ঈদে সাধারণ মানুষ নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে : আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

আগের সংবাদ

চবি-রাবিতে ফিরছে কলেজ

পরের সংবাদ

ঢাকার ফুটপাত কার স্বার্থে

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার ইতিহাস বহু প্রাচীন। ইতিহাসবিদের মতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন। যদিও তার বহু আগে ঢাকার গোড়াপত্তন হয়েছিল। ১৮৮৪ সালে পৌর আইন বিধি (০৩) এর বিধান রেখে মোট ১৪ জন কমিশনার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা পৌরসভা গঠন করেন। তখন ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৮২ হাজার ২১০ জন। আয়তন বলতে বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলিকেই বোঝাতো। সেই বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে আজ অনুমানিক বায়ান্ন হাজার বাজারে পরিণত হয়েছে। আর গলির সংখ্যা যে কত হবে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। ঢাকার মাটিতে এখন ২ কোটি মানুষের বসবাস। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকরি ও বিনোদন এসব কারণে ঢাকায় মানুষের চাপ দিন দিন বাড়ছে। দলে দলে মানুষ ছুটে আসছে গ্রাম থেকে এই শহরে। বাংলাদেশের রাজধানী কিন্তু ঢাকাই রয়ে গেছে উত্তর-দক্ষিণ নয়। দুই সিটির প্রশাসনিক কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করেও নাগরিক সেবার মান আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়নি। বিশেষ করে জনজীবনের সুশৃঙ্খলা ফুটপাত সড়কপথ লেন বাই লেন পাড়া মহল্লাগুলোর চিত্র সে কথাই বলছে। নগরবাসী ঘর থেকে বের হলেই বিশেষ কয়েকটি সমস্যায় পতিত হয়- বিশেষ করে বর্জ্যরে বাগার, রিকশার উপদ্রব, ফুটপাতে হকারদের দৌরাত্ম্যের কারণে। ঢাকায় এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে রিকশা-ভ্যানের জ্যাম ও ফুটপাতে হকারদের যন্ত্রণা নেই। অর্থাৎ রাস্তায় বের হলেই চারপাশে শুধু রিকশা আর রিকশা। একসময়কার মসজিদের শহর ঢাকা এখন রিকশার শহরের খ্যাতি অর্জন করেছে। অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে বৈধ রিকশার পরিমাণ ১ লাখ আশি হাজারের মতো। সেখানে অবৈধ লাইন্সেসবিহীন রিকশার সংখ্যা ১২-১৫ লাখের কম নয়। রিকশা, ঠেলা, ভ্যানগাড়ি এই ধীরগতির যানগুলো দ্রুতগতির যান চলাচলের রাস্তায় থাকার কারণে একদিকে যেমন রাস্তায় জ্যামের সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়ে যায়। জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে একান্ত যদি রিকশাকে রাখতে হয় তাহলে সিটি করপোরেশনের বিধিবিধানের মধ্যে থেকেই সুশৃঙ্খলার সঙ্গে চলার ব্যবস্থা করা উচিত। যেমনটা হয়ে থাকে একই শহরে উত্তরা বারিধারা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। এবার ফুটপাত প্রসঙ্গে দৃষ্টি দেয়া যাক। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় নগরে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার সড়কপথের প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে ৬৪১ দশমিক ৫১ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৩৯ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সড়কপথ ও ৩২৫ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। খেলার মাঠ রয়েছে মাত্র ২৩টি, উদ্যান রয়েছে ৭টি। যা একেবারেই চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। প্রায় ৭০ ভাগ রাস্তায় কোনো ফুটপাত নেই। তবে পর্যাপ্ত ফুটপাত না থাকলেও ফুটপাতগুলো আগের তুলনায় অনেকটা ভালো। যেসব রাস্তায় নতুন ফুটপাত নির্মাণ অথবা সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে সেখানেই বেশি করে হকার দখলে চলে গেছে। এতদিন যারা ভাঙাচোরা ফুটপাতের ওপর দোকানদারি করত এখন তারা পরিপাটি রাস্তার ওপর নির্বিঘেœ ব্যবসা করছে। জনগণ ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারল কি পারল না তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। হকারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় যে, এতদিন তারা যে পরিমাণ চাঁদা দিত এখন তারচেয়ে বেশি গুনতে হয়। তারা সরকারকে কোনো কর প্রদান না করলেও প্রতিদিন চাঁদা ঠিকই দিচ্ছে। আর ওই চাঁদার টাকা চলে যায় স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, অবৈধ হকার সংগঠন ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির হাতে। হকাররা এদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করেই ফুটপাতে ব্যবসা করেন। যে কারণে সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের তারা কোনো পাত্তাই দেয় না। ফলে হকার ও পথচারীদের মধ্যে অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতি বছরই নগরবাসীর ওপর বিভিন্ন করের বোঝা বেড়েই চলছে। আর সেই টাকায় তৈরি করা রাস্তা থাকবে হকার দখলে- এটা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এই মেগা সিটি ঢাকায় অসংখ্য নাগরিক সমস্যার মধ্যে ফুটপাত ও সড়কপথগুলো হকারমুক্ত রাখা এখন নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি। মাঝে মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি রাজউক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হকারমুক্ত করলেও কয়েক দিন পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। তাই উচ্ছেদ অভিযানই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারবে না। এখন আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেকেই চায় একটি মনোরম পরিবেশে হাঁটাচলা করতে। এজন্যই প্রবাদে আছে- সব ব্যায়ামে মিলে যত হাঁটায় মিলে তার শত। তাই নিয়মিত হাঁটা এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি অংশ। ঢাকা যেহেতু দেশের রাজধানী শহর, সব কর্মকাণ্ডই ঢাকাকেন্দ্রিক। দেশের মোট জাতীয় আয়ের ৪০ ভাগই রাজধানী থেকে আসে। সেহেতু দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এই নগরের ভূমিকা অপরিসীম। অতএব একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক মেগা সিটিগুলোর সঙ্গে সমান তালে চলতে হলে শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দখল দূষণের মতো মানবজীবন সংহারকারী সমস্যাগুলো দূরীকরণে ঢাকার দুই সিটিকেই সবার সঙ্গে সমন্বয় করে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। যে সরকার ও তার প্রধানমন্ত্রী মাত্র ১৫ বছরে একটি অনুন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে পেরেছে, সেই সরকারের নগর পিতাগণও পারবেন নগরবাসীর স্বপ্ন পূরণে একটি বাসযোগ্য সবুজ নগরী উপহার দিতে; এমন প্রত্যাশা অমূলক নয়।

গোরা বিশ্বাস : লেখক ও পরিবেশকর্মী, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়