মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

‘এমন বড় আকারে শিলা অতীতে কখনো দেখিনি’ : ঘুর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড সিলেট ও সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খালেদ আহমদ, সিলেট ও মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হবে এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল আগেই। গত রবিবার সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টিও হয়েছিল সিলেটে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে রাত সাড়ে ১০ টায় আচমকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয় সিলেটে। যা মিনিট দশেকের মতো সময় স্থায়ী ছিল। এ সময় একেকটি শিলা ছিল বিশাল আকারের। এমন শিলাবৃষ্টি অতীতে কখনো দেখেনি কেউ। এমন মন্তব্য করেছেন সিলেটের প্রবীণ বয়োজ্যৈষ্ঠরা। শিলাবৃষ্টিতে হঠাৎ করেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। যেন থমকে যায় মানুষের জীবনযাত্রা।
শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি। অসংখ্য যানবাহণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, প্রবল শিলাবৃষ্টিতে কারো কারো বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাঁচের গøাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলসহ অন্যান্য রবিশস্যেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন তাদের দূরদশার কথা। চৈত্রের শেষে এমন শিলাবৃষ্টিতে বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দিনভর সিলেটে মিলেনি বিদ্যুতের দেখা। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- প্রবল ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সোমবার রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে এর আগে সিলেটে এরকম শিলাবৃষ্টি আগে দেখা যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
সিলেট মহানগরের টিলাগড় এলাকায় ঝড়ে আটকা পড়া বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজ উদ্দিন বলেন, যে বড় আকারে শিলা পড়েছে, তা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি। এত বড় আকারে শিলাবৃষ্টিতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করেন তিনি। শিলাবৃষ্টির সময় সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমদর্শা এলাকায় একটি গ্যাসের রাইজারে আগুন লেগে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এছাড়া জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, সদর, দক্ষিণ সুরমাসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং শতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে গোয়াইনঘাটে প্রায় ২০ হেক্টর ফসলি জমি, সবজি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলি জমি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক রাতেই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে উপজেলা কৃষি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম রানীগঞ্জ পরিদর্শন ও সালুটিকর বাজার মনিটরিং করেন।
এদিকে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, দিরাই, ছাতক, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রবিবার রাতের ঘূর্ণিঝর ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে শত শত মানুষ আহত হন, শত শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ করে প্রচণ্ড ঘূর্র্ণিঝর ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে সুনামগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি সড়কে একটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর একটি গাছ পড়ে চালকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চালক রুয়েল ও যাত্রী সাদ্দামকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর পর সাদ্দামের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া প্রচুর কাচা, পাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে আগাম জাতের ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে বলে জানাগেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু নুইমান জানান, এখনো সব যায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুতের প্রচুর তার ও খুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলমান শেষ করেই যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব জুয়েল মিয়া জানান, প্রচুর যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে প্রাইভেট গাড়িও রয়েছে।
এদিকে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকা। শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যমকর্মী ইয়াকুব শাহরিয়ার জানান, উপজেলার কান্দিগাঁও ও হাজিপাড়ায় অনেকের ঘরের চাল উড়ে গেছে। কারো ঘরের চাল আটকে আছে বৈদ্যতিক খুঁটির উপরে। উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত ঘরের টিন রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দোকানপাটের মালামালের খোঁজ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের একাধিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। গাছের বড় বড় ডালও ভেঙে পড়েছে সড়কে। বসত ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। সবাই মধ্য রাতে স্থানীয় ফার্মেসি ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে আটকা পড়েছিল অসংখ্য দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী আমজদ আলী, ব্রয়লার মোরগের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও ইফতারির দোকানদার লিটন মিয়া বলেন, আমাদের জীবনেও এমন ঘূর্ণিঝড় দেখিনি। সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বেশির ভাগেরই সেহরি খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় হতদরিদ্রদের সংখ্যাই খুব বেশি। তাদের মাথাগুঁজার ঠাঁই নষ্ট হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মানুষকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে হবে। প্রবাসী ও বিত্তশালীরা তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা জানান, ঝড় থামার পর গভীর রাত পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে ছিলাম রাস্তায় পড়ে থাকা গাছপালা সরিয়ে দিয়েছি হাসপাতালগুলো খোলা রেখেছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন জানান, উপজেলার ওপর দিয়ে ও প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টির হয়েছে। সরজমিন ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করার কাজ চলছে।
এদিকে গতকাল সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান এমপি, জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকাস্ত সাহা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিতাংশু শেখর ধর সিতু, সিনিয়র সহসভাপতি সাদাত মান্নান অভি, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসেন, ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন প্রমুখ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ফসলের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, আমরা আমাদের লোকজনকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিতে পাঠিয়েছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পূণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়