নৌপথ ও বন্দরগুলো ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

গুরু পাপের লঘুদণ্ড!

পরের সংবাদ

ধনী-দরিদ্র সেতুবন্ধনে জাকাতের বিধান

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। উন্নয়নশীল দেশের দারিদ্র্যবিমোচন এবং সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নিঃস্ব ও দরিদ্র শ্রেণিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সে কারণেই চিরন্তন ও শাশ্বত ধর্ম ইসলাম জাকাতের ন্যায় একটি ফলপ্রসূ ও কার্যকর বিধানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী রূপরেখা প্রদান করেছে। যা মানব রচিত সব অর্থনৈতিক মতবাদের ওপর ইসলামি অর্থব্যবস্থার সর্বজনীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।
জাকাত নির্ধারণ বণ্টন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কী ভূমিকা পালন করে তা সবার জানার প্রয়োজন আছে। সেটা সমাজে বাস্তবায়ন জরুরি।
জাকাত সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজের অসহায়, গরিব এতিম ও নিঃস্ব লোকদের পুনর্বাসিত করা। এটা এককভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি করে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামি শরিয়া আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাকাত বোর্ড গঠন করেছে।
এটা নির্ভুল ও পরিচ্ছন্নভাবে জাকাতের কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন গুরুত্বের মধ্যে আনা চাই। জাকাত এটি কোনো ধরনের লোক দেখানো বিষয় নয়। ইসলামের অন্যতম ফরজ এ বিষয়টি ধনীদের মধ্যে আদর্শিকভাবে বাস্তবায়ন দরকার। আমাদের দেশে জাকাত প্রদান করার সিস্টেম মোটেও সন্তোষজনক নয়। জাকাত সম্পর্কিত সব ধরনের নির্দেশের মধ্যে রয়েছে জাকাত দুস্থ অনাথ গরিবদের হক। এটি যথাযথভাবে প্রদান করা জাকাত যার ওপর ফরজ হয়েছে, তাকে নির্ভুলভাবে ফরজটি আদায় করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশ ইসলামী খেলাফতভিত্তিক সমাজ নয়, সেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দেশে জাকাত আদায় হচ্ছে না। ফলে জাকাতের বিধান গুরুত্ব বাস্তবায়ন সেভাবে এখনো হয়ে ওঠেনি। এই জন্য সমাজ রাষ্ট্র দায়ী। একটি ফরজ পালনীয় কর্মসূচি সামর্থ্যবান ধনীরা সঠিকভাবে আদায় করছে না। যার কারণে জাকাতের উদ্দেশ্য সমাজে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জাকাতের বিধান সঠিকভাবে ধর্মীয় নিয়মের মধ্যেই বাস্তবায়ন থাকা চাই।
ইসলাম তার জন্য বিশেষ ও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আল কুরআন এ পর্যায়ে কখনো মিসকিনদের খাদ্যদান ও সে জন্য অন্যদের উৎসাহিতকরণের গুরুত্ব দিয়েছে, কখনো আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে ব্যয় ও বণ্টনের কথা বলে উৎসাহিত করেছে। কখনো বলেছে এ হচ্ছে (সাহায্য) প্রার্থী, বঞ্চিত, দরিদ্র, নিঃস্ব পথিকের অধিকার আদায়। কোথাও সুস্পষ্ট ভাষায় জাকাত দেয়ার তাগিদ করেছে। পাশাপাশি এ বিধান লঙ্ঘন ও অমান্য করলে কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়েছে।
একজন নিঃস্ব বা ফকিরকে এমন পরিমাণ জাকাতের অর্থ প্রদান করতে হবে যাতে সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এবং পরবর্তীতে তাকে যেন জাকাতের মুখাপেক্ষী হতে না হয়।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়া বোঝায় যার দ্বারা সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের আশা-আকাক্সক্ষা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে।
অন্য কথায়-সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের সাংস্কৃতিক ভাবধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধনকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বলে।
গোটা দুনিয়ার মুসলিম সমাজে ইসলামের উল্লেখিত নির্দেশ জাকাতের বিধান প্রতিষ্ঠা হলে পৃথিবীর কোনো মুসলিম, দুস্থ ও দরিদ্র থাকবে না। ইসলামের জাকাতের বিধান পৃথিবীর সব মুসলিম দেশের প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি। দারিদ্র্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ধনী মুসলিমদের জাকাতের অর্থ সামাজিকভাবে প্রদান করা দরকার। মুসলমানদের জন্য এটি ফরজ একটি বিষয়। সেই হিসেবে বাস্তবায়নের কর্মসূচি দেশ জাতি ভেদাভেদ ভুলে বাস্তবায়ন করা দরকার। আজকের পৃথিবীতে অনেক মুসলিম দেশ অর্থবিত্তে ধনী। অপরদিকে অসংখ্য মুসলিম দেশের জনগণ অসহায় অনাথ দারিদ্র্য। তাদের জন্য সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক সামাজিক সংগঠন করা যেতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে গোটা পৃথিবী অর্থনৈতিক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। আন্তর্জাতিক জাকাত বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত মুসলিম সমাজকে স্বাবলম্বী করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন হোক।

মাহমুদুল হক আনসারী : লেখক ও সংগঠক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়