সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

বাঁচাতে হবে নদীগুলো

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নদীমাতৃক দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। নদী বিধৌত উর্বর পলিমাটির কারণে যেমন আমাদের দেশ সুজলা-সুফলা তেমনি ইতিহাস-ঐতিহ্যে আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মাছ এবং ভাত খাদ্য হিসেবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাত যেমন আমাদের প্রধান খাবার তেমন মাছ আমাদের প্রদান আমিষ। সেই ঐতিহ্যকে এ দেশের মানুষ মনে-প্রাণে লালন করে। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটা বলেও যেন তৃপ্তি পায়। যদিও আগের মতো সেই মাছের দেখা মিলে না আর। এখন যার টাকা আছে সে কিনে খেতে পারে, যার টাকা নেই সে কিনে খেতে পারে না। বাজারের অধিকাংশ মাছই চাষের মাছ। নদ-নদীর দেশীয় মাছ যা পাওয়া যায় তা চড়া দামে কিনতে হয়। এই চড়া দামের কারণে মাছে-ভাতে বাঙালি, কথার সঙ্গে বর্তমান সময়টা বিপরীতমুখী হতে বসেছে। অথচ একটা সময়ে এই মাছের জোগান আসত বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল থেকে। বর্ষাকাল শুরু হতেই দেখা মিলত নতুন নতুন সব মাছের আর শীতকাল পর্যন্ত পাওয়া যেত সে মাছ। শীতের শুষ্কতায় নদী-নালা ও খাল-বিলের পানি কমে আসলে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ত মাছ। এ সময়ে মাছ সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে শুঁটকি করে রাখা হতো। আউশ ধানের ক্ষেতে ধান কাটার পর ধরা হতো টাকি, কই, পুঁটি, মায়াসহ আরো মাছ। এ দেশের মানুষ তখন মাছ উৎপাদনের জায়গা বলতে প্রাকৃতিক এ জলাশয়গুলোকেই বুঝত। গ্রামে গ্রামে ছিল জেলেদের বাস। জেলেরা এসব প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদী পাড়ের মানুষগুলোর জীবন ও জীবিকা এই নদীর ওপর নির্ভর করত। কালের বিবর্তনে আমাদের সে নদী বা অন্য জলাশয়গুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক হারিয়েও গেছে। ভরাট হয়ে গেছে সে জলাশয়গুলো। নদীগুলো চলে গেছে ভূমিখেকোদের দখলে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে শুকিয়ে গেছে তার ধারা। যে জলাশয়ে সারা বছর মাছে ভরপুর থাকত তা আজ গোচারণ ভূমি। আমার দেখা কোদলা নদী। বর্ষাকালেও এখন সেখানে পানি থাকে না। নারায়ণপুরের হাওর। সাদিপুরে পেঁচোড় বাঁওড় তাও শুকিয়ে গেছে। জেলেরাও পেশা পরিবর্তন করেছে। এমন অবস্থা সারাদেশেই। যদি বাংলাদেশের এই নদী-নালা ও খাল-বিলগুলোকে খনন করে আবার আগের মতো করা যেত তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও ফিরে আসত সে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। বর্তমান প্রজন্ম মাছ বলতে শুধু চাষের মাছকেই চিনে। অল্প আয়ের মানুষগুলো পাঙ্গাশ আর সিলভারকার্প ছাড়া অন্য মাছ কিনতেও পারে না তেমন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জমি কমে আসছে। বাড়ছে চাহিদা। সে চাহিদা পূরণের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে অল্প জায়গায় বেশি মাছ চাষে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে চাহিদার পাশাপাশি বেকার সমস্যাও দূর হচ্ছে। এটা যেমন প্রয়োজন তেমনি আমাদের প্রাকৃতিক জলাশয়ের দেশীয় মাছে সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাও প্রয়োজন। যেখান থেকে মানুষ ধরে মাছ সংগ্রহ করতে পারবে নিজেদের জন্য। এই তো ২০০৭ সালের দিকেও বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যায় ইলিশ আর চাপিলা মাছে জেলেদের জাল ভরে যেত। একদিন মাছ ধরলে একটি পরিবারের ১৫ দিন চলে যেত সে মাছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তা আজ শুধুই ইতিহাস। এই গরিব মানুষগুলোর কাছে মাছ যেন আজ কল্পনার কোনো অধরা বস্তু। কলকারখানার বিষাক্ত সব কেমিক্যাল, সার, লবণ, রঙের পানি, পয়ঃনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপ এখন এই প্রবাহবান উচ্ছল নদীগুলো। যা এক সময় ছিল মাছের অভয়ারণ্য। জাল ফেললেই যেখানে উঠে আসত প্রচুর মাছ। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষগুলো এখনো চেয়ে আছে যদি আবার ফিরে আসে নদীর সে মাছের প্রবাহ। যদি খনন করা হয় নদী-খালগুলো। একটু সচেতন আর আন্তরিক হলে অনেকটাই সম্ভব তা। নির্দিষ্ট নিয়ম করে কলকারখানার বর্জ্য ও পানি শোধনের মাধ্যমে তা নদীতে ফেলা। নদী দখলমুক্ত করা। নদীগুলো খনন করা। এলাকার প্রতিনিধির মাধ্যমে খাল, হাওর, বাঁওড় চিহ্নিত করে খনন করা। চেষ্টা করলে সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব, প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা।যেসব জলাশয় ভরাট হয়েছে তা আবার জেগে উঠুক, বেঁচে উঠুক এটা মানুষের প্রত্যাশা। সবার কথায় যুক্ত হোক, দেশ বাঁচাতে চাও যদি, সবার আগে বাঁচাও নদী।

নূরজাহান নীরা : চিকিৎসক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়