আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

গ্যাসের অভাবে চালু হচ্ছে না রূপসা পাওয়ার প্ল্যান্ট : প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অপেক্ষা করতে হবে ৩ বছর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হরলাল রায় সাগর : নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হলেও গ্যাসের অভাবে নির্ধারিত সময়ে চালু করা যাচ্ছে না ৮০০ মেগাওয়াটের রূপসা পাওয়ার প্লান্ট। প্লান্টটিতে গ্যাস যাবে ভোলা থেকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্যাসের পাইপ লাইনই সংযুক্ত করা যায়নি। আগামী ২০২৭ সালের আগে গ্যাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে গ্যাসচালিত পাওয়ার প্লান্টটি চালুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো তিন বছর। এতে খুলনার অনেক শিল্প-কারখানার উৎপাদনসহ উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপসা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা গেলে খুলনাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। উন্নয়ন ঘটবে আর্থসামাজিক অবস্থার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে, যা যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন খুড়িয়ে গেছে।
কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই রূপসা পাওয়ার প্লান্টটি চালু করা হবে। ভোলা থেকে গ্যাস আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সূত্র জানায়, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে ‘রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সিসিপিপি) প্রকল্প’ গ্রহণ করে। খুলনার শিল্পাঞ্চল খালিসপুরের রূপসায় ৫০ একর জমির ওপর গ্যাসভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত রূপসা ৮০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগিত হয়েছে ৬২ শতাংশ। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিটের ইরেকশন কাজ প্রায় ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটের ইরেকশনের কাজ চলমান। আগামী জুনে প্রথম ইউনিট ও সেপ্টেম্বর নাগাদ দ্বিতীয় ইউনিটের ইরেকশনের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। গ্যাস টারবাইন জেনারেটিং সেট, স্টিম টারবাইন জেনারেটিং সেট, হিট রিকভারি স্টিম জেনারেটিং সেট, পাওয়ার ট্রান্সফরমার, এয়ার কুলিং কনডেন্সার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম, সাব-স্টেশন এবং রেগুলেটিং অ্যান্ড মিটারিং স্টেশনসহ (আরএমস) প্রায় সব বৈদেশিক মালামাল প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে।
ট্রান্সমিশন লাইনের নির্মাণ কাজের প্রায় ৮৩ শতাংশ (২৪ কিলোমিটার) এবং খুলনা সাউথ সাব-স্টেশনে বে-এক্সটেনশনের ফাউন্ডেশন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গ্যানটারি টাওয়ারগুলোর ইরেকশনের কাজ শেষ হয়েছে। জিআইএর ইকুইপমেন্ট ইনস্টেলেশনের কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। চলতি মাসেই ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণকাজ শেষ হবে। গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণকাজের গ্যাস সরবরাহ কাঠামো প্যাকেজের কমিশনিং তিন বছর

আগে সম্পন্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য গত ২৮ মার্চ সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) সঙ্গে পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের গ্যাস সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট (জিএসএ) হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শীতকালে টেস্টিং/কমিশনিংয়ের জন্য এসজিসিএল গ্যাস সরবরাহ করবে। নির্ধারিত সময়ে গ্যাস পাওয়া গেলে আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কমিশনিং করা যাবে। তবে ২০২৭ সালের জানুয়ারি থেকে বেইস লোডে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ আছে। তাই ২০২৭ সালের আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে না। এ সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণে রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে। নদীর তলদেশ দিয়ে শাহবাজপুর থেকে পটুয়াখালীতে গ্যাস পাইপ লাইন টানা হবে। স্থলপথে এ গ্যাস যাবে খুলনায়। এ পথে গ্যাসের লাইন টানা হয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু পটুয়াখালীতে এখন পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন সংযোগ না হওয়ায় খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, ভোলা থেকে পটুয়াখালীতে নদীর তলদেশ দিয়ে গ্যাস লাইন টানার জন্য ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আহ্বান করা হয়েছে দরপত্রও। এ দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে গ্যাস পাইপের সংযোগ দিতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ তিন বছরই বসিয়ে রাখতে হবে রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ফলে সংরক্ষণকালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা করা হবে না। এতে বেশ কিছু জটিলতা মোকাবিলা করতে হবে। যেমন : ওই সময়ে ওয়ারেন্টি কাবারেজ ফলপ্রসূ হবে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের পর থেকে পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি কভারেজ রেখে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট এন্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) চুক্তির ডিফেক্ট লায়াবিলিট পিরিয়ডের শর্তাবলি সংশোধন করতে হবে। এমনকি, এডিবির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি মেয়াদ অন্তত ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং প্রকল্প বা ডিপিপির মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো লাগবে।
খুলনা সার্কেলে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৯৬ মেগাওয়াট। আর অফপিক আওয়ারে চাহিদা ১৭৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিদ্যুতের ৫৫ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে শিল্পাঞ্চলে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ৮ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬৪ রাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এবং জাপান ফান্ড ফর পোভার্টি রিডাকশন (জেএফপিআর) প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৫ হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দিবে। আর সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ২ হাজার ৪৬০ কোটি ৭৭ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে।
বিদ্যুতের নিরাপদ ও দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত জীবিকার জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেয়া এবং পর্যাপ্ত শিক্ষাগত সুবিধাসহ একটি স্কুল নির্মাণের মাধ্যমে প্রকল্পের আশেপাশের স¤প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়