মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

মন যখন ঘুরে বেড়ায়

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আকাশ মানেই বিশ্বভরা প্রাণ। সীমার মাঝে অসীম। আকাশের দিকে তাকাতে কার ভালো না লাগে? খোলা আকাশটা কেমন করে যেন সবার মন ভালো করে দেয়। অর্থাৎ যখনই মন খারাপ হয় নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভালো হয়ে যায়। সুনীল আকাশ প্রশান্তি এনে দেয় মনে। তাইতো বিজ্ঞান বলেছে, আকাশের রং মানব মনের ওপর এক ধরনের প্রভাব ফেলে। এমনকি শরীরের ওপরও প্রভাব পড়ে। তবে আকাশের রঙের কিন্তু কোনো স্থায়িত্ব নেই। কখনো নীল, কখনো কালো, কখনো সাদা, কখনো আবার ধূসর। আকাশের রং যেমন বদলায় মানুষের মনও তেমনি বদলায়। তাইতো কথায় আছে, মানুষের মন আর আকাশের রং। আকাশের রঙের যেমন কোনো স্থায়িত্ব নেই তেমনি মানুষের মনেরও কোনো স্থায়িত্ব নেই, ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।
এই মনে কখন যে কি উদয় হয় তা কেউ বলতে পারে না। মন খুবই সংবেদনশীল অদৃশ্য একটি বস্তু, যখন যা বলবে মানুষ তাই করবে। রক্ত মাংসের বিশাল দেহের মানুষটি নিয়ন্ত্রিত হয় অদৃশ্য সেই মনের দ্বারা। মন বলছে তো গোটা দেহ সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। বড়ই বিচিত্র এই মন। কখন যে কী ভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে তাও বলা যায় না। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই। আর সেটার ঘাটতি হলেই মন খারাপ হয়ে যায়। বিশেষ করে সাংসারিক টানাপড়েন মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। আর সেই চাপ মোকাবিলা করতে না পারলেই মন খারাপ হয়ে যায়। মনের দোলাচল তখন বেড়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, এই চলার পথে মানুষ কতই না হোঁচট খায়। তারপর আবার গা ঝাড়া দিয়ে সে উঠেও দাঁড়ায়।
মাঝে মাঝে জীবনটাকে বড্ড একঘেয়ে লাগে। মনে হয় কিছুই যেন করার নেই। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে পার হয়ে যায় অনেকটা সময়। প্রতিদিন একই রুটিন, গতানুগতিক জীবন। কিছুই ভালো লাগে না। যেদিন হাতে সময় থাকে কম্পিউটার বা মুঠোফোন হাতড়ালেই চলে আসে পুরনো দিনের ছবি। যেন স্মৃতির ভাণ্ডার। তখন মনে হয় আগের দিনগুলোই ভালো ছিল, কতই না রোমাঞ্চকর ছিল। মানুষ মাত্রই স্মৃতিকাতর। এই ছোট্ট জীবনে কত স্মৃতিই না জমে থাকে! এসব স্মৃতির রেশ কেটে গেলেই আবার হতাশা নামে। হতাশা খুব খারাপ একটি জিনিস যাকে আমরা আপডেট ভার্সনে বলি ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন এমনই একটি ভয়ংকর অসুখ, যা মানুষকে জ্বালাবে পোড়াবে কিন্তু মারবে না। তাইতো ডিপ্রেশনকে কোনোভাবেই কাছে ঘেঁষতে দেয়া যাবে না। আর এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন ও পর্যাপ্ত ঘুম।
অনুভূতি হলো মানুষের উপলব্ধি করার ক্ষমতা, যা ভোঁতা হওয়ার আগেই নিতে হবে পদক্ষেপ। বেরিয়ে আসতে হবে ছকেবাঁধা জীবন থেকে। ভালো লাগে এমন কাজ নিশ্চয় আমাদের জানা আছে। কোন কাজটা করলে মন ভালো হয়। সেই কাজটিই খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য মনের ইচ্ছের ওপর জোর দিতে হবে। মন কী চায় তা শুনতে হবে। জীবনের ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনলেই একঘেয়েমি কেটে যাবে। তখন নিজেই নিজের কাজে রোমাঞ্চিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাইতো বিশ্বের তাবৎ বড় বড় মনোরোগবিদের একটাই কথা- ‘মন তোমারই। মনকে নিয়ন্ত্রণ করো। মনকে সাজাও। মনকে রাঙাও। মনকে কখনোই ভেঙে পড়তে দিয়ো না।’ আর এর জন্য মনের উদ্যমই হলো প্রধান ভরসা।
সেইতো মনের মানুষ যে মনের সব কথা বুঝে। মনের সব জায়গাজুড়ে যে অবস্থান করে। যার অবহেলাতে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। যে দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়- সেইতো মনের মানুষ। প্রায় সবাই জীবনভর মনের মানুষ খোঁজে। তবে মনে না ধরলে মানুষ চাইলেও কাউকে ভালোবাসতে পারে না। একবার কারো সম্পর্কে মনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হলে তাকে আর ভালো লাগে না। অদ্ভুত এই মন। সে যা চায় তা পায় না আর যা পায় তা চায় না। তাইতো অবিরাম ছুটে চলা।
আবার এই মনের সঙ্গে হাসির রয়েছে একটি নিবিড় সম্পর্ক। হাসিতে যেন লুকিয়ে থাকে মনের যত কথা। অর্থাৎ প্রেম, ভালোবাসা, হিংসা থেকে শুরু করে অজানা সব কথা লুকিয়ে থাকে হাসির মধ্যে। হাসির ধরনই বলে দেবে তার মনের প্রকৃত ভাব। তবে হাসি যেমনই হোক না কেন, মন ভালো রাখার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতে হাসির কোনো জুড়ি নেই। হাসলে মুখ, বুক, পিঠ ও পেটের পেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মনকে প্রফুল্ল ও সতেজ রাখে, ফলে হৃদ রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া দুশ্চিন্তা ও একাকিত্ব কমিয়ে শরীরকে এনে দেয় প্রশান্তি। কাজেই হাসি শুধু মানুষের চোখ জুড়ায় না, মানুষের মনও জুড়ায়।
এ কথা সত্যি যে, কারো মন কারোর মতো নয়। প্রত্যেকের নিজস্ব জগৎ আছে। নিজস্ব স্বপ্ন আছে। অর্থাৎ সত্তা আলাদা, চিন্তা-ভাবনাও আলাদা। কিন্তু আমরা প্রায় সময়ই তা মানতে চাই না। যেমন- ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাবা-মা হিসেবে আমাদের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেই। মনে করি ওরা আমাদের ইচ্ছের মতো হবে। কিন্তু ওরা কোনোভাবেই আমাদের মতো হবে না। যেমন- আমরা আমাদের বাবা-মার মতো হইনি। আমরা আমাদের মতো হয়েছি।
স্বামী মনে করেন স্ত্রী তার মনের মতো হবে এবং তার কথামতো চলবে। আবার স্ত্রীও মনে করেন স্বামী তার কথা শুনবে, তাকে গুরুত্ব দেবে। তার নিজস্ব কোনো জগৎ থাকার দরকার নেই। সংসার ধর্মই তার বড় ধর্ম, তার একমাত্র জগৎ। স্বামী কি তা মেনে নেয়? এই যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্ত›র্দ্ব›দ্ব ও মতানৈক্য, যা আমরা চলার পথে বেমালুম ভুলে গিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। এর ফলে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। একই ছাদের নিচে থেকেও আলাদা। নিজ গৃহে পরবাসী। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। একটি সুসজ্জিত গৃহেও লুকানো থাকে অনেক ব্যথা, অনেক সুপ্ত কান্না। আর এ জন্যই কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার উপলব্ধি থেকে বলেছেন- ‘বাস্তবতা বড়ই কঠিন! কখনো কখনো এতটাই কঠিন যে বুকের ভেতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে।’

ড. ইউসুফ খান : কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়