রিজভী : সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাস নির্ভর হয়ে গেছে

আগের সংবাদ

বুয়েটে হার্ডলাইনে সরকার

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর বাকশালে নির্বাচন ব্যবস্থা

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে বাকশাল গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি। তারপর ২০ এপ্রিল বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে যায়। ঘটনাটি হলো- বাকশাল গঠিত হলে ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করে সংসদ সদস্য পদ ত্যাগ করেন। সে শূন্য আসনে ১৯৭৫ সালের ২০ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তিনজন অংশ নিয়েছিলেন। তারা হলেন- মো. আশরাফুদ্দীন মাস্টার বাইসাইকেল মার্কা, সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম খেজুর গাছ মার্কা ও আব্দুস সাত্তার উকিল মাছ মার্কা। সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছোট ভাই। এদের তিনজনকে বাকশালের পক্ষ থেকে মনোনয়নের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে নির্বাচনী খরচ প্রদান করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনী সভা পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক। একই মঞ্চে বসে তিনজন নিজ নিজ নির্বাচনী বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এ সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। নির্বাচনে আশরাফুদ্দীন মাস্টার বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ বছর মো. আশরাফুদ্দীন মাস্টার ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক-২০২৪-এ ভূষিত হয়েছেন। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হানিফ। প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থার বাইরে এসে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তনের যে উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন তা আজকের দিনেও অভাবনীয় মনে হতে পারে। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির অন্যতম একটি বিশেষত্ব।
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচলিত গণতান্ত্রিক সিস্টেমের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এখানে প্রচলিত ব্যবস্থায় যে কটি বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, এর মধ্যে অন্যতম ছিল নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে চেয়েছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সব ধরনের প্রশাসনিক পদে ইচ্ছুক দলীয় প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করাতে চেয়েছিলেন। কাজেই বঙ্গবন্ধু অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে বাকশাল চালু করলেও তাতে জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্রের সব স্তরের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি গ্রহণ করেন, যাতে দেশব্যাপী গণতন্ত্রায়নের প্রচেষ্টা ছিল। একে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র বলতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি নিয়ে একটা বড় ধরনের সমালোচনা হলো এটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল। তাদের মতে, এর মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা নেই। সমালোচকদের কথা হলো, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছেন। বাস্তবতা না জেনে, না বুঝে এসব সমালোচনা করছে দুর্মুখেরা। বরং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে উল্লেখিত নির্বাচনী ব্যবস্থা অনেক বেশি গণমুখী ছিল। এর মাধ্যমে যে কোনো কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের সেবা করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া বিত্তশালীদের দৌরাত্ম্য থেকে সত্যিকারের রাজনীতিবিদরা রক্ষা পাবে। যা কিনা বর্তমানে গলার কাঁটা হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে প্রদত্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হলে আজ রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকত। এখন নির্বাচন বলতে কালো টাকার দৌরাত্ম্য থাকে। টাকা নেই বলে মনোনয়ন পান না। টাকার কাছে কোনো না কোনোভাবে আমরা আজ জিম্মি হয়ে আছি। মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে এমনটিই ঘটবে। বঙ্গবন্ধুও বোধ করি তা জানতেন। তাই তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মধ্যে বঙ্গবন্ধু সব সময় গণমানুষের মুক্তির সনদ প্রদানের চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর গণমানুষ বলতে কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ ছিল। গণমানুষের মধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও ছিল। এরা মূলত পেশাজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু এদের মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের সমষ্টিগত প্রকৃত ‘গণতান্ত্রিক একনায়কতান্ত্রিক’ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল না। তিনি এর ত্রæটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এ কারণে তিনি সাংবাদিক আবীর আহাদকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে তাতে সংখ্যালঘু ধনিক শোষকদের গণতন্ত্র বলাই শ্রেয়। এর সঙ্গে সমাজতন্ত্রের বিরোধ দেখা দেয় বৈকি। তবে গণতন্ত্র চিনতে ও বুঝতে আমরা ভুল করি। কারণও অবশ্য আছে। আর তা হলো শোষকসমাজ গণতন্ত্র পূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করুক তা চায় না এবং গণতন্ত্রকে কীভাবে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার হাতিয়ারে পরিণত করা যায়, এখানে চলে তারই উদ্যোগ আয়োজন। এভাবেই প্রকৃত গণতন্ত্রকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ অজ্ঞ জনগণই শুধু নয়, তথাকথিত শিক্ষিত সচেতন মানুষও প্রচলিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে বুঝতে অক্ষম। এরা ভাবে যে ভোটাভুটিই হলো গণতন্ত্র। একটু তলিয়ে দেখে না প্রাপ্তবয়স্ক মোট জনসংখ্যার কত পার্সেন্ট ভোট দিল, কোন শ্রেণির লোকেরা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলো, কারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেল, ক্ষমতাসীনরা কোন পদ্ধতিতে তাদের শাসন করছে, সাধারণ জনগণ কতটুকু কী পাচ্ছে। সুতরাং আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি- প্রচলিত গণতন্ত্রের বদৌলতে সমাজের মাত্র ৫ শতাংশ লোকের বা প্রভাবশালী ধনিকশ্রেণির স্বৈরাচারী শাসন ও বল্গাহীন শোষণকার্য পরিচালনার পথই প্রশস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রচলিত গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচ সমাজের নিম্নতম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর শাসন ও প্রভাব প্রতিপত্তি, সর্বপ্রকার দুর্নীতি শোষণ অবিচার অত্যাচার ও প্রতারণায় সমাজের সর্ববৃহত্তম অজ্ঞ দুর্বল মেহনতি কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানবগোষ্ঠীর (শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ) মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। তারা বঞ্চিত হচ্ছে।’ বর্তমানের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুর সেদিনের মূল্যায়নের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আজকের দিনে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলছেন, তারা মূলত বঙ্গবন্ধুর কথাই নিজেদের অজান্তে পুনর্ব্যক্ত করছেন। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতাকে সেদিন এসব বিশ্লেষক মূল্যায়ন করেননি, আজো করছেন না। প্রচলিত গণতান্ত্রিক বৈষম্য আর দুর্নীতিভিত্তিক সমাজ আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনাকে দেউয়ালিত্বের দিকে যে ঠেলে দেয়, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধু এ কারণে বাকশালের দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন। এটা আপাতদৃষ্টিতে একক শাসন মনে হলেও এখানে সামষ্টিকের সার্বিক অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত ছিল। উপরে উল্লেখিত নির্বাচন পদ্ধতি এর পক্ষে অন্যতম উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘প্রকৃত গণতন্ত্র বলতে আমি এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝি, যে ব্যবস্থায় জনগণের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বৃহত্তর কল্যাণের নিমিত্তে তাদের জন্য, তাদের দ্বারা এবং তাদের স্বশ্রেণিভুক্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে তাদেরই প্রকৃত শাসন ও আর্থসামাজিক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়। কিন্তু এ ব্যবস্থা প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে চলে অর্থ সম্পদের অবাধ ও মুক্ত প্রতিযোগিতা। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে এ জাতীয় আর্থপ্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া কোনো প্রকারই সম্ভব নয়।’ এখানে বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বরে দুই মিনিট কাল স্থায়ী গেটিসবার্গ বক্তৃতায় ‘অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’ বলে গণতন্ত্র সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন, এর একটি ব্যাখ্যা তিনি এখানে উপস্থাপন করেছিলেন। আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় যে জনগণের কথা বলেছেন, তারা হলো কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এরাই জনগণের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। তাই আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘জনগণের সরকার’ বলতে বঙ্গবন্ধু কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত শ্রেণির সরকারের কথা উল্লেখ করেছেন। এ সরকার হবে ‘জনগণের দ্বারা পরিচালিত সরকার এবং জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকার’। বর্তমান সময়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কথা যারা বলে আসছেন, তারা বঙ্গবন্ধুর এই নির্বাচনী ভাবনাকে কি গ্রহণ করবেন? আমার জানতে ইচ্ছে করছে, কমিউনিস্ট পার্টি কি এর সমর্থন দেবে? বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, ‘একমাত্র সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিই এদের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কার্যকরী নিশ্চয়তা দিতে পারে- তাদের আর্থসামাজিক মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এজন্য আমি মনে করি প্রকৃত গণতন্ত্রের আরেক নাম সমাজতন্ত্র।’
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন একটি ‘রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করেছিলেন। এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করি। আওয়ামী লীগের উৎসাহী নেতাকর্মীদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে ‘জনগণের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বৃহত্তর কল্যাণের নিমিত্তে’ কাজ করার পথ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা লক্ষ্য করার মতো। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের জয়-পরাজয়গুলো বিশ্লেষণ করলে বঙ্গবন্ধুর এই নির্বাচনী ভাবনার সার্থকতা খুঁজে পাই। এ সংসদে পাস করে এসেছেন এমন অনেক সংসদ সদস্য আছেন, তারা ‘জনগণের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের’ প্রতিনিধি। জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় না, তা এবার বিশেষভাবে উপলব্ধিতে এসেছে। যে সংসদ সদস্য দামি গাড়ির পরিবর্তে সিএনজি নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে আসেন, তিনিই তো বঙ্গবন্ধুর সেই জনগণের ‘স্বশ্রেণিভুক্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি’। এখন শুধু দরকার, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার। যার মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ২০ এপ্রিলের নির্বাচনের মতো রাষ্ট্র নির্বাচন পরিচালনা করবে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে চলে অর্থ সম্পদের অবাধ ও মুক্ত প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে এ জাতীয় আর্থপ্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া কোনো প্রকারই সম্ভব না।’ আজকের বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বঙ্গবন্ধুর এ মূল্যায়ন অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তাই এখন বঙ্গবন্ধু বাকশাল কর্মসূচিতে যে নির্বাচনী ব্যবস্থার কথা বলা আছে, যা এ লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি, তেমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা। তখনই প্রচলিত গণতান্ত্রিক বৈষম্য, শোষণ-দুর্নীতিভিত্তিক সমাজব্যবস্থার বিপরীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দুঃখী মেহনতি মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এর ফলে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে বল্গাহীন সম্পদের পাহাড় গড়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সম্পদশালী কায়েমি স্বার্থবাদীরা বঙ্গবন্ধুর সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে পারেনি। তখন থেকেই তারা বাকশালকে একদলীয় শাসন বলে অপপ্রচার শুরু করে। নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ফলাফল হিসেবে ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে প্রতিবিপ্লবী, সাম্প্রদায়িক কায়েমি স্বার্থবাদীরা বিজয় লাভ করে।

কুমার প্রীতীশ বল : কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়