ডায়েট ভুলে জমিয়ে খান নুসরাত

আগের সংবাদ

অভিযানে কোণঠাসা কেএনএফ

পরের সংবাদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস : স্বাস্থ্যকর দেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যা সম্পর্কে ব্যক্তিকে সচেতন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্বে ১৯৫০ সাল থেকে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের প্রত্যেকটি নাগরিকের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এই দিনটি পালনের পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অধিকারের বিষয়টি ক্রমাগতভাবে হুমকির সম্মুখীন। রোগব্যাধি ও দুর্যোগ মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
হু কাউন্সিল অন ইকোনমিক্স অব হেলথ ফর অলের মতে, বিশ্বের অন্তত ১৪০টি দেশ তাদের সংবিধানে স্বাস্থ্য বিষয়কে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু তাদের নাগরিকরা যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর থেকে বোঝা যায় যে, বিশ্বের অধিকাংশ জনগণ তাদের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হয়েছে।
এই বিষয়টাকে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’। বিশ্বের সর্বত্র সবাই যাতে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, তথ্য, নিরাপদ সুপেয় পানি, পরিষ্কার বায়ু, ভালো পুষ্টি, মানসম্মত বাসস্থান, শোভন কর্ম ও পরিবেশগত অবস্থা এবং বৈষম্যমুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ পায়, সেজন্য এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশে এই বছর উক্ত প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে কুষ্ঠরোগের উচ্চহার সম্পন্ন ২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ এবং কুষ্ঠজনিত বিকলাঙ্গতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। দেশে প্রচুরসংখ্যক কুষ্ঠরোগী শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে। প্রতি বছর ৩০০০-৩৫০০ জন শনাক্ত হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। এই সব রোগী পরবর্তীতে বিকলাঙ্গতা নিয়ে শনাক্ত হলেও ততদিনে তারা পরিণত হয় দেশের বোঝা হিসেবে এবং দেশ হারায় তার কর্মক্ষম জনসংখ্যা।
কুষ্ঠ নিয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠান দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের (টিএলএমআই-বি) তথ্য মতে, কুষ্ঠরোগে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে প্রায় ৬-৮ শতাংশ সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে পঙ্গু হয়ে যায়। তাছাড়া আরো ৫ শতাংশ রোগী প্রথমদিকে হাতের অনুভূতি শক্তি হারানোর মতো সমস্যার মুখোমুখি হন, তারা পরবর্তীতে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। কুষ্ঠের কারণে যারা প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, প্রাথমিক অবস্থায় তাদের জন্য রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা গেলে প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। এই জন্য দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা দরকার।
প্রাথমিক অবস্থায় কুষ্ঠ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা কুষ্ঠ নির্মূলের অন্যতম কৌশল। যেসব স্থানে কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়, শনাক্তকৃত রোগীদের আশপাশের লোকজনকে রোগমুক্ত রাখার জন্য তাদের প্রিভেনটিভ কেমোথেরাপির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাজেই আমাদের যেটা দরকার তা হলো, দেশের কুষ্ঠপ্রবণ এলাকাগুলোর সম্ভাব্য কুষ্ঠ রোগীদের যথাসম্ভব রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া। এজন্য কুষ্ঠের লক্ষণাদি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপকভিত্তিক গণপ্রশিক্ষণ ও প্রচারণা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এটি যেহেতু একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা, সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদদের সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো গেলে ভালো ফল আশা করা যেতে পারে।
কুষ্ঠ বিষয়টাকে অধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন দরকার। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা। এটা করা না হলে কুষ্ঠবিরোধী কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখবে না।
কুষ্ঠবিরোধী কার্যক্রম যেমন সার্ভে, স্কিন ক্যাম্প, সচেতনতা কার্যক্রম, চিকিৎসক, মেডিকেল ছাত্র, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো, স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যথাযথ মনোযোগ প্রদান করা উচিত।
কুষ্ঠ চিকিৎসাযোগ্য একটি রোগ এবং এর চিকিৎসা ও পরীক্ষা সারাদেশে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। চিকিৎসা বিলম্বিত হলে প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা এই রোগকে ঘিরে কুসংস্কারের প্রধান কারণ। তাই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা দরকার।
বাংলাদেশে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তি, এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার ও বৈষম্যের সম্মুখীন হন। যারা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন তারা এই রোগের কারণে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হন। কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধাদি হতে বঞ্চনার সম্মুখীন হন। আমরা এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যার উদ্দেশ্য হলো সমৃদ্ধশালী, সমতা ও টেকসই ভবিষ্যতের কাজ করা, এখানে যে কোনো ধরনের কুসংস্কার ও বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। কুসংস্কার ও বৈষম্য থাকলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠন সম্ভব নয়। অর্থাৎ কুষ্ঠ ও কুষ্ঠজনিত দুর্ভোগ থাকলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে না।
২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২য় জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলন ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কুষ্ঠমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ তার জাতীয় কুষ্ঠ কর্মকৌশল (২০২৩-২০৩০) প্রণয়ন করেছে যেখানে একটি শক্তিশালী জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি, সমন্বিত কেস শনাক্তকরণ, সমন্বিত কেস ব্যবস্থাপনা এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠনের কথা ঘোষণা করেছে। এখন প্রয়োজন এটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন। এটা করা না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল কথাই হচ্ছে সবার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন গড়ে তোলা। কুষ্ঠ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এটা দুরীভূত হওয়া দরকার।
আসুন আমরা একত্রে কাজের মাধ্যমে কুষ্ঠকে পরাভূত করে বাংলাদেশকে সবার জন্য স্বাস্থ্যকর ও স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।

মো. সাজেদুল ইসলাম : লেখক ও সাংবাদিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়