সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

দেশীয় ব্র্যান্ড হাউসে ক্রেতাদের ভিড়

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ঈদ কেনাকাটায় বড় একটা অংশজুড়ে থাকে দেশি পোশাক। নিজেকে কিংবা প্রিয়জনকে রাঙাতে ক্রেতারা ভরসা রাখেন দেশীয় ব্র্যান্ডে। ঈদের আর অল্প কিছুদিন বাকি, তাই ফ্যাশন হাউসগুলোয় বাড়ছে নিজস্ব ডিজাইনের তৈরি দেশি পোশাকের চাহিদা। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ হওয়ায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বর্ণিল, বৈচিত্র্যময় রং ও ইউনিক ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ম্যাচিং করে ট্রেন্ডি পোশাক কিনতে ক্রেতারাও ছুটছেন দেশীয় ব্যান্ডের দোকানে।
সরজমিন দেখা যায়, ঈদ ও বৈশাখকে সমন্বয় করে দেশীয় প্রতিটি ফ্যাশন হাউস তাদের পোশাকের রঙে এনেছে রংধনু কম্বিনেশন। গরম আবহাওয়া মাথায় রেখে বাছাই করা হয়েছে পোশাকের ফেব্রিক ও ডিজাইন। আড়ং, ইয়েলো, রিচম্যান, অঞ্জনস, বিবিয়ানা, ক্যাটস আই, সেইলর, এক্সটেসি, কে ক্রাফট, এম ক্রাফট, টুয়েলভ ক্লোথিং, ভাসাবি, দর্জিবাড়ি, রং বাংলাদেশ, ইসিসহ নতুন সব দেশীয় ব্র্যান্ড মানসম্মত পোশাকের সম্ভার সাজিয়েছে। সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, শাড়ি, টপস, কুর্তি কিংবা ছোটদের পোশাক- সব ধরনের কম্বিনেশন পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। দেশি ফ্যাশন ডিজাইনাররা এবার ঈদের পোশাকে উজ্জ্বল রং প্রাধান্য দিয়েছেন। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাই-ডাই, ব্লক, বাটিক, কারচুপি, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক ও স্ক্রিনপ্রিন্ট। পোশাকে এসেছে জয়সিল্ক, ধুপিয়ান, অ্যান্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক, সুতিসহ আরামদায়ক কাপড়ের বাহার। মেয়েদের পোশাকে থাকছে মসলিনের সালোয়ার-কামিজ, ড্র্যাপিং স্টাইল ইউনিক লং ড্রেস, ফ্লোর টাচ টু-পিসসেট, জিপার অ্যাডেড সালোয়ার-কামিজ, সিগারেট প্যান্ট ও কামিজ প্যাটার্ন প্লাজোসহ ফিউশনভিত্তিক শর্ট টপস। মোটিফের ক্ষেত্রে জামদানি ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে ইসলামিক, ফ্লোরাল, আলপনা ও চিরায়ত দেশীয় উপাদান। ক্রেতারা জানান,

বাজারে এ বছর অনেক নতুন নতুন কালেকশন এসেছে। তবে দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। তাই পছন্দের পোশাক কিনতে ডিজাইনের পাশাপাশি বাজেটও বিবেচনা করতে হচ্ছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, পোশাক তৈরির সব উপাদানের বাড়তি দামের কারণে বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার।
আড়ংয়ে মেয়েদের জন্য এবারো রাখা হয়েছে রঙিন পোশাকে ঈদের আয়োজন। টপস, কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, ফ্রক, প্লাজোর ডিজাইনে এসেছে ভিন্নতা। আড়ংয়ের তাগা ব্র্যান্ডে পাওয়া যাচ্ছে ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের কুর্তি ও টপস। এছাড়া সুতির ওপর কটির সঙ্গে কামিজ, শর্ট ও লং কুর্তি রয়েছে। সাদাকালোর মোটিভ হচ্ছে প্রিন্ট মেকিং। মেয়েদের আনস্টিচ, স্টিচ সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, পাতলা কটি, ওড়না, ম্যাচিং প্লাজো রয়েছে। এসব পোশাকে সুতি, অ্যান্ডি সিল্ক, বলাকা সিল্ক, মসলিন ফেব্রিকস ব্যবহার করা হয়েছে।
দেশালে দেখা গেল একটু ভিন্নধারায় মেয়েদের পোশাক। তারা থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামের ঐতিহ্য। কুর্তিগুলোর নামেও রয়েছে বেশ ভিন্নতা। যেমন- ‘একলা মাঝি’ কুর্তিতে রয়েছে নৌকায় মাঝির ছবি, ‘গল্প’ কামিজে দুই মেয়ে বসে গল্প করছে, ‘সংগীত’ কামিজে দোতারা নিয়ে এক মেয়ের ছবি। সুতা, হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারিতে করা হয়েছে নকশাগুলো। হাতায় লেয়ার ও ঘটিহাতা ব্যবহার করা হয়েছে।
অঞ্জনসে এবার মেয়েদের কামিজে লং প্যাটার্ন আনা হয়েছে বেশি। গত বছর একটু শর্টের প্রাধান্য ছিল। তবে এবার লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাকে জোর দেয়া হয়েছে। টপস বা কুর্তিতে ভয়েল এবং তাঁত ফেব্রিকে ব্লক, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট ও মেশিন এমব্রয়ডারি করা হয়েছে। বরাবরের মতো এ বছরও লিনেনের লং কামিজ ও কুর্তি রাখা হয়েছে।
ক্রে-ক্রাফটে মেয়েদের জন্য রয়েছে- ওয়ান পিস, টপস, স্কার্ট ও ঘের দেয়া ফ্রক। হালকা কাজের পোশাকের পাশাপাশি ঈদের জন্য একটু জাঁকজমক ভাবটাও আনা হয়েছে কিছু পোশাকে। কটন, হাফ সিল্ক ও অ্যান্ডি সিল্কের ফেব্রিকগুলো দিয়ে তারা এবার সিøম ফিট পোশাক রেখেছে। রং বাংলাদেশে সুতি ও অ্যান্ডি কটন ফেব্রিককে প্রাধান্য দিয়ে মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ, সিøভলেস এবং শর্ট হাতা কামিজ, কুর্তি ও টপস রাখা হয়েছে। এসব পোশাকে হাতের কাজ ও ব্লক করা হয়েছে। কামিজের সঙ্গে রয়েছে প্যান্ট কাট সালোয়ার ও প্লাজো।
বেইলি রোডে ক্রে-ক্রাফটের আউটলেটে বোনকে নিয়ে ঈদের ড্রেস কিনতে এসেছেন ইয়াসমিন জাহান নিতু। বোনের জন্য টপস কেনা শেষে নিজের জন্য অ্যান্ডি সিল্কের একটি গাঢ় নীল রঙের ড্রেস ট্রায়াল দিচ্ছিলেন। কী কী কিনলেন? প্রশ্নে করতেই বেশ উচ্ছ¡াস নিয়ে নিতু বললেন, কেনাকাটায় আমার প্রধান ভরসা বরাররই দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো। বিশেষ করে ক্রে-ক্রাফটের সব ধরনের পোশাকই ভালো লাগে। কাপড়ের মান, রং আর ডিজাইন- সব মিলিয়ে দারুণ কম্বিনেশন। ভারতীয় ও পাকিস্তানি ড্রেসের ভিড়ে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর গুরুত্ব কিছুটা হলেও ¤øান হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে নিতু বললেন, না, কখনোই না। ওসব ড্রেস শুধু উৎসবে পরার মতো, কিন্তু দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো সারা বছরই পরা যায়।
আকর্ষণীয় ডিজাইনের নতুন নতুন কালেকশন এনেছে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলর। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার বেচাকেনাও জমজমাট। বৈচিত্র্যময় রঙের পাশাপাশি নিখুঁত হাতের কাজ, এলিগেন্ট লুক, একইসঙ্গে আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে সেইলর এনেছে কাপড়ে ভিন্নতা। এখানে পাঞ্জাবি আর মেয়েদের থ্রি-পিস ও টপসের ডিজাইনে এসেছে ভিন্নতা। পাঞ্জাবির নেক ও হাতায় বাহারি নকশার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে পাথরের বোতাম। মেয়েদের সিঙ্গেল টপসের জায়গায় এবার এসেছে কামিজ-সালোয়ার মিলে কোর সেট। মিরপুর ১ নম্বর আউটলেটে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন সুমন। তিনি বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের জন্য মিলিয়ে পাঞ্জাবি কিনব। দারুণ পাঞ্জাবি আছে এখানে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি।
সেইলরের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এবার সেইলরের কালেকশনে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও কাবলি সেট এবং নারীদের সালোয়ার, টু-পিস ও কুর্তিসহ বিভিন্ন পোশাক। শিশুদের পোশাকসহ রয়েছে পরিবার ও দম্পতিদের জন্য বিশেষ কালেকশন।
সারা লাইফ স্টাইলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রোকোনুজ্জামান বলেন, ধীরে ধীরে দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর ভালো করছে। বিভিন্ন ধাপের ক্রেতাদের জন্য দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের পণ্য বাজারে আনছে। তিনি বলেন, যার আড়ংয়ের পণ্য কেনার সক্ষমতা নেই, সে হয়তো সারা লাইফ স্টাইলে ভিড় করছে।
অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ বলেন, অন্যান্য বছরের মতোই কেনাকাটা ভালো। তবে নতুন নতুন ডিজাইন ও সময়োপযোগী ট্রেন্ডে দেশীয় ব্র্যান্ডে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। একই সঙ্গে পণ্যের মান নিয়ে প্রতিযোগিতা ও ব্র্যান্ডের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ব্র্যান্ডগুলো এখন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিকই নয়, দেশব্যাপী বড় শহরগুলোতে চলে গেছে। ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়