গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

আতর টুপি জায়নামাজ তসবিহ কেনার ধুম

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : আজ চাঁদ উঠলে কালই খুশির ঈদ। আর চাঁদ না দেখা গেলে আরো একদিন সময় পাওয়া যাবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সকালে ছেলেদের পাঞ্জাবি-পায়জামার সঙ্গে ম্যাচিং করে সুন্দর টুপি চাই-ই চাই। ঈদ জামাতে যোগ দিতে একটা তুলতুলে মখমলের জায়নামাজ আর আতরের সুবাস হলেই ব্যাস, পবিত্রতা ষোলোআনা যেন পূরণ হয়ে যায় এখানেই। তাই তো শেষ সময়ের কেনাকাটায় আতর, টুপি, জায়নামাজের দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়। কেনাবেচার এই রমরমা ভাব চলবে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, পল্টন, মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ, চকবাজার, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের গেটসংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলো বেশ জমে উঠেছে। ধনী-গরিব সবার জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দামের পণ্য। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদের সামনেও টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ ও আতর বিক্রি হচ্ছে।
টুপি : যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাদের কাছে টুপির বড় সংগ্রহ এমনিতেই থাকে। তবুও ঈদে নতুন টুপি লাগেই। উল, জরি আর সুতি কাপড়ের তৈরি বিচিত্র নকশার টুপি দোকানগুলোতে এখন সবচেয়ে বেশি ভিড়। এবার দেশি টুপির চেয়ে বিদেশি টুপিই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আফগানি, চীনা, ভারতীয় ও দুবাইয়ের টুপির বিক্রিও বেশ ভালো। কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়া, তুরস্কের টুপির প্রতি চাহিদা বাড়ছে ক্রেতাদের। বেশির ভাগ মানুষ সাদা টুপি পছন্দ করলেও তরুণরা পাঞ্জাবির সঙ্গে ম্যাচ করে কিনছেন বাহারি ডিজাইনের রঙিন টুপি। দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি দুই ধরনের একটু দামি টুপিতে রয়েছে বাহারি সব নকশা। অনেকে এসব টুপি একাধিকও কিনছেন। কাপড়ের মান ও বাহারি নকশার ওপর ভিত্তি করে টুপির দামেও রয়েছে ভিন্নতা।
৩শ-৬শ টাকায় পাকিস্তানি টুপি, ২শ-৪শ টাকায় ভারতীয় টুপি, ২শ -৩শ টাকায় চীনা টুপি এবং সোনালি সুতা বা ছোট পুঁতি দিয়ে কাজ করা প্রতিটি দেশি টুপি বিক্রি হচ্ছে ২শ-৪শ টাকায়। এছাড়া পাঁচকুল্লি, জালি টুপি ও হাতে তৈরি কিংবা কুশিকাটার টুপির চাহিদাও রয়েছে। এসব বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়। গুজরাটি টুপি রয়েছে ২৫০ থেকে ৩শ টাকার মধ্যে। জর্ডানি টুপি ১৫০ টাকা, নেপালি টুপি ২৫০ টাকা এবং সৌদি আরবের টুপি ৪শ থেকে ৭শ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
মতিঝিলের অফিসপাড়াতে বসেছে জায়নামাজ আর টুপির বেশ কিছু দোকান। অফিস শেষ করে নিয়াজ সাহেব ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন সেসব। তার বাবা এবং চাচার জন্য নিলেন দুটি জায়নামাজ। দামও বেশ কম। খুব বেশি কারুকাজ নেই। তার বাবা মুজিবুর রহমান এমন হাল্কা পাতলা ডিজাইনই পছন্দ করেন।
বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের সামনের টুপি দোকানদার নুরুন নবী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, গত বছরের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি একটু বেশি। আমার দোকানে ৫০ টাকা থেকে ৫শ টাকা দামের টুপি আছে। মাঝারি দামের টুপিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জায়নামাজ : দেশি জায়নামাজ ছাড়াও এবার তুরস্ক, পাকিস্তান, ভারত বা বেলজিয়ামে তৈরি জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। জায়নামাজের বুনন, কোমলতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। দেশি জায়নামাজ ৩শ থেকে ২ হাজার টাকা, তুরস্কের জায়নামাজ ৫শ থেকে ৪ হাজার টাকা, পাকিস্তানি জায়নামাজ ৬শ থেকে ৭ হাজার টাকা, বেলজিয়ামের জায়নামাজ ৮শ থেকে ১২ হাজার টাকায়, ভারতের জায়নামাজ ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বায়তুল মোকাররমের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, মখমলের কাপড় ও ভেতরে ফোমের আরামদায়ক জায়নামাজ বেশি চলছে। এগুলো মূলত চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তা পাওয়া যাচ্ছে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া তুর্কি মখমলের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে ৪শ থেকে ৮শ টাকার মধ্যে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে ৮শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। দেশি কাপড়ের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে কম দামে।
পীর ইয়ামেনি মার্কেটে জায়নামাজ কিনতে আসা সোহেল রানা বলেন, আগামীকাল দেশের বাড়িতে চলে যাব। তাই টুপি ও জায়নামাজ কিনতে এসেছি। একটি জায়নামাজ ৯শ টাকা দিয়ে কিনেছি। তবে এখন একটু দাম বেশি মনে হচ্ছে। দামাদামি করে কিনলে আরো কমেও পাওয়া যায়। সময় কম, তাই বেশি দামাদামি করিনি, কিনে নিয়েছি।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম থেকে রিফাত আতর ও টুপি কেনার পর ভোরের কাগজকে বলেন, চাকরি পাওয়ার পর এবারই প্রথম বেতন পেয়েছি। আমার বেতনের টাকায় আমার বৃদ্ধ দাদার জন্য জায়নামাজ, টুপি ও আতর কিনেছি। দাদির জন্য শাড়ি কেনা হয়েছে। জায়নামাজ কিনেছি। তারা খুশি হবেন। গত বছরও আমি এসব কিনেছি। এবার গড়ে ৫০ থেকে ১শ টাকা দাম বেশি নিয়েছে।
আতর : আতর ব্যবহার করা সুন্নত। ঈদের দিন আতর মাখার মধ্য দিয়ে অনেকে সুন্নত আদায় করেন। অন্যদিকে মন মাতানো সুরভিতে ঈদের দিন ভালো লাগে। আতরের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় ধনী-গরিব সবাই কিনতে পারেন। তাই সব কেনাকাটার শেষে ভিড় বাড়ে আতরের দোকানে। সাধারণ ক্রেতারা দামি আতরের তুলনায় দামে কম এমন আতর কিনছেন। দেশের বাজারের বেশির ভাগ আতরই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা। আম্বার, হুগো বস, গুচি, রামান্স, সিলভার, মশক আম্বার, জান্নাতুল ফেরদৌস ইত্যাদি। দেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে উদ বা আগর নামের আতর। বাজারে থাকা শতাধিক রকমের আতরের ছোট বোতলের দাম ১শ থেকে শুরু করে ৫শ টাকার মধ্যে। এছাড়া বিত্তবানদের জন্য রয়েছে ২ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার আতরও।
ঢাকার বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের আল মাসক দোকানের ইনচার্জ মো. আবু মাহসীন বলেন, ঈদ যত কাছে আসছে, আমাদের বেচাকেনা বাড়ছে। নানা ধরনের আতরের মধ্যে বড়রা একটু কড়া গন্ধের নিলেও তরুণরা নিচ্ছেন হালকা সুবাসের আতর। গুচি, সিলভার, মশক আম্বার আতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ক্রেতা ফাহিম রহমান দোকান ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন আতরের নমুনা শুঁকে দেখছিলেন। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা শেষ। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে এখানে এলাম। দোকানি আতরের অনেক নাম বলছেন। আমরা তো আর অত প্রকারভেদ বুঝি না। তাই প্রত্যেকটার ঘ্রাণ শুঁকে দেখছি। পছন্দ হলে দরদাম করব।
তসবি : ঈদের নামাজের পর খুতবা শুনতে শুনতে বা নামাজের আগে অপেক্ষায় বসে তসবিহর অভাব অনুভূত হতে পারে, তাই বাহারি পুঁতি আর পাথরের সব তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। কাঠ, পাথর ও ক্রিস্টালের তৈরি তসবিহও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও চন্দন কাঠ, প্লাস্টিক, জয়তুন কাঠ, হাতির হাড়, দাঁত, হরিণের শিং দিয়ে বানানো তসবিহও পাবেন। ম্যাটেরিয়ালের কোয়ালিটি বুঝে একেকটি তসবিহর দাম পড়বে ২শ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বায়তুল মোকাররমে ৭ বছরের ছেলে অরিককে নিয়ে আতর তসবিহ কিনতে আসা মোকতার হোসেন বলেন, নামাজ পড়ার সামগ্রী কিনতে এসেছি। এগুলো দেখেশুনে না কিনলে মন খচখচ করে।
আগর কাঠ : অনেকে ঘরের প্রবেশমুখে বা ভেতরে আগরের সুবাস চান। তারা চাইলে আগরবাতি কিনে জ¦ালাতে পারেন। বাড়িতে কোনো বয়স্ক মানুষ থাকলে তার ঘরেও জ¦ালাতে পারেন। তবে আগরবাতির চেয়ে একটু আভিজাত্য আনতে কোনো সুন্দর দানিতে অনেকে রাখেন আগর কাঠ। এই কাঠের সুবাসে পুরো ঘর ভরে ওঠে। বাক্স হিসেবে এই কাঠের দাম পড়ছে ৪শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়া খোলা আগর কাঠের দাম প্রতি গ্রাম ১শ থেকে ২শ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়