মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : বইপত্র হারিয়ে পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত সহস্র শিক্ষার্থীর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্/ছায়াদ হোসেন সবুজ, শান্তিগঞ্জ থেকে ফিরে : হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে শান্তিগঞ্জ উপজেলার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের বইপত্রসহ শিক্ষা উপকরণ। এতে পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সহস্রাধিক স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীর। পড়াশোনা স্বাভাবিক করার জন্য তারা নতুন পাঠ্যবই সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। সরজমিন শান্তিগঞ্জ উপজেলার রায়পুর মর্নিংবার্ড কিন্ডারগার্টেনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের জন্য এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন পাঠশালা ছিল। সেটি ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাগলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের টিনসেডের ক্লাসরুমে কয়েকটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ইউনিসেফের জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের একাধিক প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড। এছাড়া পাগলা রায়পুর হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রা. হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসায় দেখা যায়, এটিতে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি, বাংলা, গণিত, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন ৩৫০ জন শিক্ষার্থী। দুই দিন আগেও এ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত ছিল। গত রবিবারের বৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত মাদ্রাসার দুটি ভবন, আসবাবপত্রসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ। দশ মিনিটের ঝড়ে আবু বক্কর সিদ্দিক রা. মাদ্রাসার মতো বিধ্বস্তÍ হয় আস্তমা মহিলা মাদ্রাসা ও একাডেমিক ভবন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানসহ সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা ও বেসরকারি সংস্থার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো, আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হয়েছে। ঝড়ে এলাকার যেসব ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত, ওই সব পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়ের বেশিরভাগের বইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। ঝড়জলে যা রক্ষা পেয়েছে তাও পড়ার উপযোগী নয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ঈদ-পরবর্তী সময়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে, ফলে বইপত্র হারিয়ে বিপাকে আছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় পাঠকার্যক্রম চালিয়ে নিতে নতুন বই সরবরাহ জরুরি বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি তুলেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার রায়পুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর। কালবৈশাখী ঝড়ে তানভীরদের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পড়ার টেবিল থেকে তার সব বই ঝড়ে উড়ে যায়। সামনে তার পরীক্ষা কিন্তু তানভীরের কাছে কোনো বই নেই। লেখাপড়া করার মতো কোনো উপকরণও নেই তার।
তানভীর পড়াশোনা চালিয়ে নিতে নতুন বই চেয়েছেন। হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রা. হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা আবু সাইদ বলেন, বৈশাখী ঝড়ে আমাদের মাদ্রাসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে। ঈদের পর মাদ্রাসার নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। কিভাবে পাঠ কার্যক্রম শুরু করব তা বুঝতে পারছি না। বিধ্বস্ত দুটি ভবন মেরামত করতে হবে। নতুন করে আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণ কিনতে হবে। সরকারি বেসরকারি সহায়তা না পেলে কিছুই করা সম্ভব হবে না। পাগলা সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ইয়াকুব শাহরিয়ার বলেন, ঝড়ে এলাকার বহু শিক্ষার্থীর বইপত্রের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কাছে শিক্ষার্থীরা নতুন বই চাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নতুন বই দরকার।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃসংস্কার করতে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জেলা প্রশাসক মহোদয় ও আমি পরিদর্শন করেছি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বেসরকারি। তাছাড়া ঝড়ে যেসব শিক্ষার্থীদের বই নষ্ট হয়েছে তার তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের নতুন বই সরবরাহ করার বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল রায় বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে বইয়ের চাহিদাপত্র পাঠানো হলে তা স্টক থেকে সরবরাহ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়