ডায়েট ভুলে জমিয়ে খান নুসরাত

আগের সংবাদ

অভিযানে কোণঠাসা কেএনএফ

পরের সংবাদ

সংঘাত সংঘর্ষ আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সংবাদপত্র পড়ে কিছুদিন আগে জেনেছি যে দেশে রাজনৈতিক হানাহানি বা হত্যাকাণ্ডে একটা নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। তারপরে জানলাম এটা হচ্ছে গত নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনটা হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। একদিকে দল মনোনীত প্রার্থী আর অপরদিকে দলের সম্মতি প্রাপ্ত প্রার্থী, যাকে কেউ কেউ ডামি বলতে ভালোবাসেন। এই উদ্ভাবনীয় ব্যবস্থার দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করা। প্রতিযোগী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড প্রথম উদ্দেশ্যটাকে বেশ কিছুটা হলেও সফল করেছে। দ্বিতীয় হলো আওয়ামী লীগের খারাপ আপেলগুলো বর্জন। অন্তত ৬২ আসনে অনেক খারাপ আপেল যোগ্য প্রার্থীর কারণে ঝরে পড়েছে। আরো অনেক জায়গায় খারাপ প্রার্থীরা ধরাশয়ী হতো যদি না প্রশাসন ও দল তাদের সহায়তা না দিত। এটা ছিল পরাজিত প্রার্থীদের মন্তব্য। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের টিকেটেও এমন ক’জন নির্বাচিত হয়েছেন, যারা মনোনয়ন পাবে না বলে বাজারে প্রচার ছিল। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার বিরূপ রিপোর্ট ছিল। তাদের সরাসরি সরাতে গেলে দল ভাঙনের সম্ভাবনা ছিল। এসব ‘না পারে খেতে ও পারে না উগলানো’দের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও অভিনব পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছিল। আগেই বলেছি প্রথম লক্ষ্যটি নিঃসন্দেহে অর্জিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষের কাছে নির্বাচনটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সংঘাত উন্মেচিত হলো, সূচিত হলো মুদ্রার ওপাশ। এই সংঘাত হচ্ছে সাবেক এমপি ও বর্তমান এমপির মধ্যে; দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত এমপিদেরও ডামি এমপির সংঘাত। আগের এমপিরা যেখানে জয়ী হয়েছেন সেখানে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। সফলও হচ্ছেন। কারণ তাদের সংসদীয় এলাকায় যত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা ও অবস্থান আছে তাতে তার আত্মীয়স্বজনরাই অধিষ্ঠিত আছে। আত্মীয়স্বজনের বাইরে পয়সাদাতাদেরও বলয়ে নির্বিচারে অন্তর্ভুক্ত করা আছে বলে অভিযোগ আছে। তারাও আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দাঁত বসাতে চাচ্ছে। অন্যরাও বসে নেই। আরেক দৃশ্য হচ্ছে ডামি এমপিগণ তার প্রভাব বলয় বৃদ্ধিতে নেমেছেন। আত্মীয়স্বজনকে দেয়া পদের অবশিষ্ট বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় বিক্রির মাধ্যমে প্রভাব বলয় বৃদ্ধির প্রয়াস অব্যাহত আছে। তাতে সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো এমপি স্বজনদের দলীয় প্রলেপ দিয়ে পাস করিয়েও এনেছেন। অন্যরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই প্রতিষ্ঠিত মডেলই অনুসরণ করতে যাচ্ছে। সেখানে অনেক হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও নিজের আত্মীয় বা স্বজনের দলীয় প্রতীকে আবদ্ধের মহড়া ও প্রক্রিয়া চলমান আছে।
অন্যদিকে পরাজিত ডামি প্রার্থীরা কোনো কোনো জায়গায় এলাকা ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে। তাদের নিকটজনরা হুমকি-ধমকিতে কাবু হচ্ছে, নিবেদিত কর্মীগণ ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। তারা দেখছে দল সুযোগ-সুবিধা এমপি বা তার অনুগ্রহীতারা দিনের পর দিনে লুফে নিচ্ছে। তারা ভোটকেন্দ্রমুখী নাও হতে পারে।
নির্বাচনের আগেই অনেকে চুপসে যাচ্ছে। অভিযোগ হচ্ছে যে নির্বাচন করে লাভ হবে না, এমপিদের মনোনীতগণকেই প্রশাসন অনুগ্রহ করবে এবং তারাই জয়ী হবে। তবে জয়ী হবে কি না আমার সন্দেহ। সম্প্রতি জামায়াত-বিএনপি মিলে গেছে। জামায়াত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীও দেবে। বিএনপি নিমরাজি। শেষমেশ দল হিসেবে বিএনপি চোখ বুঝে থাকবে হয়তো। তবে জামায়াত-বিএনপির জোটবদ্ধতা থেমে থাকবে না, নির্বাচনে জেতা সম্ভব হতেও পারে। ফল দাঁড়াবে ব্যাপক সংখ্যার জামাতি নির্বাচিত হবে। ক্রমেই প্রশাসনকে কব্জা করে শহর ও ঢাকামুখী হবে। এ বিপদ অত্যাসন্ন নয়। তবে আসন্ন জেনেই প্রতিকার হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। ঘোষিত নীতি অনুসারে এই প্রার্থী মনোনয়ন অসম্ভব। তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসৃত হলেও এমপির লোকেরাই মনোনীত হবেন; কেননা এলাকায় তিনিই সর্বেসর্বা। তাহলে দলের অন্যরা কী করবে? তাও বোধগম্য। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে কিছুটা নিষ্ঠুর আচরণ। এমপিদের সংযত করার সব প্রক্রিয়া বলবত রাখা এবং পারতপক্ষে বিভিন্ন জায়গায় ‘উড়ে এসে জুড়ে বসাদের’ মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ দেয়া; আত্মীয় ও মাইম্যানদের যে কোনো প্রক্রিয়ায় বসিয়ে নিবেদিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়