ডায়েট ভুলে জমিয়ে খান নুসরাত

আগের সংবাদ

অভিযানে কোণঠাসা কেএনএফ

পরের সংবাদ

৭৩ বছরের ঐতিহ্য : রাজশাহীতে ইফতারে পূর্ণতা এনেছে দিল্লির শাহী ফিরনি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান, রাজশাহী : ইফতারে রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র গণকপাড়ার রহমানিয়া হোটেলের ঐতিহ্য দিল্লির শাহী ফিরনি। রোজাদারদের রসনার তৃপ্তি মেটাতে টানা ৭৩ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এ ফিরনি। রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় এক নামেই যার পরিচিতি। তাই প্রতি বছর রোজার মাস এলে রহমানিয়া হোটেলের শাহী ফিরনি ছাড়া রাজশাহীর অনেক মানুষের ইফতারে পরিপূর্ণতা আসে না। রাজশাহী মহানগর রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী রহমানিয়া হোটেলের মালিক রিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫১ সালে তার দাদা আনিসুর রহমান খান ভারত থেকে সুস্বাদু এ খাবারটি রাজশাহীতে নিয়ে এসে প্রচলন শুরু করেন। গণকপাড়ার এ দোকানেই ছোট পরিসরে শাহী ফিরনি বানাতে শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর তাতে হাত দেন রিয়াজের বাবা হাজী আবদুল বারী খান। শুরু থেকেই শাহী ফিরনি রাজশাহীবাসীর মন জয় করে নেয়। এরপর ধীরে ধীরে তাদের হোটেল ব্যবসার প্রসার হয়। নামডাক ছড়াতে শুরু করে এ শাহী ফিরনির। তখন থেকে এখন পর্যন্ত শাহী ফিরনির কদর এক রত্তিও কমেনি। যুগের পর যুগ ধরে স্বাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই শাহী ফিরনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে রহমানিয়ার শাহী ফিরনির। শুরুতে ফিরনির দাম ছিল ছয় আনা। আর এখন ২৫ টাকা। তবে স্বাদের তুলনায় এই দাম যুগ হিসেবে

এখনো অনেক কম বলে দাবি করেন রিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, প্রতিদিনের ইফতারের টেবিলে মাটির পেয়ালা ভরা এ ফিরনিই রোজাদারদের সেরা আকর্ষণ।
রিয়াজ বলেন, গরুর খাঁটি দুধ, পোলাওয়ের চালের গুঁড়া, কাজু বাদাম, কিসমিস, চেরিফলসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এ শাহী ফিরনি তৈরি করার পর মাটির একটি পাত্রে করে জমিয়ে রাখা হয়। পরে তা বেচা হয়। তবে আগে প্রতিদিন পাওয়া গেলেও বর্তমানে রোজায় ও বিশেষ অর্ডার ছাড়া এ শাহী ফিরনি তৈরি করা হয় না। স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় এ ফিরনির জন্য রোজাদারদের রয়েছে অনেক চাহিদা। তাই প্রথম রোজা থেকেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে এ আইটেম। নাম-ডাক থাকায় ভারতের রাজধানীতেও এই ফিরনির ব্যাপক চাহিদা আছে বলে জানান তিনি। আহমেদ খান আরো বলেন, আগে এই ফিরনি সকালের নাস্তার সঙ্গে খেত অনেকে। বছর গড়াতে থাকলে ফিরনির কারিগররা মারা যাওয়ায় এর ব্যবহারটা কমে আসে। এখন আমরা শুধু রোজার মাসে স্পেশাল এই ফিরনি তৈরি করি। আমাদের এই ফিরনি রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এসে নিয়ে যায়। শুধু তাই না, কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ফিরনি পাঠানো হয়। বর্তমানে আমদের চার প্রজন্ম চলছে, আমরা এই ফিরনির ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও যেন এই ফিরনি তৈরি করতে থাকে।
রিয়াজ জানান, রমজান মাসে শাহী ফিরনি তাদের সেরা আকর্ষণ। এছাড়া রোজার মাসজুড়ে রহমানিয়া হোটেলে ইফতারের বিশাল আয়োজন রয়েছে। রহমানিয়ার ইফতারের প্রতি প্যাকেটে থাকছে- বুট, খেজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, সমুচা, কলা, শসা, মুড়ি, কাঁচা বুট এবং নিমকপাড়া। যার দাম ৫০ টাকা। এছাড়া খাসির তেহেরি হাফ প্লেট ৬০, চিকেন বিরিয়ানি হাফ প্লেট ১০০, কাচ্চি বিরিয়ানি ১০০, শিক কাবাব ৩০, কাটি কাবাব ১৫, চিকেন কাবাব ৩০, চিকেন টিক্কা ২০, চিকেন সাসলিক ২৫, ক্রিসপি চিকেন ৬০, গ্রিল চিকেন ৮০-৩২০, শামী কাবাব ৫০, সমুচা ৬, শাহী পেঁয়াজু ৫, কোপ্তা ৫, ঘি দেয়া স্পেশাল হালিম ৮০-১৪০, সিঙ্গারা ৫, হায়দরাবাদি বিরিয়ানি ১২০-২০০ এবং জিলাপি বেচা হয় ১০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বাহারি বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রীতে পদ্মাপাড়ের বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সুনাম দেশজুড়েই। এবার রমজানের প্রথম দিন রাজশাহীতে কয়েক বছরের তুলনায় নগরীতে ইফতার সামগ্রীর দাম অনেক বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে গত বছরের চেয়ে এবার ইফতারি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় ডাবল টাকা। ছোলা, বুট থেকে শুরু করে ইফতারির প্রতিটি সামগ্রীর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আবার যেসব সামগ্রীর দাম বাড়েনি, সেসব সামগ্রীর আকার ছোট হয়ে গেছে। তারপরও রোজার প্রথম দিনেই ইফতারির দোকানগুলো ছিল ক্রেতা সমাগমে পরিপূর্ণ। দাম বেশি হলেও বিকাল হওয়ার পর থেকে লোকজন ভিড় করে ইফতারির দোকানে। রাজশাহী নগরীতে ইফতারির আইটেমও করা হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এতে বলাই যায়, রোজায় জমজমাট ছিল রাজশাহীর ইফতার বাজার। মহানগরীর সাহেববাজার, আলুপট্টি, কুমারপাড়া, ভদ্রা, সোনাদীঘির মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, ল²ীপুর, কাদিরগঞ্জ, বিন্দুরমোড়, নিউমার্কেট, গণকাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পসরা সাজিয়ে বেচা হচ্ছে ইফতার। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলোতে রকমারি ইফতার তৈরি হয়েছে এ বছরও। ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, ক্ষিরসা, ফালুদা, নবাবী টানা পরোটা, কাশ্মিরী পরোটা, চিকেন মসলা, রেশমি কাবাব, তেহারি, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রাই, মাঠা-ঘোল ও নানা রকমের জুসসহ জনপ্রিয় ইফতার সামগ্রীগুলো এবারও শুরুতেই মন কাড়ছে রাজশাহীর মানুষের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়