পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

সিলেটিদের ইফতারে প্রথম পছন্দ নরম খিচুড়ি : রেওয়াজ আছে ‘ফুড়ির বাড়ি’ ইফতার পাঠানোর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খালেদ আহমদ, সিলেট থেকে : পবিত্র রমজান মাসে সিলেট অঞ্চলে ইফতারিতে মানুষের প্রথম পছন্দ নরম খিচুড়ি। এটি সিলেটের মানুষের ইফতারের ঐতিহ্যও। তবে ইফতারের অপরিহার্য আইটেম ‘ছোলামুড়ি’ সিলেটিদের কাছে অচল ও প্রায় অপরিচিত। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে খিচুড়ির সঙ্গে পোলাও আর আখনি যুক্ত হয়েছে ইফতারি আইটেমে। খিচুড়ি কিংবা আখনী যাই হোক, সঙ্গে অবশ্যই ছোলা, পিয়াজু, আলুচপ, বেগুন ভাজি, জিলাপি, পাকুড়া, খেজুর আর শরবত থাকবেই। স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারির বিষয়ে সিলেটের মানুষ সচেতন বলেই প্রথম পছন্দ নরম খিচুড়ি। এমনটিই জানিয়েছেন সিলেটের স্থানীয়রা।
অন্যদিকে বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সময়ের মতো আগেকার দিনে সিলেট অঞ্চলে বাহারী ইফতারির প্রচলন না থাকলেও সেই ইফতারি ছিল নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যসম্মত। রোজদাররা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন স্বাস্থ্যের বিষয়ে। বিশেষ করে তেলে ভাজা ইফতার বা এ ধরনের কোনো খাদ্য পছন্দ করতেন না। তাই ইফতার ছিল তখন অনেকটাই সাদা-মাটা। তখন রোজাদারদের পেটেরপীড়া, গ্যাস্ট্র্রিকসহ নানাবিধ রোগে ভুগতে হতো না। বিশেষ করে ৭০-৮০ দশকের মধ্যে বাহারী ইফতার হাটে-বাজারে বিক্রয় হতে শুরু করে। এক সময় শহরে এক জায়গায় ইফতার নিয়ে দোকানিরা লাইন ধরে বসতেন বিক্রয়ের জন্য। সময়ের পরিবর্তনে এখন রকমারি ইফতার বিক্রয় হয় বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টের সামনে কাঁচের স্বচ্ছ গøাসের ভেতর। আর নানা পদের মুখরোচক ইফতারও পাওয়া যাচ্ছে এসব রেস্টুরেন্টে।
বহুজাতিক মিষ্টি বিপণন কোম্পানিগুলোও রমজান এলে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন। মজার বিষয় হলো, রেস্টুরেন্ট হোক আর মিষ্টির দোকান- সব জায়গাতেই নরম খিচুড়ি বিক্রি হয় চড়া দামে। সিলেটের সুপরিচিত পানসি রেস্টেুরেন্টে গিয়ে কথা হয় একজন ক্রেতার সঙ্গে। পেশায় আইনজীবী সাহেদ আহমদ নামের এই ক্রেতা জানান, হাফ কেজি নরম খিচুড়ি তিনি কিনেছেন ২০০ টাকায়। পানসি, পাঁচভাই কিংবা অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তৈরি এসব খিচুড়ি আর আখনি বেশ মুখরোচক। রোজাদাররা আগ্রহ নিয়েই অন্যান্য ইফতারির সঙ্গে খিচুড়ি ক্রয় করেন। সিলেটে বেড়াতে আসা বিভিন্ন এলাকার লোকজনও এই নরম খিচুড়ির প্রেমে পড়ে যান বলে মন্তব্য করেন পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জসিম। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যারা ইফতারি করতে আসেন তারা প্রায় সবাই খিচুড়ি পছন্দ করেন।
শুধু রেস্টুরেন্ট নয়, সিলেটের প্রত্যেক বাসা-বাড়িতেও ইফতারে গুরুত্ব দিয়ে নরম খিচুড়ি রান্না করা হয়। ঘরে তৈরি নরম খিচুড়ি দিয়ে প্রথমে ইফতার করেন পরিবারের সদস্যরা। পরে অন্য আইটেম গ্রহণ করেন। নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার গৃহবধূ রোমেনা বেগম বলেন, ইফতারের সময় নরম খিচুড়ি একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। তাই আমি প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না করি। আর আমার পরিবারের সদস্যরাও পছন্দ করেন। এ বিষয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ কবির আহমদ বলেন, রমজানে ইফতারের আইটেমে ভাজা পোড়া এবং তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে নরম খিচুড়ি অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।
এছাড়া রমজান মাসে সিলেট অঞ্চলে ‘ফুরির (মেয়ে) বাড়ি ইফতার পাঠানো অতি পুরনো সামাজিক একটি রেওয়াজ। এটা বহু বছর ধরে চলে আসছে। ধনী-গরিব প্রায় সব মুসলিম পরিবারে রমজান এলেই মা-বাবাদের তাগিদ শুরু হয় ‘ফুরির বাড়ির ইফতার’ পাঠানোর। চলে নানা প্রস্তুতি। সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার প্রস্তুত করে পাঠানো হয় ‘ফুরির বাড়ি’। মোরগ পোলাও, পোলাও কোরমা, আখনী, মিষ্টি-নিমকি, জিলাপি, খাজা, বাখরখানি, চানাভুনা, পিয়াজু ফিরনি হরেক পদেও পিঠা, মৌসুমী ফল ভরা টুকরিসহ নানা আয়োজনের ইফতারি নিয়ে সাধারণত শালা-শালিরা দুলাভাইয়ের বাড়িতে হাজির হন। সেই বাড়িতে তখন পাড়া প্রতিবেশীকেও দাওয়াত করা হয়। এখানেই শেষ নয়- দুলাভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি আর বোনের জন্য শাড়ি, এমনকি বিয়াই-বিয়াইনকেও

পাঞ্জাবি ও শাড়ি দেয়া হয়। আবার শালা-শালিরাও ফেরার সময় দুলাভাইয়ের কাছ থেকে বড় অঙ্কের গিফট নিয়ে ফেরেন। তবে অবস্থাপন্ন পরিবারের জন্য এটি আনন্দেও ব্যাপার হলেও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এটি কষ্টদায়ক। তাই অনেকেই লোক লজ্জার ভয়ে হলেও এই রীতি পালন করে আসছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়