পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

জুমচাষেই সুদিন ফিরছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের প্রাদদেশে ঘন সবুজের সমারোহ। ধান, আদা, হলুদ, বিভিন্ন ধরনের ফলফলাদির গাছে ভরে আছে পাহাড়। পাহাড়ে বসবাসকারী বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পারিবারিক কাঠামো মাতৃতান্ত্রিক। এখানে মায়েরাই সংসারের সবকিছু দেখভাল করে। পাহাড়ের সব আদিবাসী নৃগোষ্ঠী বেশ পরিশ্রমী। পরিবারের সবাই মিলে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করাকে এরা আদিকাল থেকেই অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। নিজস্ব পাহাড়ি জায়গায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করাই তাদের অন্যতম কাজ। মানুষকে ঠকানো, পরিশ্রম না করেই ধনী হয়ে যাওয়া এসব চিন্তা তারা কখনো করে না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই পাহাড়ে যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তা দিয়ে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তা বাজারে বিক্রি করার পক্ষপাতি। অবশ্য অনেক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে কয়েকটা পাহাড় থাকে। সেসব পাহাড়ে জুমচাষ করে তারা বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহে তেমন একটা চাষাবাদ হতো না। শুধু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা তাদের খাবারের জন্য অনেক কষ্টে ফসল উৎপাদন করত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন দিন পাল্টেছে।
একসময় অনেক পাহাড় থাকা সত্ত্বেও যেসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ চাষাবাদ করত না তারা এখন তাদের সব অনাবাদি পাহাড়ে চাষাবাদ শুরু করেছে। ফলে তারা তাদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পাহাড়ে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহ বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। জুমচাষ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মূল পেশা হলেও বর্তমানে পাহাড়ে বিভিন্ন পেশার সমাবেশ ঘটেছে। কেউ কেউ শূকর, হাঁস, মুরগি পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব শূকর, হাঁস, মুরগি তারা তাদের স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই লেক সেই ১৯৬০ সাল থেকেই পার্বত্য জনগোষ্ঠীর মাছের চাহিদা মিটিয়ে সমতলের মানুষেরও আমিষের চাহিদা মিটিয়ে চলেছে। এটি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এ লেক কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এ লেককে ঘিরেই পার্বত্যাঞ্চলে গড়ে উঠেছে কিছু মৎস্যজীবী, যারা এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে তারাও এখন স্বাবলম্বী। এসব মৎস্যজীবী কাপ্তাই লেকে মাছ শিকারের পাশাপাশি পাহাড়েও জুমচাষের কাজ করে। ফলে তারা অধিক অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করেছে। বর্তমানে পাহাড়ও এসেছে পেশার বৈচিত্র্য ফুট ব্লককে অনেকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে এমন কিছু ফুট ব্লগারের মধ্যে রয়েছে রুহিত ব্লগ, এবি ব্লগ, সানমুন ফুট ব্লগ, শুভ চাকমা ফুট ব্লগ ইত্যাদি। এরা নিয়মিতভাবেই যোগাযোগমাধ্যমে ব্লগ করে চলেছে এবং এদের ব্লগগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। এদের দেখাদেখি পাহাড়ে ফুট ব্লগারেট পেশায় এখন অনেকেই এগিয়ে এসেছে। মূলত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষজন স্মরণাতীত কাল থেকেই পাহাড়ে বসবাস করে আসছে। এদের জীবনযাপন পদ্ধতি বেশ কঠিন হলেও এরা পাহাড়ে বসবাস করতেই পছন্দ করে। এদের সমতলে তেমন একটা দেখা যায় না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বেশির ভাগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পাহাড়েই কাটিয়ে দেয়। কালের ধারায় পাহাড়ের জুমচাষের পরিবর্তন এসেছে। একসময় শুধু তাদের জীবন ধারণের জন্য জুমচাষ করলেও শুধু কিছু পাহাড়ে জুমচাষ করত। এখন পাহাড়কে তারা পতিত রাখছে না। প্রায় সব পাহাড়কে বিভিন্ন চাষাবাদের আওতায় এনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা অর্জন করছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীর জন্য এটি একটি ভালো দিক। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে বিধায় তাদের স্বাবলম্বিতা অর্জন দেশের মূল অর্থনীতিতেও প্রভাব রাখছে। পাহাড়ে বসবাসরত সব নৃগোষ্ঠী যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের সব পাহাড়ে জুমচাষসহ সব প্রকার চাষাবাদ নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে অব্যাহত রাখে, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবাক করা উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ায় চমক সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর জুমচাষ দেশের সমতলে বসবাসকারীদেরও নজর কাড়ছে। আশা করা যায় এ জুমচাষই পার্বত্যবাসীদের জীবনমানের উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়