সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

বরিশালে শেষ সময়ে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম. কে. রানা, বরিশাল : ঈদের বাকি আছে মাত্র এক সপ্তাহ। তাই ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় জমে উঠেছে বরিশালের ঈদ বাজার। ক্রেতাদের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। তাই বিক্রেতারাও বেশ খুশি। ছোট-বড় মার্কেট, শোরুম ও শপিংমলগুলোতে পোশাকের সমাহার আর বাইরে রং-বেরংয়ের বাতিতে ঝলমল করছে মার্কেট এলাকা। এদিকে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষ দেশি পণ্য কিনছেন। তবে ২০ রোজার পর থেকে জুতা ও কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ক্রেতাদের দাবি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পণ্যর দাম বেশি। এছাড়া ১০ রোজার পর থেকে নগরীর নামীদামি টেইলার্সসহ অলিগলির টেইলার্সেও পোশাক তৈরির অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।
সরজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো ঘুরে জানা গেছে, রমজান শুরুর পূর্বেই ক্রেতাদের চাহিদার দিক বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নিত্যনতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজ, মার্কেট ও অভিজাত বিপণিবিতানগুলো। ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় লক্ষ করা গেছে, রিচম্যান-লুবনান, স্মার্টটেক্স, স্বপ্ন, স্টার প্লাস, ব্যাঙ, চন্দ্রবিন্দু, বিশ্ব রঙ ও আড়ংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে। এছাড়া নগরীর চকবাজার, ভেনাস মার্কেট, সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, সোবাহান কমপ্লেক্স, ফকির কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন শপিংমলগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এদিকে সিটি মার্কেট ও মহসিন মার্কেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শৌখিন ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করার জন্য ছুটে আসছেন বরিশাল শহরে। সে কারণেও নগরীর শপিংমলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মেয়েদের থ্রি-পিসে এবার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ‘পি-কে’, ‘কাল্পনিক’, ‘লাভ স্টোরি’ নামের নতুন ডিজাইনের থ্রি-পিসের যথেষ্ট চাহিদা বরিশালের ঈদ বাজারে। তবে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আলিয়াকাট ও নায়রাকাট। আর শিশুদের পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের পাঞ্জাবী বেশি হচ্ছে। পোশাক কিনতে আসা কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রথম রোজার দিকে মার্কেটে এলেও কেনাকাটা করেননি। তবে আজ আলিয়াকাট কিনেছেন। নগরীর গীর্জামহল্লা এলাকার বৈশাখী শপিংমলের ম্যানেজার মকবুল হোসেন জানান, শব-ই বরাতের পর থেকেইে বেচাকেনা বাড়তে শুরু করে। বাচ্চাদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে শাড়ি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি ও খুচরা শাড়ি বিক্রেতারা এবছর ভারত থেকে গুজরাটি সিল্ক, বাহা সিল্ক, মনিপুরী কাতান, মনিপুরী সুতি, পিউর সিল্ক, জর্জেট ও নেটের ওপর কাজ করা শাড়ি আমদানি করেছেন। তবে এবার বেশিরভাগ ক্রেতার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইল জামদানি, তাঁতের শাড়ি, সফট সিল্ক আর জুট জামদানি। এগুলোর দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এ বছর ঈদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার দামি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ‘টপ-টেন’ বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক ইমরান শেখ বলেন, আমরা সব সময় পোশাকের গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। মানের সঙ্গে আমাদের প্রতিটি পণ্যের দামটাও সামঞ্জস্য করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নগরীর কাটপট্টি এলাকার থান কাপড়ের দোকানগুলোতে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে জানা যায়, যারা কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করবেন তারা আগেভাগেই কেনাকাটা শেষ করেছেন। এদিকে জুতার দোকানগুলোতে ২০ রোজার পর থেকেই বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মেট্রো সু হাউজের প্রোপ্রাইটর শামছুল আলম জানান, বিদেশি জুতার দাম ১০% বাড়লেও চাহিদা কম। দেশি জুতার চাহিদাই বেশি। ঈদের আগে তাদের বেচাকেনা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
নগরীর অ্যাপেক্স ও বাটা শো-রুমে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে স্বল্পআয়ের মানুষের ভরসাস্থল নগরীর মহসিন মার্কেট, সিটি মার্কেট পুরোদমে জমে উঠেছে। ঈদুল ফিতরকে ঘিরে নগরীর নামিদামি শপিংমলের চেয়ে এ মার্কেট দুটোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে ঈদ বাজারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে ও যানজটমুক্ত রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে নগরীর চকবাজার ও গীর্জা মহল্লা এলাকার সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইতোমধ্যে পুরো নগরীজুড়ে ২৬০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নগরীকে পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা, উন্নত পুলিশি সেবার লক্ষ্যে ক্রাইম কন্ট্রোল, ট্রাফিক ও থানা কন্ট্রোল এবং সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের জন্য ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে বিভাগীয় শহর বরিশালের পুরো নগরী এখন পুলিশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে। সে কারণে মধ্যরাতেও নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে নির্বিঘেœ ঈদের বেচাকেনা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়