রিজভী : সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাস নির্ভর হয়ে গেছে

আগের সংবাদ

বুয়েটে হার্ডলাইনে সরকার

পরের সংবাদ

কারা পাকি আর কারা ভারতের দালাল

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমরা এবং আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা কোথায় ঢুকে আছে আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক বক্তৃতা তারই প্রমাণ। অন্যের সমালোচনা করা কোনো রাজনীতি নয়। বরং নিজেদের উন্নয়ন কাজের সমস্যা সংকট ও অগ্রগতি বিষয়ে জনগণকে অবহিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা কী দেখছি? আমরা কী শুনছি প্রতিদিন?
দেশটা দালালে ভরে গেছে। এই দালালদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমি জানতে চাই, ২৫ মার্চ দুপুরে পল্টনে মির্জা ফখরুল মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশ করেছে, একাত্তরে আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি কোথা থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন? একাত্তরে কোন সেক্টরে আপনি যুদ্ধ করেছেন? আমরা জানতে চাই।
২৫ মার্চ বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এরা কারা? এরা পাকিস্তানের দালাল। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া। এ সমাবেশ একটা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ। এখানে মুক্তিযোদ্ধা হাতেগোনা কয়েকজনকে পাবেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা কোনো দিনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। এরা দালাল। এই দালালদের জন্য ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতি আজো পাইনি আমরা।
কাদের আরো বলেন, এই দালালদের জন্য আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য পাওনা আজো পাইনি। পাকিস্তানের নাগরিকরা বছরের পর বছর আমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে আছে। কথা দিয়েও তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়নি। পাকিস্তান আমাদের পাওনা আজো বুঝিয়ে দেয়নি। পাকিস্তান গণহত্যার জন্য একটি বারও দুঃখ প্রকাশ করেনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, সেই পাকিস্তানের যারা দালালি করে তারা আমাদের স্বাধীনতার শত্রæ। বিএনপি পাকিস্তানের দালালি করে, তারা আমাদের শত্রæ। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। জয় বাংলা সেøাগানকে নিষিদ্ধ করেছে। ৭ মার্চ নিষিদ্ধ করেছিল।
একটি বিপুল জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশে দেয়া ভাষণই প্রমাণ করে তিনি কতটা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। তার ভেতরে কতটা রাজনীতি আর কতটা বিষোদ্গার, তা সহজেই বুঝতে পারি। বিএনপির মহাসচিব ১৯৭১ সালে কোথায়, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, সেই প্রশ্নের জবাব তো তিনি চাইতেই পারেন। কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা ভদ্রতা। রাজনৈতিক মঞ্চ তো আর কোনো বৈঠকখানা নয় যে, ওবায়দুল কাদের সেখানে ওই প্রশ্নটি করবেন। এটা সৌজন্য বহির্ভূত এবং অসংস্কৃতজনের আচরণ, তা বলার ও বোঝার অপেক্ষা রাখে না। বোঝা যাচ্ছে ওবায়দুল কাদের কোনো না কোনো কারণে মির্জা আলমগীরের ওপর ক্ষিপ্ত, বিএনপির নামের গন্ধও তিনি সহ্য করতে পারেন না। সেটা কি তারা (বিএনপি) বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার যে অভিযোগ ওবায়দুল কাদের করেছেন, সেই কারণে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে? না কি অন্য কোনো কারণে? তিনি ও তার দল কি বিএনপির ভয়ে ভীত, শঙ্কিত? সেই ভয়টা কী? সেটা কি বিএনপির জনপ্রিয়তা? সেটা কি জিয়ার অবিসংবাদিত মুক্তিযোদ্ধার ইমেজ? সেই মনস্তত্ত্ব জানা জরুরি।
ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক ময়দানে দাঁড়িয়ে এমন ভব্যতাহীন আচরণ করতে সাহসী হলেন কেন সেই সত্য জানা জরুরি। তবে তার আগে সাধারণ মানুষের জানা দরকার যে তখন বিএনপির জন্ম হয়নি।
ওবায়দুল কাদের জানতে চান মির্জা আলমগীর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন নাকি পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিলেন। আমরা সেটা বুঝি। ওবায়দুল কাদেরের তো একটাই রোগ। মুক্তিযোদ্ধা ও তার রাজনৈতিক ইমেজ চেতনা নিয়ে রাজনীতি পরিচালনা করা। এই রোগটি এখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, নকলদের হাতের মোয়া। গত ১৫ বছরে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় উঠেছে এবং সার্টিফিকেটের অধিকারী হয়েছে তারা, যাদের বয়স ৫০ হয়নি আজো। আবার কিছু লোক সার্টিফিকেট পেয়েছে, যাদের বাবা-মা বিয়ে করেছেন স্বাধীনতার ৭ বছর পর। সেই বাবা-মায়ের সন্তানরাও আওয়ামী লীগের সার্টিফিকেট পেয়েছেন এবং বীর বাঙালির অংশীজন হয়েছেন। এই যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনৈতিক পণ্য করে তোলা হলো আওয়ামী চেতনার আলোকে, তারই প্রকাশ্য রূপ কি ওবায়দুল কাদেরের ওই আচরণ ও বাণী? ১৯৭১ সালে যারা জয়বাংলা সেøাগান দিয়ে যুদ্ধ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব থাকার জন্যই সবাই এই সেøাগান দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, জনযুদ্ধের সেইসব কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা-পেশাজীবী মুক্তিপাগল মানুষ সবাই আওয়ামী লীগার ছিলেন বা আওয়ামী লীগ করতেন। তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন নিজেদের রক্ষার জন্য, দেশ রক্ষার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য। যোদ্ধাদের অধিকাংশই ছিলেন দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষ, যারা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক চেতনায়ও বিশ্বাস করতেন যে দেশ স্বাধীন করতে চলে চাই বন্দুকের নল। অর্থাৎ একটি সশস্ত্র যুদ্ধ ছাড়া পাকিস্তানিদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা যাবে না। পরবর্তীকালে, স্বাধীনতার পরপর আমরা দেখতে পেলাম মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে গেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এবং কিছু মুক্তিযোদ্ধা নিশ্চুপ হয়ে যান। যুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ছাত্রলীগের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দিলে একটি অংশ আওয়ামী লীগকে অস্বীকার করে নতুন দল গড়ে তোলে। নাম দেয় জাসদ বা জেএসডি। এদেরই ছাত্রফন্ট (ছাত্রলীগ-জাসদ) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে সংগ্রাম শুরু করে। তাদের হোতাদের মধ্যে ছিলেন আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজসহ সেই সময়কার কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই খেয়োখেয়ির রাজনীতি তো আমরা ভুলে যাইনি। শাজাহান সিরাজ বিএনপিতে এসে মন্ত্রিত্ব করে মারা গেছেন। আ. স. ম রব এরশাদের নির্বাচনে যোগ দিয়ে কপ নেতা হয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে আবারো তার পুরনো দলেই আছেন। অর্থাৎ তিনি এবং জাসদের প্রায় অধিকাংশই একসময় বঙ্গবন্ধুকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য মানেননি। এবং আজো তিনি মানছেন না। অথচ তিনি এবং চার কুতুব এবং অপরাপর সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশ্নে ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। এই তো দিন কয়েক আগে তিনি, আবদুর রব বললেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা চায়নি। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি তো ছাত্রলীগের চার কুতুবের একজন ছিলেন। ওই চারজনের একজনও আওয়ামী লীগে থাকতে পারেননি তাদের রাজনৈতিক জীবনে। তাদের কুকৌশলে বের করে দেয়া হয়েছে। এখনো আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধারা নেতৃত্বের কোনো জায়গায়ই নেই। তাদের পাশে সরিয়ে রেখে যারা নেতৃত্বে আছেন তারা অনেকেই হাইব্রিড নেতা। নেত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ওবায়দুল কাদের তাদেরই একজন। আশীর্বাদ পেয়ে নেতা হওয়াটাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক গণতন্ত্র, যার কোনো ভিত্তি নেই।
বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন ওবায়দুল কাদের, আপনি কি মুক্তিযোদ্ধা? কোথায় যুদ্ধ করেছেন? কোন সেক্টরে, কোন কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন? মুক্তিযুদ্ধকালে তো আপনার নাম শোনা যায়নি- মুক্তিকামী জনগণ, কোনো রেডিও স্টেশন থেকেও তো আপনার কৃতিত্বের কথা বলেনি ১৯৭১ সালে? তাহলে আমরা যারা যুদ্ধের ময়দানে ছিলাম, তারা জানব কেমন করে যে আপনি মুক্তিযোদ্ধা?
আমি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু আমার নামও তো কেউ শোনেননি ১৯৭১ সালে। তবে একটি নাম তো সবাই শুনেছেন, কাদেরিয়া বাহিনীর নাম, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে ‘বাঘা বাঙালি’ নামেও বিশ্ববাসী চিনেছে। টাঙ্গাইলের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের সিদ্দিকী যুদ্ধ করেছেন। আমরা তার বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর ত্রাস ছিলেন এবং কাদেরিয়া বাহিনীর কেচকি মাইরে ‘ছেঁড়াভেড়া’ হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এখন যদি কোনো মানুষ জিজ্ঞেস করেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? কী জবাব দেবেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের? বঙ্গবন্ধুর কথা বাদ দিলাম, তিনি পাকিস্তানি কারাগারে আটক ছিলেন। তিনিও যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না। কিন্তু তাঁর নামেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। শেখ কামাল যুদ্ধে গিয়েছিলেন, কিন্তু ট্রেনিংয়ের পর যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসতে পারেননি, তার আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল।
ধরে নিচ্ছি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তিযুদ্ধে যাননি। তার মানে তো এই নয় যে তিনি রাজাকার বা দেশ বিরোধী ছিলেন। আমি যতটা জানি, সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকাংশই সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেননি। তারা সহযোগী ছিলেন। মুষ্টিমেয় মানুষ যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন করেছে। বঙ্গবন্ধু তো যুদ্ধে রাইফেল ধরেননি, প্রাণও উৎসর্গ করেননি, তাই বলে কি তাকে মুক্তিসংগ্রামের মহান নেতা বলা যাবে না। আর যিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই মেজর জিয়াকে আপনারা মূল্য দেবেন না, এটা আত্মপ্রতারণার শামিল। (কোনো মেজরের বাঁশি ফুঁয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা আসেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যই প্রমাণ করে, মেজর জিয়া কিছু একটা করেছিলেন, যা প্রধানমন্ত্রী সহ্য করতে পারছেন না। যদি কোনো মেজরের বাঁশির ফুঁ-তে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু ও দেশ স্বাধীন নাই হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অত গুরুত্বের সঙ্গে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করার মানে কী? এ-থেকে এটাই প্রমাণ করে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই তাকে নিয়ে এত অপকথা, অন্যায় প্রচারণা। লিজেন্ডকে কখনোই অপবাদ দিয়ে ঢাকা যায় না। যেমন সত্য লুকানো যায় না)। একটি জাতির সত্তা নির্মিত হয় সেই জনপদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনার ভেতর দিয়ে। মেজর জিয়া তার বাইরে ছিলেন না। মেজর জিয়ার মনে স্বাধীনতা দেবার বোধ জাগ্রত হয়েছিল সেই সত্তার তীব্র সংশ্লেষী আবেগ থেকে। তিনি মনেপ্রাণে বুঝতে পেরেছিলেন সময় এসেছে তাকে এ-কাজ করতে হবে। তিনি সেটা নিজ দায়িত্বেই করেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের সশস্ত্র এলাকায় যাওয়ার সামরিক প্রেরণা পেয়েছিলাম জিয়ার ঘোষণা থেকে। বিজ্ঞানী ও শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি এবং হাসিনা একসঙ্গে বসে রেডিওতে জিয়ার ঘোষণা শুনেছিলেন। তবে এসবের আগে আমাদের জাতীয় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আমরা পেয়েছিলাম সাহস ও উদ্দীপনাময় জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়ার রাজনৈতিক মন্ত্রণা ও উদ্দীপনাময় অভিঘাত। যারা এসব রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার প্রবাহ অস্বীকার করবে, তারা কেবল কোনো এক মেজরের বাঁশি ফুঁ-ঘোরে ও চক্রে-চিন্তায় আটকে থাকবে। আর যারা ৭ মার্চের ভাষণকে মৌলিক নির্দেশনা হিসেবে না নেবে ও না বুঝবে, তারাও সেই একই রকম মিথ্যার চক্রের প্যাঁচের মধ্যে পড়ে থাকবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা পরস্পর পরিপূরক। জিয়া কি রাজনৈতিক স্রোতের বাইরে ছিলেন? সামরিক বাহিনীর লোকেরাও যে ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, জিয়ার আই রিভোল্ড শব্দটি সেই রাজনৈতিক আবেগেই বহির্প্রকাশ। তিনি তো পরে, বঙ্গবন্ধুর নামেই তার ঘোষণা আবারো দিয়েছিলেন। সামরিক বাহিনীর লোক ছাড়া যেমন যুদ্ধ করা সম্ভব নয়, তেমনি কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে দেশ স্বাধীন করা যায় না। এ দুইয়ের মধ্যে সম্মিলন হতে হয়, সেটা হয়েছিল বলেই আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক পদে বরণ করে নিয়ে, তার হাতেই ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়েছিল দেশের সামরিক কমান্ড। জিয়ার নামে জেড ফোর্স গঠিত হয়েছিল তার অসামান্য সামরিক দক্ষতার জন্য। আজকে জিয়াকে যতই খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে, ততই রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার পালক যুক্ত হবে তাদের শিরোপরে। আর জিয়া উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবেন। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস কেবল বঙ্গবন্ধু আর জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে নিহিত নয়, আমরা সুদীর্ঘকাল ধরে শোষিত ও নিপীড়িত মানবসমাজের অংশীজন, আমাদের সেই চিরচেনা শোষণ ও বঞ্চনা, নিপীড়ন আর নিগ্রহের ইতিহাসও আমাদের স্বাধীনতার মৌল চিন্তা আর মনোভাবের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে আছে। তাকে হেলা করলে কারো অস্তিত্ব থাকে না, থাকবে না। আমরা সবাই মিলেই এদেশের রাজনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির মালিক।
৫৩ বছর পর স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে যে রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত, তা যে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ব্যর্থতা, তা নিশ্চয় রাজনীতিকরা বোঝেন। আমাদের সময় এসেছে ওই সব খেলো বিতর্ক বাদ দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দুটি বড় রাজনৈতিক দলকেই সব বিরোধ দূরে রেখে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো।
এর বাইরে আর কোনো রাজনৈতিক মুক্তির পথ খোলা নেই। তার মতো অনেক মানুষই মুক্তিযুদ্ধে যাননি বা যেতে পারেননি। আপনার চারপাশে নেতা হয়ে আছেন এমন অনেক নেতাকর্মীও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারেননি। ১৯৭১ সালে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে সামান্যসংখ্যক জামায়াতপন্থি রাজাকার, আল বদর, আল শামস পাকিস্তানিদের সামরিক সরকারের সহযোগিতায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল নগর সমাজে ’৭১-এর ডিসেম্বর মাসে তারা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিকামী বাঙালির প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী, শিক্ষক, অধ্যাপক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজনেতাদের ওপর। আমরা সে কারণেই তাদের ঘৃণা করি।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়