ঈদে সাধারণ মানুষ নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে : আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

আগের সংবাদ

চবি-রাবিতে ফিরছে কলেজ

পরের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা, নতুনের সন্ধান আর অবস্থার উন্নয়নের প্রচেষ্টা মানুষের আজন্ম প্রবৃত্তি। জ্ঞানের পরিসরে নতুন জ্ঞানের মাত্রা সংযোজন করতে গবেষণার প্রয়োজন অপরিসীম। গবেষণার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান সমস্যাদির প্রকৃতি ও গভীরতা জানা যায় এবং তার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের পথও বের করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার পীঠস্থান বলা হলেও আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা এখনো আকারে প্রাথমিক স্তরেই আটকে আছে। আর যতটুকু গবেষণা হচ্ছে তার প্রচার ও সম্ভাব্যতার সুযোগ নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে শিক্ষা কতটা উন্নয়নমুখী তা কখনো দেশের নীতি নির্ধারণ বা উন্নয়ন পরিকল্পনায় যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। তবে সর্বস্তরের মানুষের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণার বিকল্প নেই। উন্নত দেশে গবেষণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও আমাদের দেশে তা একেবারেই সামান্য। বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। যার দরুন দেশে উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিয়ে বিশ্বের ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা পাইনি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। যার মূল কারণ শিক্ষা ও গবেষণার ওপর জোর না দেয়া। শিক্ষকের মাঝে যখন শিক্ষা মুখ্য বিষয় না হয়ে বাণিজ্যিকীকরণ ও রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় তখন শিক্ষা হয় ভূলুণ্ঠিত আর শিক্ষার্থীরা হয় নির্যাতিত। পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়ার পেছনের কিছু কারণের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেটের ঘাটতি, গবেষণায় জবাবদিহিতা না থাকা, দুর্নীতি, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি প্রধান। প্রতিনিয়ত রাজনীতির পেছনে সময় দেয়ার ফলে গবেষণায় আর সময় দেয়া হয়ে ওঠে না শিক্ষকদের। পৃথিবীর যে কোনো দেশে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে না। সেখানে আমাদের দেশে পিএইচডি দূরে থাক সাধারণ অনার্স মাস্টার্স শেষ করেই দলীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন থেকে যায়- তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় কী ভূমিকা রাখবে?
ইউনেস্কোর পরামর্শ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে ১.৭৬ শতাংশ ব্যয় করা হয় এই খাতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে আমাদের দেশে শিক্ষায় বরাদ্দের হার সবচেয়ে কম। আবার যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকে তার বেশিরভাগই অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতায় চলে যায়। গবেষণায় বরাদ্দ নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা অগ্রাধিকার না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অকার্যকর উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আহরিত জ্ঞান কতটুকু উন্নয়নমুখী তা কখনো উন্নয়ন পরিকল্পনার অগ্রাধিকার পায়নি। আমাদের কতজন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যবস্থাপক লাগবে- তা হিসাব না করেই যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। আবার সেই অনুযায়ী শিক্ষা কারিকুলামও তৈরি হচ্ছে না। বর্তমানে উচ্চশিক্ষা আবর্তিত হয়েছে শুধু সরকারি চাকরি কিংবা কোম্পানির চাহিদাকে কেন্দ্র করে। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হলেও তার প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই বললেই চলে।
কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উপযুক্ত সংখ্যক মানসম্পন্ন গবেষণা না হওয়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ইউজিসিও গবেষণা কাজে নানা রকম উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও গবেষণা না হওয়ার পেছনে শিক্ষার চেয়ে মুনাফা ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তিকেই অনেকে দায়ী করছেন।
আমাদের মানবসম্পদের মান সুউচ্চ। ইউরোপ আমেরিকার এমন কোনো নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যেখানে বাংলাদেশি গবেষক নেই। এরা সবাই বাংলাদেশ থেকে ব্যাচেলর শেষ করেই যান। তাহলে একই মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গেলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পারছে না- এ বিষয়ে কারো কোনো ভ্রƒক্ষেপই নেই। বর্তমান প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের নতুন জ্ঞান ও ধারণার জন্ম হবে। শিক্ষা উন্নয়নের কথা চিন্তা করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষাদান ও গবেষণা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জ্ঞান বিতরণের আগে প্রয়োজন জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞান আহরণ। যা সম্ভব হয়ে উঠে গবেষণার মাধ্যমে। গবেষণায় বিনিয়োগ কখনো অপচয় নয়। গবেষণা ব্যয়বহুল এবং এর ফল প্রাপ্তি দেরিতে হলেও গবেষণায় বিনিয়োগ কখনো ব্যর্থ হয় না।

আইরিন হাসান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়