মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার ধুম

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : শাওয়ালের চাঁদ উঁকি দিল বলে। দুদিন পরেই ঘরে ঘরে শুরু হবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব। তাইতো শেষ বেলায় ঈদের নতুন কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে ডিজাইন মিলছে তো রং মিলছে না; সবশেষ আবার পছন্দসই পোশাক কিংবা জুতার সাইজ মিলছে না। ঈদ কেনাকাটায় শেষ সময়ের যুদ্ধ এখন সাইজ মেলানো।
গতকাল রবিবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, মিরপুর-১০, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ারসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে বিপণিবিতানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রতা উভয়ের মধ্যে শেষ সময়ের তোড়জোড়। ক্রেতা টানতে স্টক সেল ক্লিলিয়ারেন্সে বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন দোকানিরা। ক্রেতারা মার্কেটে ঢুকছেন আর হাতভর্তি ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন। মূলত ঈদের কেনাকাটা চলে চাঁদরাত পর্যন্ত। এবার গরমকে প্রাধান্য দিয়ে সুতি পোশাক কেনার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন ক্রেতারা। দেশি ব্র্যান্ডগুলো থেকে পাঞ্জাবি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। শাড়ির ক্ষেত্রে তা গিয়ে পৌঁছেছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও। তবে বেশি চলছে সুতি, কটনের ওয়ান-পিস ও থ্রি-পিস। জুতার ক্ষেত্রেও পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আরামদায়ক স্লিপার।
ক্রেতারা বলছেন, পছন্দসই জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিস কিনতে শেষ সময়ে মার্কেটে ছুটে আসা। ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি চলে যাওয়ায় এখন স্বস্তিতে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। পোশাকের পাশাপাশি গহনা, কসমেটিক্স, আতর, টুপি, জুতা এবং ঘর সাজানোর সামগ্রী কিনছেন। এদিকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত

মার্কেটগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কেনাবেচা ভালো হওয়ায় উচ্ছ¡সিত ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার শুরুর দিকে খুব একটা ক্রেতা ছিল না। বেচাবিক্রি বেড়েছে ২০ রোজার পরে। তবে গত ৫ দিন ক্রেতাদের সামাল দিতেই হিমশিম অবস্থা।
রবিবার যমুনা ফিউচার পার্কে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, সেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম। সকাল থেকেই সারি সারি গাড়ি শপিং মল চত্বরে প্রবেশ করতে শুরু করে। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে বেশ আঁটঘাঁট বেঁধেই এই শপিং মলে আসছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই ইফতারি ও রাতের খাবার সারেন যমুনা ফিউচার পার্কের ফুড কোর্টে।
যমুনা ফিউচার পার্কের আড়ং, বিশ্ব রঙ, ইয়োলো, রঙ বাংলাদেশ, লারিভ, নবরূপা, মেট্রো, ইনফিনিটি, ক্যাটস আই, জেন্টেল পার্কের মতো ব্র্যান্ড শপগুলো ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় পোশাকের পাশাপাশি প্রাধান্য পাচ্ছে জুতা, কসমেটিকস, পারফিউম ইত্যাদি। এখানে এক ছাদের নিচে সব বয়সি মানুষের পোশাক, অলংকার, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, কসমেটিকস, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তির নানা সামগ্রী সবই পাওয়া যাচ্ছে।
অফিসের ব্যস্ততার কারণে রোজার শুরুতে ঈদের পোশাক কেনার সময় হয়নি, তাই ঈদের আগ মুহূর্তে বোনকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে আসেন সিনথিয়া নামে এক নারী। কি ধরনের ড্রেস কিনবেন? জানতে চাইলে সিনথিয়া বলেন, এবার ঈদে প্রচণ্ড গরম থাকবে। তাই ঈদে সুতির কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দেবেন। তবে বোনের জন্য একটা পাকিস্তানি ড্রেস কিনবেন।
মগবাজার আড়ংয়ে পাঞ্জাবি কিনতে আসা রেজোয়ান বলেন, রাতেই (রবিবার) বাড়ি ফিরব। তাই বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করলাম। অফিসের কাজের চাপে এতদিন সময় করে উঠতে পারিনি।
অপরদিকে রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া ও ধানমন্ডি হকার্স, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, সানরাইজ প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, এআর প্লাজা, রাইফেলস স্কোয়ার, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, টুইন টাওয়ার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, গুলশান এলাকার অভিজাত ফ্যাশন হাউস, শপিং মল ও বুটিক হাউস, পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার ও ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। রবিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওইসব মার্কেটে যেন ক্রেতার হাট বসেছিল। ক্রেতাদের চাপে মার্কেটগুলোর চারপাশের রাস্তায় সারাদিনই বিশাল যানজট লেগেছিল।
মালা, নেকলেছ, কানের দুল ও আংটিসহ সিটি গোল্ড কিনতে রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রকারভেদে ১শ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব গহনা। এখানে স্বর্ণালংকার ও হীরার গহনার দোকানেও ভিড় ছিল।
মৌচাক মার্কেটে কথা হয় থ্রি-পিস বিক্রেতা মো. রফিকের সঙ্গে। তবে কিছুটা হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, বিক্রি সব মিলে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বেশ কিছু প্রোডাক্ট বেচা হয়নি। খরচের টাকা তুলতে এখন ছাড় দিয়ে বিক্রি করছি। এতে কিছু ক্রেতা আসছে। আশা করি, চাঁদ রাত পর্যন্ত ক্রেতা থাকবে। তারপরও সব খরচ হিসাব করলে এবার লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
নিউমার্কেটের একটি ক্রোকারিজের দোকানে বেশ ব্যস্ত অবস্থায় দেখা গেল ধানমন্ডির বাসিন্দা আশরাফ ও তার স্ত্রীকে। দুজনেই চাকরি করেন, তাই পুরো রোজার মাস কেটেছে ব্যস্ততায়। শেষ সময়ে এসেছেন ঘরের জিনিস কিনতে। আশরাফ বলেন, ঈদের দিন ছেলের বন্ধুরাসহ অন্য মেহমান আসবে। তাই কিছু ক্রোকারিজ আইটেম ও রান্নাঘরের টুকিটাকি জিনিস কিনতে এসেছি।
এই মার্কেট ছাড়াও নিউমার্কেটের মূল সড়কের দু’ধারে এবং মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোর সামনে টুকিটাকি জিনিসপত্রের প্রচুর দোকান রয়েছে। এগুলোতে বেচাবিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। এমনকি ফুট ওভারব্রিজের উপরেও ব্যাগ, পাখা, পাপোশ, ক্লিপ ও লিপস্টিকের দোকান বসেছে। আরো আছে বেডশিট ও পর্দার দোকান। এছাড়া চশমা, বেল্ট ও ব্যাগের দোকানে কিছু ক্রেতার দেখা মিলল।
মিরপুর-১১ নম্বর মার্কেটে বিছানার চাদর কিনতে এসেছিলেন বীথি-সাথী নামে দুই বোন। তারা বলেন, ঈদের দিন ঘরটা সাজানো না থাকলে ভালো লাগে না। তাই নতুন বিছানার চাদর কিনতে এসেছি। হোমটেক্সের শোরুম থেকে চার সেট চাদর কিনেছি।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে ফুটপাতে চলছে শেষ মুহূর্তের জমজমাট কেনাকাটা। পোশাক শ্রমিকসহ নি¤œ আয়ের অনেকেই এখান থেকে শার্ট-প্যান্ট কিনছিলেন। তাদেরই একজন কারাখানা শ্রমিক রুবেল বলেন, ‘সোমবার (আজ) সকালে বাড়ি যামু। বেতন পাইতে দেরি হইছে। তাই এতদিনে কিছু কিনতে পারি নাই। আইজাই সব কিনমু’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়