ডায়েট ভুলে জমিয়ে খান নুসরাত

আগের সংবাদ

অভিযানে কোণঠাসা কেএনএফ

পরের সংবাদ

পিয়াইন নদীতে নেই সেতু : জামালগঞ্জে ৫২ বছর ধরে দুর্ভোগে ছয় গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত উপজেলা জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের পিয়াইন নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে গত ৫২ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ইউনিয়নের ৬ গ্রামের মানুষ। এলাকাবাসী অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ৫২ বছর ধরে ইউনিয়নের ৬ গ্রামের মানুষ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এমপি, মন্ত্রীসহ সবার কাছ থেকে শুধু আশার বাণী শুনেছি। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়নের ভরতপুর ও কুকড়াপশী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী। এ নদীতে সারা বছরই পানি থাকে। নদী পেরিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ের ভরতপুর, আক্তাপাড়া, চানপুর, পূর্বপাড়ে নজাতপুর, কুকড়াপুশি, শেলমস্তপুর গ্রামের মানুষজনসহ স্কুল, কলেজ, হাটবাজার এবং জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা সদর থেকে এপার থেকে ওপারে দিবারাত্রি যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বর্ষায় নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছোট-ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও হেমন্তে বাঁশের চাটাইয়ের তৈরি সরুসেতু। এ দিয়ে জনসাধারণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা এবং মোটরসাইকেল চালকদের যাতায়াত করতে হয়। নদীতে স্রোত বাড়লে কিংবা বৃষ্টি হলে ওই পথে যাতায়াত খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তখন প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে দুই পাড়ের ৬ গ্রামের মানুষদের জন্য। বিকল্প পথে ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে হয়।
নদীতীরবর্তী ভরতপুর গ্রমের সপ্তম শ্রেণির স্কুলছাত্রী অর্পিতা দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন আমাদের একাধিকবার নদী পারাপার হতে হয়। প্রতিবারই নৌকা পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হয়। বর্ষাকালে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রায়ই দুর্ঘটনার ভয়ে পারাপার বন্ধ থাকে। তখন আমাদের বিকল্প পথে ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুল-কলেজে যেতে হয়।
চাঁনপুরের বাসিন্দা অমর চন্দ্র বলেন, জীবিকার তাগিদে আমাদের দিবারাত্রি একাধিকবার নদী পারাপার হতে হয়। কিন্তু পিয়াইন নদীতে সেতু না থাকায় নদীর দুই পাড়ের ৬ গ্রামের বাসিন্দা, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের গত ৫২ বছর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্বাচন এলে প্রতি বছর জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। পরে নির্বাচন চলে গেলে তা ভুলে যান তারা।
তার দাবি এ সেতু তৈরি হলে এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ নদীর একদিকে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাচনাবাজার, সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক, উপজেলার সব অফিস আদালত, সাচনাবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, অন্যদিকে ভরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিটি বিদ্যালয়য়েই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হয়।
ভরতপুর গ্রামের ব্যবসায়ী কিরন সরকার বলেন, পিয়াইন নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। দাবি মেনে নিয়ে একাধিকবার নির্বাচনের আগে মাপজোক করা হয়। নির্বাচন এলে (এলজিইজির) কর্মকর্তারা মাপজোকে নেমে করেন এবং এখানে সেতু নির্মাণের আশার বাণী শোনান। স্বাধীনতা পর থেকেই এখানে শুধু সেতু নির্মাণ হবে হচ্ছে শুনে আসছি। ২ বছর আগে মাপামাপি দেখে ভেবেছিলাম এবার বুঝি সেতু নির্মাণ হয়ে যাবে। কিন্তু আজও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু মাপজোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ভরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিহির তালুকদার বলেন, প্রতিদিন এ পিয়াইন নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ঝ—-বৃষ্টি হলে অনেক ডাকাডাকি করেও খেয়া নৌকা পাওয়া যায় না। তখন শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে অনেক সময় বিলম্ব হতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এ নদীতে সেতু নির্মাণ করে নদীর দুই পাড়ের ৬ গ্রামের মানুষের ৫২ বছরের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য।
জানতে চাইলে এলজিইডির সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, ইতোমধ্যে ভরতপুর, কুকড়াপুশী পিয়াইন নদীর উপর সেতুটির ডিজাইনসহ সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। সীমানা জটিলতার জন্য কাজটি থেমে রয়েছে। সংসদ-সদস্য দ্রুত সেতু নির্মাণ করার জন্য আমাদের বলেছেন। আশা করি আগামী অর্থবছরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়