পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

আড়াই বছরের কাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও : সুনামগঞ্জের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার বাণ্যিজিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র অন্তরায় তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর উপর শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি টাকার কাজ করে ৬৫ কোটি টাকা বিল উত্তোলন করেও মন্থর গতিতে সেতু নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতু নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরেও চার দফায় কাজের সময় বাড়িয়েও ঠিকাদারকে দিয়ে এ সেতুর নির্মাণ কাজ করাতে পারছে না স্থানীয় এলজিইডি। ফলে জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন স্থানীয়রা।
আরো জানা যায়, দরপত্র কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর তমা কন্সট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয় শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজের। ৩০ মাসে এ কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল কার্যাদেশে। কিন্তু গত ছয় বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথম দফায় নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করে সময় বাড়ায় ১৮২ দিন। দ্বিতীয় দফায় সেতুর প্রকল্পের পরিচালকের (পিডি) নিকট আবেদন করে সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। এরপর তৃতীয় দফায় একইভাবে বাড়ানো হয় ১০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেও কাজ ওই সময়েও শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজই হচ্ছে না। কয়েকজন পাহাড়াদার রয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতি দেখভাল করার জন্য। যাদুকাটা নদী তীরবর্তী গড়কাটি গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা কখনো কাজ বন্ধ করে রাখে, কখনো বা দু-চার জন শ্রমিক লাগিয়ে দেখায় কাজ চলছে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, যাদুকাটা নদী সীমান্ত এলাকার বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেতুটি নির্মিত হলে মেঘালয় পাহাড় ও বারেকটিলার অপরূপ সৌন্দর্য ছাড়াও সীমান্ত এলাকার শাহ্ আরেফিন (রহ) আস্তানা, শিমুলবাগান, ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়ার ধ্বংসাবশেষ, শহীদ সিরাজলেক ছাড়াও সীমান্তের তিন শুল্কবন্দর বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীকে সড়কপথে যুক্ত করবে। সড়কপথে টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছাকাছিও পৌঁছা যাবে। পর্যটকদের সড়ক ভোগান্তি দূর হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি আবুল হোসেন খান বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণকাজে এমন টালবাহনা করছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনাগ্রহী হলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিয়ম অনুয়ায়ী দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ চুক্তি হয় রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে। চার দফা সময় বাড়িয়ে এরা কাজ করেছে দাবি করেছে ৭৪ শতাংশ। অথচ তারা বিল নিয়েছে ৭৮ শতাংশেরও বেশি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাব ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা গার্ডার নির্মাণ করছি। ২০টি গার্ডার ও তিনটি স্পেন নির্মাণের কাজ এখনো বাকি আছে। আমাদের ১১ জন শ্রমিক এখানে শিফটিংয়ে কাজ করছে। সেতুর চার ভাগের একভাগ কাজ বাকি রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন দাবি করেন- সেতুর ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। পানি আসলেও কাজ বন্ধ থাকবে না।এলজিইডি তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল্লাহ খান জানিয়েছেন, এত বড় একটি কাজ যে গতিতে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। তিনি দাবি করে বলেন, পিলারের কাজ শেষ, স্পেন ১৫টির মধ্যে ১২টি হয়ে গেছে, ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৬০টির কাজ শেষ। এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. রনজিত সরকার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর কাজ শেষ করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়