মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

হাওরে কৃষকের আতঙ্ক বজ্র ও শিলাবৃষ্টি : ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : হাওরবাসীর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল। কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন, স্বাদ, আহ্লাদ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বিয়ে-শাদি সবকিছুই নির্ভর করে এ বোরো ধানের উপর। সবেমাত্র সুনামগঞ্জের সব উপজেলায় বোরোধান পাকতে শুরু করেছে। এ মুহূর্তে হাওরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। সারাদিন রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় আবহাওয়ার বৈরী আচরণ। প্রথমে শুরু হয় হালকা বাতাস এরপর বজ্রপাত ও শিলাসহ বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি কখনো থেমে থেমে চলে কয়েক ঘণ্টা। আবার কখনো মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত। এতে হাওরবাসী তাদের সারা বছরের কষ্টার্জিত সোনালি ফসল গোলায় তোলা নিয়ে রয়েছেন অনেকটা দুশ্চিন্তায়।
তাহিরপুরের সবচেয়ে বড় শনির হাওরের কৃষক বুরহান উদ্দিন বলেন, সারাদিন ভালোই কাটে। সন্ধ্যার পর যখন ঝড়, বাতাস, বজ্রপাত সেইসঙ্গে শীলাবৃষ্টি শুরু হয়, তখন খুব আতঙ্কে থাকি। যদি ভারি বৃষ্টি হয় তাহলে অকাল বন্যায় হাওরের ফসলহানি ঘটে।
জামালগঞ্জের কৃষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাত এলেই দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারি না। আতঙ্কে থাকি ঝড়বৃষ্টিতে ফসলহানির।
এদিকে আবার দেখা দিয়েছে সরকার কর্তৃক ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের মাঝে দেয়া ধানকাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শাল্লা উপজেলার চার ইউনিয়নে ৪৯টি হারভেস্টার মেশিনের মধ্যে ১৪টিই বিকল। অন্যান্য উপজেলায়ও খোঁজ নিয়ে একই সংকটের কথা জানা গেছে।
শাল্লা উপজেলার এক কৃষক বলেন, সত্তর শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কেনা মেশিন দুই বছর ব্যবহার করার পর নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এটা মেরামত করতে যে খরচ লাগে তা পোষাবার নয়। এজন্য ভাঙারির কাছে বিক্রয় করে দিয়েছি। এ বছর ২০ হাল (৮০ একর) জমি চাষাবাদ করেছি। আরেকবার মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার) কেনার জন্য আবেদন করেছি। পাওয়া গেলে সুবিধা হয়। না হয় ভাড়ায় মেশিন আনতে হবে নিজের ধান কাটার জন্য। দুশ্চিন্তায় আছি কীভাবে কী করব।
তাহিরপুর উপজেলার এক কৃষক বলেন, ভর্তুকি দামে দুই বছর আগে হারভেস্টার মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার) ক্রয় করেছিলাম। প্রতি বছরই নষ্ট হয় দেখে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছি।
শাল্লা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক মোশাহিদ আহমদ, একই গ্রামের আরেক কৃষক সাদি রহমান ও নিজগাঁওয়ের জুনায়েল আহমদ এমন দুশ্চিন্তার কথা বলছিলেন। এদের তিনজনেরই কম্বাইন হারভেস্টার বিকল হয়ে গেছে।
কেবল একজন কৃষকই নয়, জেলার সব কয়টি হাওরপাড়ের কৃষকদের মধ্যে এই দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এবার ধানে শিষ হঠাৎ করে একসঙ্গে বের হওয়া শুরু হয়েছে। এজন্য ধান কাটার ব্যবস্থাও থাকতে হবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি।
শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বড় কৃষক ছত্তার মিয়া জানিয়েছেন, ১৫ এপ্রিলের পর এ বছর একসঙ্গে পুরো হাওরে ধান কাটতে হবে। ধানের গোছায় ধান এসেছে সমানে। অন্যান্য বছর এভাবে একসঙ্গে ধান বেরোয় না। এবার সবাই এ নিয়ে চিন্তিত। দ্রুত কিছু ছোট এবং কয়েকটা বড় ধান কাটার মেশিনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শাল্লা উপজেলার ধান কাটার মেশিন অর্ধেকেই নষ্ট। যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো দিয়ে বড় হাওরগুলোতে ধান কাটা শেষ করা যাবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রায় চার লাখ কৃষক এবার দুই লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। এসব জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টন ধানের উৎপাদন হবে। টাকার অঙ্কে এই ধানের মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, জেলায় ধান কাটার জন্য ৮৭৩টি হারভেস্টার মেশিন আছে।
এর মধ্যে ৩৭টি বিকল। গতকাল ধান কাটা শুরু হয়। এর মধ্যে আরও দুই থেকে আড়াইশ ধান কাটার মেশিন জেলায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়