সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

জাকাত নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ। জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র বা পরিশুদ্ধ করা। অর্থাৎ কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত নিজের কাছে থাকলে তার থেকে নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়াকে জাকাত বলা হয়। জাকাত গরিবের প্রতি অনুগ্রহ নয়; বরং এটা গরিবের প্রাপ্য। জাকাত প্রতি বছর একবার করে দেয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে আমাদের দেশে ঈদুল ফিতরের আগে যার ওপর জাকাত দেয়া ফরজ হয়েছে; তিনি তার এলাকার গরিব, মিসকিন এবং আত্মীয়স্বজনদের মাঝে তার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ বিলিয়ে দিয়ে তার অবশিষ্ট সম্পদকে পরিশুদ্ধ করেন। কিন্তু ইদানীং আমাদের সমাজে জাকাতের পোশাকের নামে কিছুটা সস্তা এবং নিম্নমানের কাপড় দেয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জাকাত হিসেবে আমাদের সমাজে লুঙ্গি এবং শাড়ির প্রচলনটা বেশি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমাজে এক শ্রেণির মানুষ বাজারে গিয়ে জাকাতের কাপড় হিসেবে সব থেকে কম দামি লুঙ্গি এবং শাড়ি কিনে এনে জাকাত দিচ্ছে। নিজেদের গচ্ছিত মালামাল পরিশুদ্ধ করতে গিয়ে গরিব অসহায় মানুষের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা করছে। যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
রমজান মাস প্রায় শেষের পথে। গ্রাম কিংবা শহরের বড় বড় বাজারের বিপণিকেন্দ্রে গেলে দেখা যাবে বেশ বড় বড় সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। সেখানে লেখা আছে ‘এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায়’। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ কম দামে নিম্নমানের এসব কাপড় কিনছে। অনেকেই তো বাজারে গিয়ে নির্দিষ্ট করে সস্তা দামে জাকাত দেবে বলে প্রকাশ্যে কাপড় খুঁজছে। যার ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। আল্লাহতায়ালা সুরা আল-ইমরানের ৯২নং আয়াতে বলেছে, ‘কস্মিনকালেও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় না করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষের জাকাত দেয়া শুধু লোক দেখানো হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের এ ইবাদত পালন হচ্ছে না। বর্তমানে এই শ্রেণির মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই হতাশাজনক একটি বিষয়।
এদিকে জাকাত সম্পর্কে সুরা আল বাকারার ২৬৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা যে পবিত্র ধনসম্পদ উপার্জন করছ এবং জমি থেকে যে ফসল আমি তোমাদের দান করেছি এসব কিছু থেকে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর।’ কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকের ওপর জাকাত ফরজ হলেও তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা দিচ্ছে না। এর ফলে একদিকে যেমন গরিব অসহায়রা তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে মহান আল্লাহতায়ালা বান্দার ওপর অখুশি হচ্ছেন। আর যারা দিচ্ছেন তারাও এসব কর্মকাণ্ডের ফলে জাকাতের নামে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেকেই তো জাকাত না দিলে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবে; কে কী বলবে এমন ভাবনায় দায়সারাভাবে জাকাত পালন করছেন। প্রকৃতপক্ষে জাকাত ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তিনি জাকাত না দিলে গোনাহগার হয়ে যাবেন এবং তার সম্পদ পরিশুদ্ধ হবে না। এই জাকাতের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন ঘটবে। এজন্য জাকাতে নিম্নমানের কাপড় দিলে সমাজে বৈষম্য আরো বেড়ে যাবে। তাই আমাদের এসব সস্তা চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, জাকাত হলো আল্লাহর একটি বিধান। কোনোভাবেই এটি প্রতারণা বা অহংকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। আর মনে রাখা দরকার যে, এই জাকাতের মধ্য দিয়েই আমরা নিজেদের মালামাল পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি আর্থিক ও নৈতিক সক্ষমতা অর্জন করে থাকি।

রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়