মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

হাইকোর্টের আদেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দুয়ার খুলল > আদালতের আদেশ শিরোধার্য : উপাচার্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের জারি করা জরুরি বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন ও ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ। এদিকে, হাইকোটের এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন, বুয়েটের উপাচার্য ও ছাত্র লীগ নেতারা। তবে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে আন্দোলনকারীরা ছাত্ররাজনীতি বর্জিত ক্যাম্পাসেই তারা নিরাপদ বোধ করেন।
এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি হাইকোর্ট রিট দায়ের করেন। রিটে শিক্ষা সচিব, বুয়েটের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
আদালতের আদেশের পর আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি জরুরি নোটিস জারি করে। নোটিসে ছাত্র সংগঠন ও সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, বুয়েটের এ সিদ্ধান্ত দেশের সংবিধানের ৩৭, ৩৮ এবং ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সমাবেশ করা, রাজনৈতিক দল করা ও বাকস্বাধীনতা আমাদের মৌলিক অধিকার। তবে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স ১৯৬১-এ ভিসি এবং প্রোভিসিকে একটা ক্ষমতা দেয়া আছে, তারা ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এর ফলে তারা মিছিল-মিটিং করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবেন। তবে কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। শাহ মঞ্জরুল হক বলেন, আদালত আমাদের বক্তব্য শোনে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে জরুরিভিত্তিতে জারি করা নোটিস স্থগিত করেছেন এবং এ নোটিস কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি করতে আর কোনো বাধা রইল না।
আরেক সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি থেকে গণতান্ত্রিক ধারা এবং নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে। যেখানে সংবিধানে আমাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত আছে, সেখানে কোনোভাবেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাধা দিতে পারে না। সংবিধান পরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিতে পারবে না জানিয়ে সুজন বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সাধারণ ছাত্রদের ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক উদ্দেশে তারা এটি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। কোর্ট যেটা বলবে সেটি আমাদের মানতে হবে। কোর্টের অবমাননা আমরা করতে পারব না। সেটি করতে গেলে আমাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই করতে

হবে। আমরা আমাদের উকিলের সঙ্গে আলোচনা করব। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী তো আমাদের চলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা তো এই কোর্টকে ভায়োলেট করতে পারব না। ‘অ্যাজ পার ল’ (আইন অনুযায়ী) আমাদের আগাতে হবে। প্রথমে এটি আমরা দেখব এরপর আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলব। তার উপদেশ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুণ্ন না হয়। দুই দিকেই দেখতে হবে।
এদিকে যে কোনো মূল্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালু করতে চায় ছাত্রলীগ। রিটের রায় প্রকাশের পর ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, নেতৃত্ব বিকাশ ও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য সেখানে যেন নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ছাত্ররাজনীতির মধ্যে যদি কোনো নেতিবাচক উপাদান থেকে থাকে, অ্যাকাডেমিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছাত্ররাজনীতি নিশ্চিত করা, গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী ছাত্ররাজনীতির জন্য বুয়েট প্রশাসন যদি কোনো নিয়মনীতি করে যা সংবিধান ও বুয়েট অর্ডিনেন্সের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাব।
এদিকে ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে তারা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন- ‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের উপর’। এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।
রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের আকাক্সক্ষা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা আমাদের ভিসি স্যারের উপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
এর আগে গত ২৭ মার্চ রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন সংগঠনটির একদল নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন। দাবির পর বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আংশিক দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।
এরপর বুয়েট প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রবিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। দুপুর আড়াইটার দিকে প্রায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ফুল দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বুয়েট ত্যাগ করেন তারা। তবে তারা কোনো স্লোগান দেননি। এ সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বুয়েটে জোরালোভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশে সক্রিয় আবরারকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন। সহপাঠী হত্যার প্রতিবাদে টানা আন্দোলন শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সব ধরনের ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়