মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে মত ভিন্নতা : নমনীয় বার্তা আসতে পারে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভোট এলেই অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হয় বিএনপিকে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে একই অবস্থার মুখোমুখি দলটি। এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন নীতি-নির্ধারকরা। কারণ, একের পর এক ভোট বর্জন, আন্দোলনে ব্যর্থতা, মামলার খড়গ- সবমিলে নেতাকর্মীরা ভুগছেন গভীর হতাশায়। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া কিংবা বর্জন নিয়েও দলের শীর্ষ নেতারা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়েছেন। তৃণমূল নেতাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে দলের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার আগে তারা প্রকাশ্যে এখনই কিছু বলছেন না।
গত ২১ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে চারটি ধাপে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোটে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বিএনপিতে এক ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও দলের তৃণমূলকে এখনো অন্ধকারে রেখেছে বিএনপি। প্রথমধাপের নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার অল্প সময় বাকি থাকলেও নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেনি। অতীতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে যাওয়ায় অনেকের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। এবার এখনো সুনির্দিষ্ট বার্তা না পাওয়ায় দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছেন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা। অতি দ্রুত দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, এখনো সময় রয়েছে। দলীয় কৌশল বুঝে সরকার সতর্ক হয়ে যাবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় নমনীয় হতে পারে দল। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সংগঠন ও তৃণমূলকে আরো চাঙা করতে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ‘কৌশলী’ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনে দলের কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে নমনীয়তা দেখানো হবে। গতকাল সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আরো কিছু সময় নিতে চান নেতারা।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলীয় অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, ‘নো, নেভার’। এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো ভোটেই অংশ নেবে না। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা একটা সিদ্ধান্তে আছি ভোট না করার। সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে তো এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
বর্জন থেকে ভোটে যাওয়ার পক্ষে আলোচনা কেন : দুটি কারণে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির মধ্যে আলোচনা তৈরি হয়েছে। তার প্রথম কারণ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক ছাড়া অংশ নেয়া। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। এ কারণে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের বেশিরভাগ নেতা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে মামলা, গ্রেপ্তার ও আত্মগোপন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে তারা নির্বাচনকেই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা মনে করছেন।
তাছাড়া মুখে স্বীকার না করলেও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থান এবার জোরালো হচ্ছে। বিএনপির পদধারী এবং পদবিহীন অনেক নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জোর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ফলে গত কয়েকদিনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে যুক্তিতর্ক তুলে ধরছেন শীর্ষ নেতারা। ভিন্ন মতও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
শীর্ষ নেতাদের একপক্ষ বলছে, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার কৌশল খোঁজা উচিত। তৃণমূলের এই নির্বাচনে গেলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঙাভাব ফিরে আসবে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে। এসব নেতার যুক্তি- উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, এটি সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। তাদের মূল টার্গেট, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন। সুতরাং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে গেলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের জয়ী হয়ে আসার সুযোগও বেড়েছে। তাছাড়া ফল কী হবে তা পরের বিষয়, নির্বাচনে গেলে সারাদেশের নেতাকর্মীরা আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পাবেন। এতে করে দল ফের চাঙা হবে, যা আগামীতে আন্দোলনের জন্য সহায়ক হবে। এ অবস্থায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে তারা।
কিছু নেতার যুক্তি- বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত দলগতভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রেও নির্বাচন প্রক্রিয়াটি দলের সবার জন্য বিশেষ করে যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। যাতে নির্বাচনে কেউ অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয়া হয়। বিএনপিকে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে সংগঠিত করতে প্রয়োজনে দলের এমন সিদ্ধান্ত অঘোষিত থাকবে। বিএনপির হাইকমান্ড এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে যেতে পারে বলে অভিমত তাদের।
অন্য পক্ষের দাবি- দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জনের মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে গেলে সারাদেশের নেতাকর্মী-সমর্থক ও জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। অনেকেই দলের দ্বিমুখী অবস্থান তুলে ধরতে পারে। তাছাড়া যেখানে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সরকার শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি; সেখানে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো মানেই হয় না। তাছাড়া দ্বাদশ নির্বাচনে ফের প্রমাণিত হয়েছে, সংসদ নির্বাচনের আদলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে সরকার। ফলে এমন নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং এই নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে হামলা-মামলা আরো বাড়বে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আওয়ামী লীগ নৌকা বাদ দিল কেন? ইচ্ছা করে মোটেও না। তারা দেখলেন, নৌকা দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। মানুষ ভোট দিচ্ছে না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন বলেন, আগামী উপজেলা নির্বাচন কীভাবে করবে, সেটা শাসক দল ঠিক করতে পারেনি। তারা স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ করেছে। কিন্তু সেখানেও আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতীক দিলেও মেম্বারদের দেয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কর্মকৌশল প্রণয়নে যুক্ত একজন নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূল খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করতে গেলেও একটি জন্ম নিবন্ধন লাগে, মৃত্যু সনদ প্রয়োজন হয় নানা কাজে; এসব নিতে গেলে বিএনপির কর্মীদের নানা কায়দায় হয়রানি করেন সরকারদলীয় চেয়ারম্যানরা। এক্ষেত্রে কর্মীরা যদি নিজ দলীয় জনপ্রতিনিধি পান; তাদের বুকে সাহস জন্মায়। তাই দলের দুঃসময়ে নিবেদিত প্রাণ তৃণমূল নেতাকর্র্মীদের টিকে থাকার রসদ জোগাতে হলেও বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়া উচিত।
বিএনপির এই নেতার দাবি- এই মুহূর্তে সরকারবিরোধী কর্মসূচিও তেমন নেই। তাছাড়া শুধু সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে তাদের মনোবল চাঙা করা যাবে না। কারচুপি হলেও নির্বাচন সব সময় উৎসবের আবহ তৈরি করে। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে হাজার হাজার নেতাকর্মী সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া নির্বাচনবিমুখ দল রাজনীতিতে হারিয়ে যায়। এবার উপজেলা নির্বাচনে না গেলে যে ভুল হবে তা কাটিয়ে ওঠা বিএনপির জন্য কঠিন হবে।
দলের অনুমতি অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে হাইকমান্ডের রোষানলে পড়তে হবে। এমনকি কারণ দর্শানোর নোটিস ও বহিষ্কার হতে পারেন। এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই কৌশলে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক চেয়ারম্যান, বিগত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অনেকে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন মারফতে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে ভোটে অংশ নেয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তাদের সম্মতি চাইছেন। তবে দলে কোণঠাসা হয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ নেতাদের কেউ কেউ প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই ভোটে লড়বেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কেউ বিজয়ীও হয়েছেন।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সরকারবিরোধী একটি দীর্ঘ আন্দোলন হলেও আমরা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আগে এটার একটা সঠিক মূল্যায়ন হওয়া দরকার। তারপর আমরা কোন পথে যাব- সেটা নতুন করে ঠিক করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় আন্দোলন ও নির্বাচন (স্থানীয় সরকার) একসঙ্গে চলতে পারে কিনা- দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটি এ ব্যাপারে নতুন করে ভেবে দেখতে পারে। তবে সবার ঊর্ধ্বে দলের সিদ্ধান্ত এবং সেটাই চূড়ান্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়