুসন্ধান চালালে ফলদায়ক কিছু অর্থ বেরিয়ে আসতে পারত। ইংলিশ ডায়লেট অভিধান ১৯০৫ সালের সংস্করণে ‘ইয়র্ক’ বা ‘পুট ইয়র্কশায়ার অন সামওয়ান’-এর অর্থ করা হয়েছে ঠকানো, প্রতারণা। আবার ক্যাপ্টেন জন ঘোসের ১৯১১ সালে প্রকাশিত ডিকশনারি অব দ্য ভালগার টাং এও অর্থ করা হয়েছে ঠকানো। ‘ইয়র্কার’ এবং ‘জার্কার’ এই দুটো শব্দের মিল থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে অন্যদিক থেকে দেখা গেছে, ডায়লের অভিধানটিতে ‘ণড়ৎশবৎ ণধৎশবৎ’ উচ্চারণগত পার্থক্য দেখিয়ে, দুটি শব্দ আছে। এর অর্থ করা হয়েছে- এমন কিছু বা ঝাঁকায় যা মুচড়ে উৎপাটন করো। মোদ্দাকথা, বলটা ব্যাটের তলা দিয়ে গিয়ে মাটি থেকে স্টাম্প উপড়ে ফেলে- এটাই বোঝানো হয়েছে। যে শব্দের বুৎপত্তি এক প্রজন্মেই কুয়াশাঘন হয়ে পড়ে, তার জন্ম-ইতিহাস নিশ্চিত করে বলা প্রায় অসাধ্য কাজ। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাস পর্যালোচনায় এটা বলা যায়, সফল ইয়র্কার বল চাতুর্য ছাড়া দেওয়া অসম্ভব। আর এই ব্যাপারটির সঙ্গে ইয়র্ক, ইয়র্কশায়ার শব্দদ্বয়ের অর্থের ঘোরতর মিল তো রয়েছেই। সুতরাং সহজেই উপলব্ধিযোগ্য যে ‘ইয়র্কার’ শব্দের উৎস কোথায়।
ক্রিকেটে লবস্টার শব্দটির আগমনের রয়েছে কাহিনি। এর অর্থ খুবই সহজ-সরল অর্থাৎ লব বলের বোলার। অন্য একটি অর্থ হচ্ছে, খুব উঁচু করে বল মারা। রান্ডেল তার অভিধানে লব বল বলতে কী বোঝায় তার তথ্য দিয়েছেন। অদ্ভুতই মনে হবে। লব বল হচ্ছে, খুব তুলে ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যে করা ‘সেøা’ আন্ডার আর্ম বল। হ্যাম্বলডন আমলে আন্ডার আর্ম বোলিংই হতো এবং নিশ্চয় কোনো না কোনো ধরনের লব বল তখন বোলাররা করতেন। তবে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে ‘স্পেশালিস্ট স্কিল’ হিসেবে লব বোলিংয়ের চর্চা ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়। ভালোভাবে করা লবের ‘ভ্যাবাচ্যাকা’ লাগানো ‘ফ্লাইট টাইমিং’ ঠিক করার পক্ষে উদ্ভট সমস্যা ব্যাটসম্যানের সামনে হাজির করাতে পারে। কিন্তু যদি কোনোভাবে সে ব্যাটে বলে করতেও পারে। তাহলেও কিন্তু সে বিপদমুক্ত হয়েছে বলা যাবে না। কারণ লব বোলারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এমনভাবে বলটি করা, যা থেকে শূন্যে তুলে বল না মেরে রান করার আর উপায় থাকবে না। ১৮৬৪ সালে ওভার আর্ম বোলিং আইনের দ্বারা স্বীকৃতি পাওয়ার পর আন্ডার আর্ম বোলিংয়ের প্রতি অবলুপ্তি ঘটলেও, পরে বোলিং কিন্তু আরো ৫০ বছর দিব্যি ব্যাটসম্যানদের ঘাবড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যারা এতে নাম করেছিলেন তাদের মধ্যে সাসেক্সের ওয়াল্টার হামফ্রিজ ১৮৯৩-এ ১৪৮ উইকেট সংগ্রহ করেন এবং জর্জ সিম্পসন হেওয়ার্ড ১৯০৯-১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এমসিসির পক্ষে ২৩ উইকেট দখল করেন- টেস্ট ম্যাচে ক’জন এ কথাটা জানতেন? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিরিয়াস লব বোলারদের মধ্যে শেষতম হলেন সারের ট্রেভর মলোনি। ১৯২১ সালে চারটি উইকেট পেয়েছিলেন চারটি ম্যাচে। সব বোলিং নয়, সাধারণ আন্ডার আর্ম কিন্তু প্রচণ্ড স্পিন করানো বলে আউট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে পঞ্চাশের দশকে।
ক্রিকেটে বডি লাইন সিরিজ খুবই আলোচিত বিষয়। শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বাগযুদ্ধ হয়েছে প্রচুর। শুরুতে প্রণোদিত আঘাত করার জন্যই এইভাবে বল করা। বলা হয়, এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ১৯৩২ সালে হীন উদ্দেশ্যে এই শপটি তৈরি করেছেন বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। তিন দশকের ব্রিটিশ খেলোয়াড় হ্যারও লারউড বলেছিলেন, কেবলমাত্র ‘বডি’ শব্দটি প্রয়োগ করে সেটিকে কাজে লাগানো হয়েছে মামাকে বিক্কার জানাতে। তিনি দ্রুত হয়েছিলেন বৈকি। বড়ি নাইন সিরিজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ক্রিকেটের ১০ম ব্যক্তিত্ব, যাদের উল্লেখ করা ছাড়া ক্রিকেট ইতিহাসটাই অসম্পূর্ণ। এদের একজন অস্ট্রেলীয় এবং বাকি দুজন ব্রিটিশ। তারা হলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১৯০৮-২০০১) এবং ইংরেজ অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন এবং তার সতীর্থ হ্যারল্ড লারউড। অবশ্য অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড় স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ফেনোমনন’, যে কোনো ক্ষেত্রেই তিনি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। তাই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলা হতো, ‘ডন ব্র্যাডম্যান অব পলিটিক্স।’ ডনের নামে অস্ট্রেলিয়ান এয়ারলাইন্সে বিমান রয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে ব্র্যাডম্যান বেঁচে আছেন কিনা জানতে চেয়েছিলেন। ব্র্যাডম্যান ১৯৩০ সালে ২২ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলার ফাঁকে স্বকণ্ঠে একটি গানও রেকর্ড করেছিলেন। তার অতিমানবিক ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৬-এর কথা ইতিহসের পৃষ্ঠায় জ্বলজ্বলে এখনো। ১৯৩২-৩৩ সালের ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ বা অ্যাশেজ সিরিজ ক্রিকেট ইতিহাসে বডিলাইন সিরিজ নামে পরিচিত সিডনিতে খেলা হয়। এর আগে থেকেই অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্র ইংল্যান্ডের ‘লেগথিওরি’ কৌশল সম্পর্কে মড়ব্য শুরু হয়ে যায়। ১৯৩২ সালের নভেম্বরে মেলবোর্নের একটি কাগজে অ্যাশেজ খেলা সম্পর্কে মেলা হয়, ‘ঠড়পব’ং যধষঃ ঢ়রঃপযবফ ংরহমবৎং ড়হ ঃযব নড়ফু ষরহব ঢ়ৎড়ারফবফ ধনড়ঁঃ ঃযব ঢ়ড়ড়ৎবংঃ ধঃঃবসঢ়ঃ ধঃ যিধঃ ংযড়ঁষফ নব ভবংঃ ইড়ষিরহম রঃ রং ঢ়ধংংরাব ঃড় পড়হপবরাব’ ব্র্যাডম্যানকে থামাতে একটি কৌশল ঠিক করেছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক জার্ডিন। ব্র্যাডম্যানের লেগ স্টাম্প তাক করে পেস বোলিংই হলো কৌশলের মূল লেগ স্টাম্পে চলে আসা বল খেলা যে কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই বিপজ্জনক। এই কৌশলের পাল্টা চাল হিসেবে ব্র্যাডম্যান লেগ স্টাম্প থেকে সরে গিয়ে অফসাইডে কাটশাট খেলা শুরু করেন। এরকম একটি কৌশল অবলম্বন করার জন্য তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন জার্ডিন। এমনকি দুদেশের ক্রিক্রেট বোর্ডের মধ্যে উত্তপ্ত মতামত বিনিময় চলে। জার্ডিন তথাপি নিজের লক্ষ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্র্যাডম্যানের মতো ‘রানমেশিন’কে নিয়ন্ত্রণে রাখেন জার্ডিন। যদিও এই টেস্ট সিরিজেও ব্র্যাডম্যানের গড় ছিল ৫৬.৫৭।
সিডনিতে ১৯৩২ সালের ২ ডিসেম্বর টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নামার আগেই তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সান্ধ্য পত্রিকা মেলবোর্ন হেরান্ডে তার প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে বডিলাইনের ব্যবহার দেখা যায়। সিডনি থেকে লাঞ্চের সময় তাদের প্রতিবেদক হিউবাগি প্রতিবেদন পাঠান, তাতে ‘বডিলাইন বোলিং’ শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। পরিভাষাটির প্রয়োগ প্রথম ঘটালো। বাগি তার পাঠানো প্রতিবেদনে ‘ইড়ষিরহম ড়হ ঃযব ষরহব ড়ভ ঃযব নড়ফু’ এই কথাগুলো টেলিগ্রাফিক শর্টহ্যান্ডে আনার সুবিধার্থে তিনি শব্দটিকে সংক্ষিপ্ত করাতে গিয়ে সংক্ষেপে ‘বডিলাইন’ করেছিলেন। পত্রিকার সাব এডিটর শব্দটিকে আর পরিবর্তন করেননি। এই শব্দ স্থাপনের পর বডিলাইন ক্রিকেট জগতে নতুন মাত্রা দিয়েছিল বৈকি।
বাংলা ভাষায় ক্রিকেটের কোনো অভিধান নেই। যার ফলে বাংলায় ব্যবহৃত ছক্কা শব্দটি অভিযানে ঠাঁই পায়নি। বাঙালি ঘরানার ক্রিকেট ইতিহাসে যা-ই থাকুক, ক্রিকেটের ভাষা অনুধাবন বাঙালির জন্য কষ্টসাধ্য নয় অবশ্য। বাংলা ভাষায় ক্রিকেটের অভিধান বা পরিভাষা অনায়াসে মিলবে এমন ভাবনা জেগে থাকে বিশ্বকাপ আসরের মুহূর্তে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়