পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

ঈদে বাহারি গয়নায় সাজবে নারী

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ঈদের কেনাকাটার শেষ ধাপে বাহারি গয়না কেনার ধুম পড়ে। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ কিংবা টপস পোশাকের ধরন যেমনই হোক না কেন সঙ্গে ম্যাচ করে গয়না না পড়লে নারীর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না। একুশ শতকের গয়নার ট্রেন্ড এখন নির্দিষ্ট কোনো নকশা বা ম্যাটেরিয়ালে আটকে নেই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এখন ভারী গয়নার চেয়ে হালকা ওজনের মিনিমাল কাজের গয়না পড়েন ফ্যাশনপ্রেমীরা। ফরমিং, অ্যান্টিক ধাতু, পুথি পাথর, কাঁচের তৈরি প্যাটার্ন, ডিজাইন ও গয়নাগুলো যে কোনো ড্রেসের সঙ্গে পড়লে স্মার্ট লুক আসে। ভিনটেজ লুকের আভিজাত্যপূর্ণ আমেজের এই গয়না ঈদ ছাড়াও পরা যায় যে কোনো সময়। তাইতো রূপ সচেতন তরুণীরা এখন মার্কেটে ছুটে বেড়াচ্ছেন পছন্দের গয়নার খোঁজে।
গয়নার দোকান ঘুরে দেখা গেল, আদি আর আধুনিকের মিলন ঘটেছে এবার গয়নার ডিজাইনে। অক্সিডাইজড সিলভারের ওপর আকিক পাথর বসানো গলা আর কানের সেট বেশ নজর কাড়ছে গয়নাপ্রেমীদের। পছন্দ অনুযায়ী আকিক পাথরের মাল্টিকালার কিংবা মনোক্রোম সেটগুলো ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন তরুণীরা। সিল্ক বা এন্ডি সিল্ক শাড়ির সঙ্গে অ্যান্টিকের ব্রাশ গয়না কিনছেন নারীরা। অ্যান্টিকের বাইরে পোর্সেলিন ও সিরামিকের গয়নাও এমন শাড়ির সঙ্গে যায়। কাতান, খাদ্দি জামদানি শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে কিনছেন গলার কানের ফরমিং সেট। ‘টু পয়েন্ট ফোর’ গ্রাম গোল্ড পালিশ করা এই ফরমিং গোল্ডের সেটগুলো পানি পারফিউম না লাগালে পাঁচ থেকে সাত বছর ওয়ারেন্টি থাকায় ফরমিং বেশি বিক্রি হচ্ছে। ডিজাইন ভেদে ফরমিং সেটগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকায়। ফরমিংয়ের পাশাপাশি রঙিন মিনাকারী করা গয়না বেশি কিনছেন নারীরা। এবার সব ধরনের গয়নায় সোনালি আর রুপালির সঙ্গে রঙিন আভা

ছড়িয়েছে লাল-নীল-সবুজ পাথরেরা। রুবি, পান্না, প্রবাল ও মুক্তার অভিজাত উপস্থিতি এবার নজরকাড়া। দোকানিরা জানান, কিছুটা সাবেকি ধাচের গয়নার ওপর মিনা করা বাহারি ডিজাইনের গয়নাগুলো বেশ চলছে। একদম রুপার মতো দেখতে জার্মান সিলভারের তৈরি সিঙ্গেল নেকলেস, জমকালো গলা-কানের সেট, পায়েল ও চুড়িসহ রং-বেরঙের গয়নাগুলো খুব চলছে। এছাড়া মুক্তা, রুবিসহ নানা রকম পাথরের নিখুঁত কারুকাজ করা কানের দুল, লকেট, আংটিগুলোর নকশাতে রাখা হয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ঈদের দিন নিজেকে ভিনটেজ আর মর্ডান লুকের বোল্ড ফিউশন করতে উঠতি বয়সের তরুণীরা ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে ‘ইভ সেট’ কিনছেন। চকার সেপের এই গয়নাগুলোতে অক্সিডাইজড সিলভারকে ব্ল্যাক কোটিং করে বসানো হয়েছে লাল, সবুজ ও গোলাপি পাথর। নানা রঙের উচ্চ মানসম্পন্ন আকিক পাথরের সমন্বয়ে তৈরি এই গয়না যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যাবে।
গলার মালায় বা হারে লেয়ারিংটা এবার বেশি চলছে। লেয়ারিং চলছে চিকন লকেটযুক্ত চেইন, হার, ভারী মালা সবটাতেই। কানের দুলের ক্ষেত্রে লেইস, রঙিন থ্রেডের কানের দুল বেশ জনপ্রিয়। শাড়ি বা আনারকলি ধাঁচের সালোয়ার কামিজের সঙ্গে বিভিন্ন ডিজাইনের বড় ঝুমকা পছন্দ করছেন অনেকেই। ছোট বা টানা দুই রকম নথ খুব চলছে। এছাড়া টানা কানের দুল মেয়েরা নিচ্ছেন লেহেঙ্গা টাইপের ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে।
গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, চন্দ্রিমা ঘুরে দেখা গেল এসব জায়গায় ৪শ থেকে ৮শ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে- দুল, আংটি, চোকার, হার, লকেটের সিম্পল সেটগুলো। আর গর্জিয়াস সেটগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ধাতুর তৈরি কানপাশা, ঝুমকা, খোঁপার কাঁটা ও বালা ২শ ২০ থেকে ৬শ, মেটালের গয়নার সেট ৮ থেকে ১ হাজার ২শ টাকায়। রঙিন সুতা ও কাপড়ের মালা ৬শ থেকে ৯শ, সুতার বালা ১শ থেকে ২শ, কাঠ ও চামড়ার তৈরি গয়না ২শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকায়। জামদানিসহ বিভিন্ন মোটিফের গয়নাগুলো ১শ পঞ্চাশ থেকে এক হাজার ৫শ টাকায়। মুক্তার মালা ও কানের দুলের সেটগুলো পাওয়া যাচ্ছে ১৫শ থেকে ২ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে।
গাউছিয়া মার্কেটের নিচ তলার গলিতে স্বামী ফয়সালকে নিয়ে গয়না কিনছিলেন চৈতি। বাহারি ডিজাইনের কানের দুল (ঝুমকা) দেখছিলেন। এটা না ওটা- কোনটা কিনবেন বুঝতে পারছেন না। একটু পর পরই ফয়সালকে জিজ্ঞেস করছেন ‘এই বলো না, এটা কেমন লাগবে? বেশ কিছুক্ষণ পরে ফয়সাল একটি জার্মান সিলভারের ওপর মিনা করা মাল্টি কালারের একটি লম্বা ঝুমকা নিয়ে চৈতিকে দিয়ে বললেন, এটা নাও তোমার ড্রেসের সঙ্গে খুব মানাবে। চৈতি হেসে দিয়ে দোকানদারকে বলল মামা এটা প্যাক করুন। ৬শ টাকা দিয়ে স্বামীর পছন্দের ঝুমকা কিনে খুব খুশি চৈতি। বললেন, গয়না কেনার জন্য গাউসিয়ার এই গলির দোকানগুলোর তুলনা হয় না। যা চাই সব একসঙ্গে পেয়ে যাই।
ঈদে বাজার অ্যান্টিক ও ধাতুর গয়না বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের রতন ভিউ অ্যান্টিক জুয়েলারিরকর্মী আরিফ। তিনি বলেন, রোজার ১ মাস আগে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান থেকে গয়না এনেছি। এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে চোকার সেট, মিনা করা কানের গলা ও টিকলি সেট এবং জয়পুরী সেটগুলো। আরিফ বলেন, যেমন আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেচা-বিক্রি অনেক ভালো।
আড়ংয়ে পাওয়া যাচ্ছে সোনার দুল, আংটি, নেকলেস, লকেট সেট ও নাককুল। দেশি মোটিফের রুপার দুল, লকেট, বাজু, পায়েল, কানের দুল ও গলার লকেট সেট। বিবিয়ানায় রঙিন সুতা ও ধাতুর তৈরি গলার মালা, কানের দুল, হাতের বালা, চুড়ি ও খোঁপার কাঁটা। দেশালে রয়েছে পিতলের কানের দুল, বাজু, বালা, পায়েল, গলার নেকলেস ও পুঁতির গয়নার সেট। অঞ্জনসে রুপা ও ধাতুর হাতে তৈরি চুড়ি, নেকলেস, কানের দুল, পায়েল, ব্রেসলেট। আড়ংয়ের মগবাজার আউটলেটে রুপার গয়না কিনে বেজায় খুশি শোভা চৌধুরী। তিনি বলেন, সব সময়ই আড়ংয়ের গয়নাগুলো খুব ভালো লাগে। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে কালেকশন কম, শেষ পর্যন্ত কিনতে পেরেছি এতেই ভালো লাগছে।
গুড টুগেদারের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মেহনাজ আহমেদ জানান, মুক্তার সঙ্গে সবুজ পাথর বেশ এলিগেন্ট একটা লুক দেয়। গুড টুগেদারের সিগনেচার কম্বিনেশনও বলা চলে একে। সংগ্রহে আরো রয়েছে, সবুজ ও মেজেন্টা রঙের ফ্লোরাল মোটিফের মিনাকারি সেট। নেকপিসের নিচে আবেদন যোগ করেছে ছোট ছোট মেটাল বল। একদমই ছিমছাম নকশায় তৈরি এই গয়না ঈদ সংগ্রহের ‘হট কেক’ জানালেন ডিজাইনার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়