পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

ঈদপণ্যেও সিন্ডিকেটের থাবা!

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : নতুন কাপড়, জুতা, প্রসাধনী কেনাকাটার পাশাপাশি ঈদের দিনটিতে খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ আয়োজন নিয়েও বাড়ছে ব্যস্ততা। আর সে কারণে ঘরে ঘরে বাজারের আলাদা একটা ফর্দ তৈরি হয়, যেখানে ওপরের দিকেই লেখা থাকে মাংস, পোলাও, ফিরনি, পায়েসের মতো নানা রকম মজাদার খাবার রান্নার উপকরণ।
এদিকে, রোজার দুই- তিন মাস আগে থেকেই বেশি লাভের আশায় পণ্যের দাম বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। অস্থির করে তোলে বাজার। পনের রোজার পর দাম কিছুটা কমালেও এবার তার লক্ষণ নেই। বরং নতুন করে ঈদ পণ্যের ওপর থাবা বসিয়েছে। কারসাজি করে ইতোমধ্যে বাড়িয়েছে দাম। ফলে খুচরা বাজারে সেমাই, পোলাও চাল, ঘি ও মুগডাল এখন থেকেই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দুধ, চিনি ও কিশমিশের দামও বাড়তি। সঙ্গে মসলা পণ্যের দাম যেন আকাশছোঁয়া। ফলে এসব পণ্য কিনতে এখন থেকেই ক্রেতাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে বরাবরের মতো এবারও ঈদপণ্য কিনে ঠকছেন ভোক্তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক মাস রোজা রাখার পর ঈদে সব শ্রেণির মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। নতুন পোশাকের সঙ্গে সামর্থ্য মতো ঘরে ভালো খাবারেরও আয়োজন করা হয়। এতে বাজারে এক ধরনের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ক্রেতার পকেট কাটতে বাড়ায় পণ্যের দাম। প্রতি বছরের মতো এবারো বাজারে সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এক প্রকার নির্বিকার কর্তৃপক্ষ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রোজা-ঈদসহ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলে দেশে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশাহারা করে তোলে। আবার নাজেহাল করে ঈদের আগে। কারণ বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
রোজা ও ঈদ ঘিরে বাজার সার্বিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, অনিয়ম পেলেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এতে রোজার মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। আশা করা যাচ্ছে ঈদের আগে পণ্যের দাম আরো কমবে। এজন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ২০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট চিকন সেমাই ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই ৩০ টাকা বেড়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। বাজারে ২০০ গ্রামের ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকা।
গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা দরে, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকা ছিল। ৪০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট পাস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা, যা আগে ৭৫ টাকা ছিল।
বাড়তি দরের তালিকায় আছে পোলাওয়ের চালও। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৭০ টাকা, যা

এক বছর আগেও ছিলো ১৩০-১৪০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা, যা গত বছর ৭২০-৭৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা গত বছর ১৭০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১১০-১১৫ টাকা ছিল। বাজারে মিলছে ভারতীয় দেশি আর প্যাকেটজাত চিনি, যা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪৫ টাকার মধ্যেই। এছাড়া চিনিশিল্প করপোরেশনের চিনি খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ২০০ গ্রামের মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনছেন। তারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা জিম্মি। রমজানের আগে বেড়েছে রোজায় প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। সেটির প্রভাব কমতে না কমতেই এবার বাড়ছে ঈদ পণ্যের দামও। রোজা-ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতাদের। আর বিক্রেতারা বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বাজারে। তাছড়া উৎপাদন খরচ বাড়ায় দাম বেড়েছে সেমাইসহ অন্যান্য ঈদপণ্যের।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আবু ইউসুফ বলেন, বাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারা কারসাজি করেন। রোজা এলেই পণ্যের দাম বাড়ান। আবার ঈদ আসার আগেও বিক্রেতারা আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করেন। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি হচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
মসলার বাজারেও দামে যেন নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জানা যায়, এক বছরের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ হাজার টাকা। গত বছর যে এলাচ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫৫০ টাকায় সেটির দাম এ বছর ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া গত ৯ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম। গত বছরের জুনে জিরার কেজি ছিল ৭৭০ টাকা। এ বছর মার্চে সেটি ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। দারুচিনির কেজি ছিল ৪৪০ টাকা, বর্তমানে ১৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩২০ টাকা। গত বছর মসলাটি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৮০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স ফরিদগঞ্জ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন জানান, এলাচের দাম এক বছরের ব্যবধানে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। গত বছর এলাচের কেজি ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে পাকিস্তানি কিশমিশের দাম ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকায়, ভারতীয় কিশমিশ ১০০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে। কালো গোলমরিচের দাম ২২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ টাকায়। সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া তার দোকানে দারুচিনি ৬০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৮০০ টাকা, বাদাম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের আরেক বিক্রেতা আলী হোসেন জানান, প্রতি কেজি গুঁড়া হলুদে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, ৪০ টাকা বেড়ে গুঁড়া মরিচ ৪৮০ টাকায়, গুঁড়া ধনে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারটিতে আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২০০ এবং দেশি নতুন রসুন ১২০ টাকা। তেজপাতা ২০০ টাকা, কাঠবাদাম ৩০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার টাকা ও কাজুবাদাম ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও গরম মসলার দাম বেশি একটা বাড়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত মজুত আছে। তারপরও বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এসব পণ্যের দাম কমে অথবা বাড়ে।
খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী আরাফাত জানান, রমজান মাস ঘিরে এবার এখনো সেভাবে মসলা আমদানি হয়নি। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারাসহ নানা কারণে এবার আগের একই সময়ের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ মসলা আমদানি কমেছে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হয় বিধায় এখন একটি এলসির পেছনে অনেক বেশি পুঁজি লগ্নি করতে হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়