মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিভাজন ফের প্রকাশ্যে : জেরুজালেমে নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েলে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন আবারো প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর এই বিরোধ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও এখন ইসরায়েলের রাস্তায় হাজারো বিক্ষোভকারী নেমে এসেছে। ইসরায়েলের দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিক্ষোভকারীরা এক ধরনের অনড় অবস্থান নিয়েছে।
জেরুজালেমে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের সামনে গত রবিবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ জলকামান থেকে গুলি ও স্প্রে করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেয়। গাজায় বন্দি ১৩৪ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে চুক্তির করার জন্যও তারা আহ্বান জানায়। যদিও জিম্মিদের মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক এরই মধ্যে মারা গেছে। তাদের বন্ধু ও পরিবারগুলোর আশঙ্কা, চুক্তি ছাড়া এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে বন্দিরা তত বেশি মারা যাবে।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। ২৫০ জনের বেশি মানুষকে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়। এই হামলার ঘটনার পর ইসরায়েলের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এদিকে হামাসের সঙ্গে সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
গত বছর একই ধরনের ব্যাপক বিক্ষোভে নেতানিয়াহু সরকারের অবস্থা টালমাটাল হয়ে উঠেছিল। রবিবারের সমাবেশ থেকে সরকার পরিবর্তনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা দুলিয়ে ‘এখনই নির্বাচন দাও’ বলে স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীদের একজন কাতিয়া অ্যামোরজা। তার ছেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন, এখন গাজায় দায়িত্ব

পালন করছেন। এই বিক্ষোভের সময় তিনি হ্যান্ড মাইকে বলেন, আজ সকাল ৮টার পর থেকে আমি এখানে রয়েছি। আমি নেতানিয়াহুকে বলতে চাই, দেশ ছাড়ার জন্য আমি তোমাকে একটি প্রথম শ্রেণির টিকেট দিতে পারলে খুশি হব। তুমি চলে যাও, আর এদেশে ফিরো না। আর সেই সব লোকদের সঙ্গে নিয়ে যাও, যাদের সরকারে বসিয়েছ। তারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষ।
কাটিয়া যখন মাইকে কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার পাশ থেকে ইয়েহুদাহ গিøক নামের একজন ইসরায়েলি ধর্মযাজক যাচ্ছিলেন। তিনি ইসরায়েলি টেম্পল মাউন্টে ধর্ম প্রচার করে থাকেন। জেরুজালেমের এই টেম্পল মাউন্টই মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ।
ধর্মযাজক তখন বলেন, আমি মনে করি নেতানিয়াহু খুব জনপ্রিয়। এটিই মনে হয় বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে বড় ভয়। আমি মনে করি এই বিক্ষোভকারীরা এতদিন তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে, হয়তো নেতানিয়াহু এতদিন ধরে ক্ষমতায় আছে এই সত্য তারা মানতে চান না।
বিক্ষোভকারীরা এবং অন্য দেশের যারা নেতানিয়াহুর সমালোচক তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের শত্রæরা নেতানিয়াহুর সরকারেই আছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিকের ধর্মীয় জায়োনিজম পার্টিও রয়েছে। তাদের দলের একজন সংসদ সদস্য ওহাদ তাল বলেন, হামাসের উপর সামরিক চাপ ছাড়া তারা কখনো বন্দিদের মুক্তি দেবে না। আপনি মনে করবেন না যে হামাস একটি চুক্তিতে এত সহজে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে, সবাইকে মুক্তি দেবে, এটা এত সহজ নয়।
জেরুজালেমে এদিন বিক্ষোভ চলাকালে নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা প্রধান এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বিক্ষোভকারীরা ভুল করেছে, নেতানিয়াহু কখনোই কোনো দায় এড়াননি। ৪০ বছর আগের কথা, ইসরায়েলি রাজনীতিতে তখন নেতানিয়াহু প্রভাবশালী কেউ ছিলেন না। জাতিসংঘে ইসরায়েলের একজন বাকপটু মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারী প্ল্যাটফর্মে একটি ছোট বিজয়ের মধ্য দিয়ে। অসলো চুক্তিতে বলা হয়, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিতে হবে। ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দীর্ঘ বিরোধ নিরসনের একমাত্র আশা ছিল এই চুক্তি।
তবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বরাবরই বিরোধী ছিলেন নেতানিয়াহু। অনেক ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহুই একমাত্র ব্যক্তি যে তার দেশকে নিরাপদ রাখতে পারেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্নির্মাণের জন্য একটি ‘বড় দর কষাকষির’ অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থনের জন্য মার্কিন কৌশলকে অবজ্ঞার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এখন তার সমালোচকরা বলছেন, যুদ্ধের পরে গাজায় শাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনার কঠোর প্রত্যাখ্যান ইসরায়েলের চরম ডানপন্থিদের অব্যাহত সমর্থন নিশ্চিত করার একটি হাতিয়ার।
নেসেটের বাইরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেভিড অ্যাগমন। নেতানিয়াহু যখন প্রথম নির্বাচিত হন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন। ডেভিড বলেন, এটি ১৯৪৮ সালের পরে একটি বড় সংকট। আমি ১৯৯৬ সালে যখন নেতানিয়াহুর প্রথম চিফ অব স্টাফ ছিলাম, তখন থেকেই আমি তাকে চিনি। সেখানে ৩ মাস পরে আমি চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ আমি বুঝতে পারি যে এই নেতা ইসরায়েলের জন্য বিপদ।
এদিকে বিক্ষোভকারীরা যখন রাস্তায় তখনো নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় তিনি রাফায় হামাসের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত।
যদিও হামাসকে ধ্বংস করার ব্যাপারে ইসরায়েলিরা বিভক্ত নয়। সেই যুদ্ধের লক্ষ্যে তাদের সমর্থনও রয়েছে। তবে, যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা হচ্ছে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থতা নেতানিয়াহুকে বেশ চাপে ফেলেছে।
আল-শিফা হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত : দুই সপ্তাহ ধরে আল-শিফা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভেতর অভিযান চালানোর পর গতকাল সোমবার সেটি ছেড়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে চলে যাওয়ার আগে গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিকে তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে রেখে গেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তারা হামাসের অনেককে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য অস্ত্র এবং গোয়েন্দা নথিপত্র পেয়েছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রত্যক্ষদর্শী ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনেক অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে আল-শিফা হাসপাতালে অন্তত ২১ জন রোগী মারা গেছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, হামাস নিজেদের আড়াল করে অভিযান পরিচালনা করতে গাজার বেসামরিক স্থাপনাগুলোকে ব্যবহার করছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়