মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

বাইডেন কি মার্কিন নীতির পরিবর্তন করতে চান?

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের প্রশ্নটি এখন সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ দিতে সেখানে যারা কাজ করছিলেন তাদের ওপর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভারী কামানের সেল পড়ছে। মারা পড়েছে বেসামরিক মানুষ, এমনকি ত্রাণকর্মে নিয়োজিত মানুষ। এর আগে বেশ কয়েকবারই ইসরায়েল গাজার হাসপাতালে কামানের আক্রমণ চালিয়ে অসুস্থ ও অসহায় মানুষ হত্যা করেছে। তার মানে ইসরায়েল যে বর্বর ও মানবাধিকার হরণের এক বড় দখলদার ও শিখণ্ডী, তা প্রমাণ হয়েছে। ইসরায়েলের এ রকম হত্যার প্রধান সহায়তাকারী দেশ হিসেবে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ হত্যার এই ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, এই হত্যাযজ্ঞের হিংস্র টানেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না আমেরিকা। বেরিয়ে আসতে না পারলে একদিন না একদিন খোদ আমেরিকাই ইসরায়েলের গ্রাসের মুখে পড়বে। মূলত মানুষ হত্যার এই যজ্ঞে আমেরিকার টনক নড়েছে যখন ত্রাণদাতা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজনের প্রাণ গেল। তার আগেই ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক-হামাসযোদ্ধা ইসরায়েলি হত্যার শিকার হলেও বাইডেনের বুজে থাকা চোখে আলো ঢোকেনি। তার বোধোদয় হওয়ার পর বাইডেন ক্ষেপেছেন। তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৩০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন। তখনই তিনি হুঁশিয়ারিটি দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, বেসামরিকদের ক্ষতি, মানবিক দুর্ভোগ এবং সাহায্য কর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষায় ইসরায়েলকে সুনির্দিষ্ট এবং বাস্তবিক পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছেন বাইডেন। তাদের এ আলাপ প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস আরো জানিয়েছে, মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেছেন, ‘এ পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে ইসরায়েলের নেয়া তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের বিষয়ে আমাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে গাজার জন্য মার্কিন নীতি নির্ধারণ করা হবে।’ নেতানিয়াহু ও বাইডেনের ফোনালাপের পর একটি সংবাদ সম্মেলন করেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। তখন ইসরায়েল এবং গাজার প্রতি মার্কিন নীতিতে যে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। (বণিক বার্তা : ০৪/০৫/২৪)
একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বাইডেনের এই হুমকিতে নেতানিয়াহুর জুয়িশ সরকার একটুও ভয় পায়নি। তারই পূর্বাভাস দিয়েছে তারই মুখপাত্র তাল হেনরিচ। বলেছে ‘আমি মনে করি, ওয়াশিংটনকে এ কথাটির ব্যাখ্যা দিতে হবে।’
ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য কোথায় পৌঁছেছে তা তাল হেনরিচের ব্যাখ্যা চাওয়া থেকেই অনুমান করা যায়। বর্বর হলে যে প্রজ্ঞার বিলোপ ঘটে এ যেন তারই লক্ষণ দেখা দিল।
এই ইসরায়েল নামক শিখণ্ডীকে সমর্থন দিতে গিয়ে তাদের হাতে মারাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করার পরিণতি যে আমেরিকার দিকেই ছুটে আসবে বুয়েরাংয়ের মতো, হেনরিচের ব্যাখ্যা চাওয়ার সাহস থেকেই তা বোঝা যায়। বাইডেনের মুখে যে চপেটাঘাত পড়ল, সেটা কি তিনি টের পেলেন? তার সহকর্মী রাজনীতিকরা কি তা বুঝতে পারলেন? নাকি তারাও ইসরায়েলি প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ফিলিস্তিনি মানুষদের নির্মূল করতেই কংগ্রেসের একজন সদস্য দাবি জানিয়েছে। ওই কংগ্রেসম্যানকে মানুষ হত্যার প্ররোচনা দানকারী হিসেবে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করার অন্য বিকল্প নেই। মার্কিনি বাইডেন প্রশাসনের এই ব্যর্থতা কেবল তার একার নয়, এই রাজনৈতিক লিগেসির রক্তাক্ত ইতিহাস তারা নিজেরাই সৃষ্টি করেছেন যুগের পর যুগ ধরে। আজ হয়তো সময় এসেছে এত কালের মানুষ হত্যার কাফফারা দিতে। মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাহারাদার হিসেবে শিখণ্ডী ইসরায়েল সৃষ্টি যে কতবড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, আজ তার খেসারত দিতেই যেন বৃদ্ধ বয়সে জো বাইডেন ক্ষমতার মসনদে বসে আছেন।
আবার এটাই সত্য যে, মার্কিনি পররাষ্ট্রনীতির কুফলে আজ সে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে মিত্র হিসেবে আর ধরে রাখতে পারছে না। বৈশ্বিক ট্রেন্ড হিসেবে প্রতিপক্ষের কোর্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছে তারা। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের যে শীতল বাতাস বইছিল এতকাল, তার অবসান হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের নেতা সৌদি আরব সফর করেছেন। সৌদিদের মার্কিনি প্রেম কমে আসছে। রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার এটা একটি লক্ষণ বলে ধরে নিতে পারি আমরা। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশ এখন সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে। এই ঐক্য যে আগামীতে সামরিক বলয়ে টার্ন করবে না, এটা কে হলফ করে বলতে পারে? এর মধ্যেই তো বিশ্ব অর্থনৈতিক বলয় থেকে রাশিয়া ও চীন বের হওয়ার চেষ্টায় নতুন অর্থ-ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে। মোটকথা, মধ্যপ্রাচ্য মার্কিনি হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সরকারের অমানবিক, অনৈতিক ও হিংস্রতার দরুন। আমার ধারণা, বাইডেন যে হুমকি দিয়েছে, তার মূলে আছে বিশ্বের আর্থ-সামাজিক ও সামরিক মেরুকরণের বিষয়টি।

দুই.
যদি অস্ত্র বিক্রি আর আরবদের সামরিক শিখণ্ডীর চাপে ও তাপে রাখতেই মার্কিনি পররাষ্ট্রনীতি চলে, তাহলে ওই নীতি একদিন মেডিটেরিয়ানের জলে আত্মাহুতি দেবে। এই রিডিংয়ে কোনো ভুল নেই। কথায় আছে ‘চোরার দশ দিন আর সাধুর একদিন’। চোরা ধরা পড়বেই। ইতিহাসও গোলাকার। ঘুরতে ঘুরতে একদিন শিখণ্ডীর নরকে এসে তা অস্তমিত হবে। সেই দিনটি আসন্ন বললে ভুল হবে না। জর্জ ওরওয়েল তার উপন্যাসে বলেছিলেন ১৯৯৪ সালে সোভিয়েতের পতন হবে। সেটাই কিন্তু হয়েছে। ইসরায়েলেরও পতনের সময় ঘনিয়ে আসছে।
তিন.
এখন জো বাইডেন কী করবেন? তার সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদের কাছে ইসরায়েলের এই ঔদ্ধত্যের কী জবাব হবে, তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। অথবা জবাব দেয়ার কথা উহ্য রেখে কী করবেন এখন, সেই পরামর্শ চাইতে পারেন। জন কিরবির কাছে সংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কী কথা হয়েছে বাইডেনের। কিরবি তা সবিস্তারে জানাতে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ গোমর তিনি ফাঁস করলেন না। আমরা কোনোদিনই হয়তো জানতে পারব না যে আসলে কোন টোনে বাইডেন নেতানিয়াহুকে কী কী করতে হবে, তা বলেছেন। জো বাইডেনকে শেষ পর্যন্ত হাউস অব রিপ্রেজেনটিটিভস ও উচ্চকক্ষ কংগ্রেসের কাছে যেতে হতে পারে। সেখানে তিনি তুলে ধরতে পারেন ইসরায়েলের সাম্প্রতিক গাজা হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি। কংগ্রেস ও হাউস মিলেও সিদ্ধান্ত দিতে পারে। সেটাই হবে গণতন্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক সমাধানের পথ। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, আমেরিকান প্রশাসন ও আমেরিকান নাগরিকদের রাজনৈতিক মন পররাষ্ট্র বিষয়ে একই ঐক্যে চলে।

চার.
সামনে ইলেকশন আছে আমেরিকায়। সেই নির্বাচনে জিততে হলে ওই দেশের হাইস্কুল পাস (জিইডি) কৃষককুল তো হোয়াইট সুপ্রিমেসি রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তরা ইসরায়েলের পক্ষে তাদের লেজ তুলে নাচবে। কারণ তারা মনে করে নেতানিয়াহুরা তাদেরই রাজনৈতিক সামাজিক উত্তরসূরি। তারা জানে না যে হজরত ইসাকে (ডাক নাম যিশু বা জেসাস) ইহুদিরা কী রকম কষ্ট আর নির্যাতনের মধ্যে রেখে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। মূর্খ আর আত্মম্ভরীদের অবস্থা মূলত বদ্ধ অন্ধ ও গোয়ার প্রকৃতিতে নিমজ্জিত। এসব সত্ত্বেও আমরা বলব নেতানিয়াহুর মুখপাত্র তাল হেনরিচের কথার কঠোর জবাব দেয়া উচিত। ইসরায়েলের আগ্রাসী বাহিনীর হাতে ৩৩ হাজার মানুষ হত্যার পরও যখন হুঁশ হয়নি বাইডেনের, তখন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ৭ জন ত্রাণকর্মীকে হত্যায় বাইডেনের ঘুম ভাঙল কেন? তিনি জেগে উঠবেন এবং সজাগ থাকবেন, এটাই তো আমাদের চাওয়া। আর আগামী নির্বাচনে ভোটদাতারা কিন্তু বৃদ্ধ ও ঘুমিয়ে পড়া কাউকে প্রেসিডেন্সির জন্য পছন্দ করবে না। যে আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্রের তাকে ইসরায়েলের ওপর বলবৎ করলেই পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষ তাকে বাহবা দেবে এই বলে যে অবশেষে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ালেন, অমানুষ ও বর্বর নেতানিয়াহুর পাশে যাননি।
তিনি সামরিক ও বেসামরিক, অস্ত্র ও খাদ্যসহ যাবতীয় সহযোগিতা বন্ধ করে দিন ইসরায়েলের জন্য। তাহলেই একমাত্র তাকে থামানো যাবে। আর যদি মনে করেন যে ইসরায়েলকে রাখা দরকার, তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে সিসফায়ারের, সঙ্গে অস্তিত্বের সেøাগানটিও নেতানিয়াহুর গলায় ঝুলিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ইসরায়েলের শেকড় নেই ওই ভূমিতে। দেশটি নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের, যারা আজ গৃহচ্যুত।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়