ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীরে : কলকাতায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

সমন্বয় নেই ভবন তদারকিতে : আইনের ফাঁক গলে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন > রাজউকের নকশা মেনেই সেবা সংযোগ দেয়ার পরামর্শ

পরের সংবাদ

সেই চিঠি যাবে কোন ঠিকানায়

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

৪০ বছরেরও বেশি সময় বলিউড মাতিয়েছেন পঙ্কজ উদাস। গেয়েছেন ৭০০-এর বেশি গান। শিল্পী হিসেবে তৈরি হওয়ার গল্পটা ছিল অন্যরকম। সংগীতে প্রাথমিক শিক্ষা নেন সাত বছর বয়সে তার পিতার কাছে। এরপর গুলাম কাদির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন পঙ্কজ। পরবর্তীকালে গোয়ালিয়র ঘরানার জনপ্রিয় শিল্পী নবরং নাগপুর করের কাছে তালিম। শুরুটা ছিল তবলা দিয়ে, পরে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়টা হলো ৯০-এর দশক। এ সময়টা ছিল দেশের ব্যান্ড সংগীতের বিকাশ ও শ্রোতাদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সফল সময়। ’৮০-র দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ব্যান্ড শো’ আর ৯০ দশকের শুরুতে অডিও অ্যালবামের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যান্ডদল গড়ে ওঠে, যাদের গান শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। পঙ্কজ উদাসের সঙ্গে এ দেশের ব্যান্ড সংগীতের সম্পর্ক কোথায়? এমন প্রশ্ন হয়তো আসতেই পারে। ওই সময় পাড়া মহল্লার ভিসিআর ভিসিপির দোকানের কল্যাণে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তাও কম নয়। কলকাতার বাংলা ছবির গানগুলোর পাশাপাশি হিন্দি ছবির গানও গাইতে শোনা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা পথ চলতি মানুষের কণ্ঠে। ঠিক ওই সময় ১৯৮৬ সালে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘নাম’ ছবিতে পঙ্কজ উদাসের গাওয়া ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি দিয়ে তাকে চিনতে শুরু করে এ দেশের মানুষ। পেছন পেছন ১৯৯১ সালে ‘সাজন’ ছবির ‘জিয়ে তো জিয়ে’ গানটি তাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শিখরে।
শিল্পী পঙ্কজ উদাসকে চিনতে জানতে হলে যেতে হবে একটু পেছনে। সময়টা ১৯৬২ সাল, ১০ বছরের এক বালক জেনে বা না জেনেই চীন-ভারত যুদ্ধের সময় গানকেই অস্ত্র হিসেবে তুলে নিয়েছিলেন। দাদা সংগীত শিল্পী মনোহর উদাসের এক অনুষ্ঠানে প্রথমবার সংগীত পরিবেশনের সুযোগ পান পঙ্কজ উদাস। চীন-ভারত যুদ্ধে নিহত শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতেই কবি প্রদীপ এবং সংগীত পরিচালক সি রামাচন্দ্র তৈরি করেছিলেন ‘অ্যায় মেরে বতন কে লোগো’ গানটি। লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে শোনা সেই গান বছর দশকের বালকের কণ্ঠে শুনে মুগ্ধ হন উপস্থিত শ্রোতারা। তারা ৫১ টাকা পুরস্কার তুলে দেন শিশুশিল্পীর হাতে।
বাবা কেশুভাই উদাস, মা জিতুবেনের তিন সন্তানের মধ্যে পঙ্কজ উদাস সবার ছোট। জন্ম ১৯৫১ সালের ১৭ মে গুজরাটের জেটপুরে। শৈশবেই সন্তানদের মধ্যে সংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখে রাজকোটের সংগীত অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন তাদের বাবা। সবাই পরবর্তী জীবনে সংগীত দিয়ে শক্ত জীবনের অঙ্ক মেলান। বড় ভাই মনোহর উদাস ছিলেন হিন্দি ছবির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী। পঙ্কজের চেয়ে বড় নির্মল উদাস বিখ্যাত হন গজল গায়ক হিসেবে। তবে খ্যাতিতে বড় দুই ভাইকে ছাপিয়ে যান পঙ্কজ।
৪০ বছরেরও বেশি সময় বলিউড মাতিয়েছেন পঙ্কজ উদাস। গেয়েছেন ৭০০-এর বেশি গান। শিল্পী হিসেবে তৈরি হওয়ার গল্পটা ছিল অন্যরকম। সংগীতে প্রাথমিক শিক্ষা নেন সাত বছর বয়সে তার পিতার কাছে। এরপর গুলাম কাদির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন পঙ্কজ। পরবর্তীকালে গোয়ালিয়র ঘরানার জনপ্রিয় শিল্পী নবরং নাগপুর করের কাছে তালিম। শুরুটা ছিল তবলা দিয়ে, পরে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। জনপ্রিয় হয় তরুণ পঙ্কজ উদাসের ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো অ্যালবামগুলো। ‘চান্দিজ্যায়সা রঙ্গ’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারোঁ সে মিল কর রোনা’, ‘আহিস্তা’ পঙ্কজের গাওয়া গজলগুলো আজো শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। হিন্দির পাশাপাশি বাংলার কেউ না হয়েও এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ স্থান করে আছে তার বাংলা গজলগুলো। ‘যায়রে চলে যায়’, ‘তুমি খাঁচা হলে আমি হব পাখি’, ‘কত স্বপ্ন দেখেছি, কত ছবি এঁকেছি’, ‘তোমার চোখেতে ধরা’, চোখ তার চোরাবালি, ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’ গানগুলোর জনপ্রিয়তা পঙ্কজ উদাসকে করেছে গজল কিং।
যে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ছিল তার নিরন্তন সংগ্রাম, সেই ক্যান্সারের কাছেই পরাস্ত হলেন তিনি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ৭২ বছর বয়সে থামল তার সুরের সফর। চিরবিদায় নিলেন সুরের জগত থেকে। না ফেরার দেশে চলে যাওয়া পঙ্কজ উদাস দেশ-বিদেশের একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ২০০৬ সালে পেয়েছেন ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মাননাও। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি ছিল শ্রোতাদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠা। কেননা পঙ্কজ উদাস সেই শিল্পী, যিনি জগজিৎ সিংয়ের পরে গজলকে সাধারণ শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলে ছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে যখন ছিল অ্যালবামের ট্রেন্ড তখন পঙ্কজ উদাসের গানের সংগ্রহ ছিল সংগীতপ্রেমী প্রতিটি তরুণ-তরুণীর ঘরে। কল্পনার জগতে ভাসিয়ে সেই সময়ের তরুণ কিশোরদের। তাইতো তার মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়াতে যে পোস্ট হয়েছে তার বড় একটা অংশই সমসাময়িক সময়ের। কারো কারো কাছে তা ছিল নস্টালজিক কিশোরবেলা।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়