আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

আগের সংবাদ

বাজার তদারকি দৃশ্যমান নয়

পরের সংবাদ

নদী ভাঙনে স্মৃতিসৌধ বিলীন হওয়ার শঙ্কা : শেষ হয়নি বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে : মধ্যনগর উপজেলার মহিষখলা এলাকাটি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাবসেক্টর ছিল। মহিষখলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মৃতিসৌধ ও একটি বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু নদী ভাঙনে যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধটি এবং কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পরেও শেষ হয়নি বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ।
জানা যায়, মহিষখলা বাজারের উত্তরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মহিষখলা সাবসেক্টরের অধীনে স্থাপন করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ জায়গায় ২০১২ সালে স্থপতি রাজন দাসের নকশায় প্রায় ১৮ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ। এতে ব্যায় করা হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এই স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। স্মৃতিসৌধটি পাহাড়ি ¯্রােতস্বিনী মহিষখলা নদীর পারে হওয়ায় পশ্চিম পাশের মূল নকশায় নদী ভাঙনের ফলে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। স্থাপনাটির মূল অংশের মাটি সরে গেছে। এতে যে কোনো দিন স্থাপনাটি ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। তাই স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকবল নিয়োগ এবং পশ্চিম পাশে স্মৃতিসৌধের ভাঙন ঠেকাতে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানান তারা।
এদিকে মহিষখলা স্মৃতিসৌধের পাশে একই স্থানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গায় মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কর্তৃপক্ষ সুনামগঞ্জ জেলা গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু দুই বছর ধরে থেমে আছে এর নির্মাণকাজ। নেই দেখভাল করার কেউ। বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে তা বলতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। আংশিক কাজ করা হলেও তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ফলে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিতরে অবাধে গরু-ছাগল বিচরণ করায় স্মৃতিস্তম্ভটি বর্জ্য ও আবর্জনার ভাগারে পরিণত হতে চলেছে।
বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের বিষয়ে জেলা গণপূর্ত বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এক বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার শর্তে ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দে মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদার সাইদুল ইসলামের মেসার্স সূচনা ট্রেডিং। পরে এই কাজটি বিক্রি করে দেয়া হয় মেসার্স আর বি ট্রেডার্সের কাছে মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে মেসার্স আর বি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হরিপদ দেবনাথ জানান, মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজটি চলমান অবস্থায় এর ডিজাইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি তিনি আমলেই নিচ্ছেন না। তবে বরাদ্দের টাকা ছাড় পেলেই নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস শহীদ বলেন, মহিষখলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধটি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। স্মৃতিসৌধটি রক্ষা করতে হলে এর সংস্কার ও নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ জরুরি। এছাড়া বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি অসমাপ্তভাবে ফেলে রাখায়, এটি দিনে দিনে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। তাই এই বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জোর দাবি জানাই।
বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইকবাল শিকদার বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না পাওয়ায় মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ বয়েছে। আমরা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে এ নিয়ে বারবার কথা বলেছি। অর্থ ছাড় পাওয়া মাত্রই মহিষখলা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
মহিষখলা স্মৃতিসৌধটি নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করার বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে স্মৃতিসৌধ সংস্কার ও নদী ভাঙনের কবল থেকে এটি সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়