ডা. মোদাচ্ছের আলী : বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে

আগের সংবাদ

বাজারের আগুনে রোজার আঁচ

পরের সংবাদ

জলবায়ু রাজনীতি

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে জলবায়ু অন্যতম। বিভিন্ন স্থানে ক্রমাগত আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনও স্বাভাবিক; কিন্তু এই জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীবাসীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। গত শতাব্দী থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসলেও এর সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ তেমনটা নেয়া হয়নি। এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। এটি প্রথম রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে আলোচনায় আসে ১৯৭০-এর দশকে। তবে ১৯৯০-এর দশক থেকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এজেন্ডায় সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে জলবায়ু সমস্যা নিরসন ততটা সহজ নয়, এটা একটি জটিল বৈশ্বিক সমস্যা। গত শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে জীবাশ্ম জ্বালানি। বর্তমানে উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় শিল্প উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে তেল, গ্যাস ও কয়লা। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উন্নয়নের প্রায় ২০০ বছরের এই ধারা বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোকে উন্নতির চরম শিখড়ে পৌঁছে দিলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সারা পৃথিবীতে, যা বর্তমানে অনুন্নত ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ফেলেছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে। উৎপাদন কারখানা থেকে নির্গত কার্বন পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে, যার ফলে আর্কটিকের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে পৃথিবী সুরক্ষাকারী ওজন স্তরেও ধরেছে ফাটল। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টির পাশাপাশি উষ্ণতাও বৃদ্ধি করছে ক্রমাগতভাবে। এরকম চলতে থাকলে সমুদ্র্র-তীরবর্তী দেশগুলো পড়বে ব্যাপক ঝুঁকির মুখে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে অনেক দেশের জমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক এখন বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট। এর ফলে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ধারায়ও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে দেশগুলোয় কোনো ব্যবসায়িক বা উন্নয়নমূলক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তির বিষয়বস্তুতে পরিবেশগত দিকের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার কথা বলেছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সর্বোচ্চ সংস্থা ‘ইন্টার গভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ’ (ওচঈঈ)। তাই এখন রাষ্ট্রগুলোর মাঝে কূটনৈতিক, ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে কোনো ধরনের সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব বিবেচনায় রাষ্ট্রগুলোয় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উন্নয়নসহ দূষণ রোধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে প্রবেশ করেছে। তবে সমস্যা হলো অধিকাংশ চুক্তিতেই সব রাষ্ট্র একমত হতে পারেনি। চুক্তিবদ্ধ হলেও অনেক রাষ্ট্র চুক্তির অঙ্গীকারগুলো অনেকাংশে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রগুলোর মাঝে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের বিভেদ, যা জলবায়ু রাজনীতিকে ইঙ্গিত করে। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কথা উদাহরণ দেয়া যায়। বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্র এই চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছিল, কিন্তু তারপরও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র উক্ত চুক্তি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। এর সপক্ষে তিনি যুক্তিও দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া ওই চুক্তির ভবিষ্যৎকে অনেকাংশে অনিশ্চিত করে তোলে, যা জলবায়ু রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব, সুবিধা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত হুমকির কারণে প্রাথমিক জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে খুব সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল। যেখানে সাধারণ উদ্দেশ্যে বিবৃতি এবং উন্নত দেশগুলোর অবাধ্যতামূলক নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রæতি ছাড়া খুব একটা বেশি কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাই কালবিলম্ব না করে সবার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তাহলে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত হুমকি থেকে বিশ্ব পরিত্রাণের পথ আবিষ্কার করতে পারবে।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়