মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

ঝড় ও বজ্রপাত : নয় জেলায় প্রাণ গেল ১৩ জনের

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দেশের কয়েকটি জেলায় গতকাল রবিবার কালবৈশাখী ঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফলে ও পিরোজপুরে দুজন করে, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, ভোলা, যশোরের ঝিকরগাছা, খুলনার ডুমুরিয়া ও রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঝালকাঠি (শহর) : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠিতে প্রবল ঝড় ও বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত হয়। এ সময় জেলার কাঠালিয়া উপজেলার আওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের মুন্সিরাবাদ গ্রামে হেলেনা বেগম (৪০) নামে একজন বজ্রপাতে মারা যান। জেলাটির সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের ইসালিয়া গ্রামে নিহত হয়েছে মাহিয়া আক্তার ঈশানা (১১) নামের এক শিশু। সে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারায়। এছাড়া সদর উপজেলার শেখের ইউনিয়নে বজ্রপাতে মিনারা বেগম (৩৫) নামে এক নারী গুরুতর আহত হন। পরে দুপুরের দিকে তিনিও মারা যান।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকাল ১০টার পর প্রবল বর্ষণে জেলার অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে গেছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সকাল থেকেই গোটা জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
বাউফল (পটুয়াখালী) : বাউফলে ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে একজন মারা গেছেন এবং এক শিশুকে ঝড়ের পর রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদের।
বেলা ১১টার দিকে বাউফলে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। এ সময় দাশপাড়া ইউনিয়নের চরালকী গ্রামে গাছের নিচে পড়ে সুফিয়া রহমান (৮৫) এবং নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাতেরকাঠি গ্রামে রাতুল (১৪) নামে এক শিশু মারা যান। এছাড়া ঝড়ে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
লালমোহন ও মনপুরা (ভোলা) : জেলার লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় শতাধিক কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নে কাঁচা ঘরের চাপা পড়ে মো. হারিচ আহমেদ নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। হারিচ ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ভিক্ষা করতে বের হয়ে তিনি ঝড়ের সময় মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তির বসতঘরের সামনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নিহত ওই ব্যক্তি ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা। এছাড়া জেলায় কমপক্ষে দুজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
পিরোজপুর : সকাল পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় ঝড়। প্রায় ১৫ মিনিটের এ ঝড়ে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় শত শত গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় পৌর এলাকার শারিকতলা ইউনিয়নের মরিচাল গ্রামে ঘরে গাছচাপা পড়ে রুবী বেগম (২২) নামে এক নারী নিহত হন। এ ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছেন। এদিকে খালে পরে অনিল পাল (৮৩) নামে আরও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় একজন নারী নিহত হন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
বাগেরহাট : কালবৈশাখী ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে জেলার কচুয়া উপজেলা চরসোনাকুড় গ্রামের মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাগেরহোট শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিলবোর্ড ভেঙে যাত্রীবাহী বাসের ওপর পড়ে বাসের চালকসহ ৩ জন গুরুতর আহত হন। সকাল সাড়ে ৯টার এ ঘূর্ণিঝড়ে জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলার কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বিধ্বস্ত কয়েক শত কাঁচা ও আধা কাঁচা বাড়িঘর। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে জেলা সদরসহ অন্য উপজেলাগুলোতে গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুৎতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। জেলার প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ লাখ টাকা ও ৬শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা : জেলার খালিয়াজুরীর হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কৃষক শহীদ মিয়া (৫২) উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তার ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করছিলেন শহীদ মিয়া। দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান শহীদ মিয়া।
খালিয়াজুরী থানার ওসি উত্তম কুমার সাহা বলেন, নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজস্থলী (রাঙামাটি) : রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে একজন মারা গেছেন। বিকালে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। সাজেউ খিয়াং রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের অংসাউ খিয়াং এর ছেলে।
জানা গেছে, রবিবার বিকালে ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের নিজের বাড়ির সামনে কাজ করছিলেন সাজেউ খিয়াং। এ সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিজের ঘরে অবস্থান নেন। তখন ঘরে বজ্রপাত হলে মারা যান তিনি। রাজস্থলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঝিকরগাছা (যশোর) : ঝিকরগাছা উপজেলায় ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে।
ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি বলেন, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বৃষ্টি থামার পর অন্য কৃষকরা বিলে গেলে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ডুমুরিয়া (খুলনা) : জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৯) নামের এক মাছচাষি নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওবায়দুল্লাহ গাজী ওই গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়