আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

সচিব পদে আসছে বড় রদবদল ও পদোন্নতি : ঈদের আগে-পরে হতে পারে গেজেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা কাজ শুরু করলেও পছন্দসই সচিব না পাওয়ায় তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে অন্তত ৫ জন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে সচিব পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। তাই ঈদের আগে-পরে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অর্থাৎ সচিব পদে রদবদল হতে পারে। পাশাপাশি দুজন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়ে সচিবও হতে পারেন। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব পদেও পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, অন্তত ৮ থেকে ১০ জন সচিবের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ বেশ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিবর্তন তালিকায় রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে গত তিন মাস ধরে অফিস করছি। এই তিন মাসে একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে, এই সচিবকে পরিবর্তন না করলে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা যাবে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব সচিব পরিবর্তন করে দিতে। হয়তো ঈদের আগে-পরে সচিব পদে রদবদলের গেজেট হয়ে যাবে। শুধু তার মন্ত্রণালয়েই নয়, অন্তত ৮ থেকে ১০ জন সচিবের দপ্তর পরিবর্তন হওয়ার কথা। পাশাপাশি দু’জন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়ে সচিব হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, সাধারণত সরকার গঠনের এক ও দুই মাস পর সচিব পদে কিছু রদবদল হয়ে থাকে। এবার অনেক নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এসেছেন। তাদের রানিংমেট হিসেবে যোগ্য সচিব দরকার। তিনি বলেন, গত মেয়াদে সরকার অনেকটাই আমলানির্ভর ছিল। মন্ত্রীদের সামনে রেখে গুটিকয়েক আমলাই মন্ত্রণালয়ের কলকাঠি নেড়েছেন। কিছু মন্ত্রী আমলাদের পরামর্শই গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। আবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের চেয়ে সচিবদের ক্ষমতাই বেশি ছিল। আসলে নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছিলেন সচিবরাই। এবার যেন এমনটা না হয়, সেই চিন্তা সরকারের ভেতরে

আছে। মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে আসা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবার সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বেশি মনোযোগী ও দৃঢ়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি স্তরে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব  থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এবার নিয়মিত বিসিএস ১৮ ও ৩০তম ব্যাচ থেকে এ দুই পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এর আগে গত বছর এপ্রিলে অতিরিক্ত সচিব ও ১ নভেম্বর উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এবার ১৮তম ব্যাচের বড় একটি অংশসহ বাদ পড়া (লেফট আউট) সপ্তম ব্যাচ থেকে ১৭তম ব্যাচ, অন্য ক্যাডারসহ আগে পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার সব তথ্য যাচাই করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে পুলিশে বড় পদোন্নতি দেয়া হয়। তখন অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত বছর তিন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে ১ হাজার ৬০৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কিছু রদবদল হতেই পারে। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, সচিব পদে কেউ পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হলে তাদের তা দিতে হবে। তারা দেশের জন্য কাজ করেন, সুতরাং তাদের সময়মতো পদোন্নতি প্রয়োজন।
অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া : বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ৬২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। তিন ধাপেই অনুমোদিত পদের চেয়ে বেশি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আগে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে এসএসবির কয়েক দফা সভা করা হলেও পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। ওসব বৈঠকে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির অভিযোগসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আরো সভা করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। সাড়ে তিন বছর ধরে যুগ্ম সচিব পদে চাকরি করার পর ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব করা হচ্ছে। এ ব্যাচের ১০০ কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে যোগদান করেন। এর মধ্যে কাজ করছেন ৯২ কর্মকর্তা। প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত ৪২০ জন; অর্থাৎ অনুমোদিত পদের তিন গুণের বেশি। এর সঙ্গে আরো ১০০ জন যুক্ত হলে প্রশাসনের মাথা ভারী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষার জন্যই বিভিন্ন স্তরে পদসংখ্যার বিন্যাস হয় পিরামিডের মতো। এ পিরামিডের আকৃতি নষ্ট হলে ভারসাম্যও নষ্ট হয়।
কর্মকর্তারা জানান, নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৮তম ব্যাচের সঙ্গে অতীতে বিভিন্ন সময় পদোন্নতিবঞ্চিত (লেফট আউট) কর্মকর্তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের ৪০ জনসহ ১৮তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা ১১০ জন। এ ছাড়া লেফট আউটে রয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাই ধারণা করা হচ্ছে, একশর কমবেশি কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হতে পারেন। গত জুনে তারা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। এদিকে সূত্র জানায়, যোগ্য সবাইকে পদোন্নতি দেবে সরকার। কিন্তু কর্মজীবনের বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মে জড়ানো কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে সরকারের মনোভাব একটু কঠোর। ফলে যাদের এসিআরে ‘সমস্যা’ আছে, তাদের পদোন্নতি ঠেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়