মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

মঙ্গল শোভাযাত্রায় পুলিশ বেষ্টনী চান না সাংস্কৃতিক কর্মীরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পহেলা বৈশাখ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার নামে পুলিশি বেষ্টনী চান না বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। এমনকি সরকার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তাও মানবেন না তারা। শোভাযাত্রা যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেষ্টন করে না রাখে তার আহ্বান জানান তারা। বরং মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নববর্ষ উদযাপনের পরিধি আরো বাড়নো হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। বর্ণাঢ্য বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিককর্মীসহ জনসাধারণের ব্যাপক অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটির আয়োজকরা। এবারো শোভাযাত্রায় দেশীয় লোকজ উপকরণের মোটিফ থাকছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য- ‘আমরা তো তিমিরবিনিশী।’ যত অন্ধকার সরিয়ে আলো ছড়িয়ে দিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রসার ঘটাতে হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্থানীয় পুতুলসহ লোকজ সবচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। আয়োজকরা জানান, চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রং-বেরঙের তৈরি চিত্রকর্ম বেচে বেশ অর্থ আয় করেন। এ দিয়েই বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শিশুপার্ক হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। গতকাল রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের জয়নুল আবেদিন গ্যালারিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভযাত্রা উপকমিটি এবং বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইসচ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীসহ (রণবীর) আরো অনেকে। সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিককর্মীরা অংশ নেন। বক্তারা বলেন, নববর্ষ বরণ উৎসবে যেহেতু মৌলবাদীদের অপপ্রচার আছে, দুর্বৃত্তপনা আছে, তাই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অবশ্যই পুলিশ দেবে। কিন্তু শোভাযাত্রার সামনে-পিছনে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্ডন করে রাখা হলে ভুল বার্তা যাবে মানুষের কাছে। উন্মুক্তভাবে নির্বিঘেœ মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে চাই আমরা। পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাংস্কৃতিককর্মীসহ সবস্তরের মানুষকে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান বিষয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য। বাঙালি জাতির ঐতিহ্য। নাড়ির স্পন্দন। দীর্ঘ বছর চলে আসা বাংলা নববর্ষ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা অপ্রয়োজনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। নিজস্ব স্বকীয়তায় মঙ্গল শোভাযাত্রা হওয়া উচিত। আয়োজকরা বলেন, সব জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের সময়ের বাধ্যবাধকতা

থাকে না। অথচ কেবল বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ আয়োজনকে সীমিত করে দেয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী শক্তি উল্লসিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখ উদযাপনের অনুষ্ঠান ছোট ছিল। এবার শোভাযাত্রা বড় পরিসরে হবে। আমরা যদি পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করি, তাহলে মৌলবাদ শক্তিশালী হবে। পহেলা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। মৌলবাদ ঠেকাতে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে। তিনি বলেন, শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে থাকবে। বরাবরের মতো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পুলিশ যে বেষ্টনী দিয়ে রাখে আমরা তা চাই না। এতে ভুল বার্তা যায় মানুষের কাছে। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপন হচ্ছে। আমাদের বাঙালি জাতির প্রাণের এ ঐতিহ্য আরো ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং ঢাকার অনেক মানুষ বাড়িতে গেছেন। ঈদের পর পর বাঙালির এ উৎসব হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতে চলে আসেন তার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি সবাই অংশ নেবেন বলেও আশা করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. নিসার হোসাইন বলেন, কোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে আমরা আতঙ্কিত নই। বরং মৌলবাদীরা আতঙ্কিত। কারণ আমরা বছরে একদিন বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা করি। আর মৌলবাদীরা বছরজুড়ে অপপ্রচার চালায়। দুর্বৃত্তপনার কৌশল খোঁজে। তারা অস্তিত্বহীনতার ভয়ে ভীত। তাদের আতঙ্ক দেখে আমরা আনন্দিত। তাদের অপপ্রচারে আমাদের বৈশাখ উদযাপনের পরিধি বাড়ে। তিনি বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরা নিষিদ্ধ নয়। মুখোশ পরে দুর্বৃত্তরা কোনো অপরাধ করলে চিহ্নিত করতে পারে না পুলিশ। তাই দুর্বৃত্তপনা ঠেকাতে আমরা মুখোশ হাতে ধরব। বরাবরের মতো অনেক ব্যানার-ফেস্টুন ও লোকজ চিত্র স্থান পাবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। অশুভ শক্তির হুমকিতে বিশ্ব ঐতিহ্যের এ মঙ্গল শোভাযাত্রার অবয়ব কমে যেতে পারে না। বর্ণাঢ্যভাবে আয়োজন করা হবে। পহেলা বৈশাখে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল ৪টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
তিনি বলেন, নবনবর্ষ উদযাপনের সময়সীমা বেঁধে দিলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ সময়সীমা বেঁধে না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, পহেলা বৈশাখে ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেটি আমরা মানছি না। এবার আমরা যার যার মতো সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান শেষ করব।
বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু ইতিহাস বর্ণনা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আশির দশকে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ষবরণ শুরু হয় তখন কিন্তু অনেক জনপ্রিয় ছিল। কয়েক বছর ধরে মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বর্ষবরণের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, মৌলবাদীরা যত সক্রিয় হবে, মঙ্গল শোভাযাত্রার তত প্রসার ঘটবে, জনপ্রিয়তা বাড়বে। তিনি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনমানুষের অংশ নেয়াটা বাড়লে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ষবরণ উদযাপনের উদ্দেশ সাধিত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়