রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের তদন্ত কমিটি গঠন : ল্যাবএইড হাসপাতাল

আগের সংবাদ

জলদস্যুদের সাড়ার অপেক্ষা : জাহাজে খাবার আছে ২০-২৫ দিনের > অতীত অভিজ্ঞতায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তির আশা

পরের সংবাদ

ইফতারি প্রদর্শনের সামগ্রী নয়

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বোধহয় ভুলে গেছেন, রোজাদারকে ইফতারি করানোর মধ্যে পুণ্য! তবে দেখানোর মধ্যে কী পাপ? জানি না। আপনার বাসায় কী কী খাবার তৈরি করলেন সেটা দেখানো অনেকটাই অরুচিকর ব্যাপার! কাউকে দেখাতে মন চাইলে তাকে পার্সোনালি দেখাতে পারেন। যেহেতু সুযোগ আছে! আপনি যা যা তৈরি করেছেন তা যদি আমার ইফতারির মেন্যুতে না থাকে, আমার সামর্থ্যে না কুলোয় এবং তাতে আমার যদি মন খারাপ হয়, যদি লোভ জন্মে, যদি নিজের ওপর ধিক্কার আসে তবে সেই দায় আপনার ওপরে বর্তাবে!
কেবল রমজানেই নয় বরং কখনই খাবারের ছবি-ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করা কিছুটা আপত্তিকর ব্যাপার! তাও দু’একবার বিশেষ অ্যাকশনে এটা করা যেতে পারে, কিন্তু কেউ যদি খাদ্য বিক্রেতা না হয় তবে রোজ রোজ খাবারে ছবি পাবলিক পরিসরে প্রদর্শন না করাতেই কল্যাণ। নিশ্চয়ই যারা শাকপাতা দিয়ে খেতে বাধ্য হয় তারা তাদের অক্ষমতার হালতকে দেখিয়ে বেড়ায় না! যারা নিজের রান্না করা খাবার দেখায় তারা এই সমাজের বিত্তশালী! কখনো কখনো স্বাভাবিক প্রদর্শন অহংকারের পর্যায়ে উপনীত হয়। হয়তো অজ্ঞাতেই হয়। মনের মধ্যে জটিলতা নেই তারপরও এটা হতে পারে! সুতরাং সতর্কতাই তো বিবেকের সৌন্দর্য!
সিয়াম মানে সব ইন্দ্রিয়ের পানাহার থেকে বিরত থাকা। আমার লোভের সঙ্গে যেসব ইন্দ্রিয় সরাসরি জড়িত সেগুলো যদি আপনার প্রদর্শনীকৃত খাবারের লোভে জাগ্রত হয় তবে সে দায় আপনার। যেখানে ভুখা মানুষের দেখা মেলে, যেখানে আমিষহীন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এবং যেখানে সামর্থ্যহীন মানুষ খাদ্যের জন্য লড়াই করছে সেখানে আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য তো দূরের কথা, ইফতারির আগে-পরে শরবত কিংবা বেগুনির ছবি দেখানোও বিবেকহীনতার পরিচয়!

দুই.
এই রমজানে মোটামুটিভাবে খেজুর বর্জন করেছি! বাজারে গিয়ে বুঝলাম যা যা বর্জন করা দরকার সেসবের সব বর্জন করলে আমি একা হয়ে যাবে! রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসিত। তবে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অসাধু ব্যবসায়ীদের লম্বা হাতের ক্ষমতা এবং এক মাসেই পুরো বছরের লাভ ভাগিয়ে নেয়ার মানসিকতায় সাধারণ মানুষ অনেকটাই জিম্মি! ধরপাকড় হলে বুঝতে পারি, এলাচিতে ডবল ব্যবসা করছে, আগুন লাগলে জানতে পারি এক কারখানায় কী পরিমাণ চিনি মজুত ছিল! উৎপাদক উৎপাদন খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে এবং ভোক্তার বাজারের ব্যাগ হাতে দেহ-দিল কাঁপছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, রমজানে শয়তানকে শৃঙ্খল বদ্ধ করে রাখা হয়! অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড দেখে দুষ্টু জনগণ বলে, রমজানে শয়তানকে অসাধু ব্যবসায়ীদের পিঠের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়! নয়তো অমুসলিম দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও রমজান মাসে সীমিত পরিসরে মুনাফা করে পণ্যের সহজলভ্য নিশ্চিত করে আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মানসিকতাতেই থাকে কীভাবে রাতারাতি ভোক্তার পকেট কেটে হরিলুট করা যায়! এত এত সম্পদ জমিয়ে শেষ আশ্রয় কোথায়?

তিন.
সব হতাশার মধ্যে আশার কথা আছে, কেননা কিছু ভালো মানুষ এখনো বেঁচে আছে। ফ্রিতে সেহরি খাওয়ানো, রমজানজুড়ে টনকে টন দুধ ১০ টাকা কেজি দরে রোজাদারের কাছে বিক্রি করা, সারা মাসে গরু জবাই করে কোনো লাভ ছাড়া মাংস বিক্রি করা, ১ টাকা লাভে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা, লাখ লাখ মানুষের কাছে বিনামূল্যে ইফতারি পৌঁছে দেয়ার মতো মহৎকর্ম কতিপয় মহৎপ্রাণ মানুষ কর যাচ্ছে। এখানেই তো মানবতা। সারা বছর তো ব্যবসা চলছেই। এই পবিত্র মাসে লাগামহীন ব্যবসা থেকে নিজেকে বিরত রেখে অল্প লাভে কিংবা লাভহীন পদ্ধতিতে যারা রোজাদারদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনেন তারা জনতার চোখে ক্ষতিগ্রস্তদের কাতারভুক্ত হতে পারে কিন্তু রাজাধিরাজের বিচারালয়ে তাদের মতো লাভবান আর কেউ নয়। ভালো আমল একদিন পাথেয় হয়ে দাঁড়াবে। রমজানের কল্যাণ আমাদের আত্মাকে পবিত্রতায় ভরিয়ে রাখুক। শুভর জন্য আমৃত্যুর লড়াইয়ে টিকে থাকার সামর্থ্য খোদায়ি বারাকাতে আসুক।

রাজু আহমেদ : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়