প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে : বিচারপতি বোরহান উদ্দিন

আগের সংবাদ

রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা মার্চেই

পরের সংবাদ

বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের স্মারক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম নিদর্শন তার ভাষা। যদিও বিবেক, বুদ্ধি, বিচার, বিবেচনা ও চিন্তাশীলতা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু এসবই তার ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।
আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ভাষার জন্য জীবন দেয়া জাতি আমরা। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতি তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। এছাড়া এ আন্দোলন বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের পরিচিতি ঘটে। বাংলা ভাষা আমাদের পরিচয়। আমাদের অহংকার। এই ভাষা আমাদের অস্তিত্ব।
ভাষিক পরিচয়ে পরিচিত জাতির দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই- মধ্যপ্রাচ্য বা আরব বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো যাদের ভাষা আরবি, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যাদের ভাষা ইংরেজি, ফ্রান্স বা ফরাসিরা ফার্সি ভাষার পরিচয়ে পরিচিত, হিন্দি ভাষায় কথা বলা মানুষদের আমরা ইন্ডিয়ান জানি। চীন, জাপান, পর্তুগাল ইত্যাদি রাষ্ট্র তাদের ভাষার মাধ্যমেই সমধিক পরিচিত।
ভাষার সংজ্ঞা থেকে আমরা মানুষের পরিচয়ের সূত্র আবিষ্কার করতে পারি। অর্থাৎ ভাষার মাধ্যমে মানুষ তার পরিচিতি লাভ করে। জাতীয় পরিচয়ের মূল উপাদানই যে ভাষা, তা মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে জন্মস্থান ও ধর্মের গুরুত্বের ওপর দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে আরো বিভক্ত করে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মে পর্যন্ত ২৩টি দেশের ২৮ হাজার ২৫০ জন মানুষের মধ্যে পরিচালিত জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৯১ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের দেশের সবচেয়ে সাধারণ ভাষা বলতে সক্ষম একজন মানুষ সত্যিকারের জাতীয় পরিচয় ধারণকারী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সঙ্গত কারণেই বাঙালি জাতি ভাষার জন্য লড়াই করে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভাষার জন্য লড়াই করে জীবন দেয়া জাতি রাষ্ট্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পাকিস্তানি দুষ্টু রাষ্ট্রনায়করা আমাদের টুঁটি চেপে ধরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একটির নাম হয় পাকিস্তান, অন্যটির নাম ভারত। বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়, যার নাম ছিল পূর্ব বাংলা। ১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলা পুনঃনামাঙ্কিত হয় পূর্ব পাকিস্তান। বাঙালির ওপর নানা অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের স্টিমরুলার চালায় পাকিস্তানি স্বৈর শাসকরা। এরা চেয়েছিল আমাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা কেড়ে নিয়ে পরিচয় মুছে দিতে। এখানে দুটি বিষয় মুখ্য ছিল- ১। বাঙালির আত্মপরিচয়ের বিষয়, ২। অর্থনৈতিক বিষয় অর্থাৎ বাংলা ভাষা যদি মুছে দেয়া যায় এবং উর্দু যদি চাপিয়ে দেয়া যায়, তাহলে উর্দু না জানার কারণে বাঙালিরা চাকরির ইন্টারভিউয়ে ভালো করতে পারবে না, ফলে চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে। পাকিস্তানিরা ভাষায় এবং ভাতে মারতে চেয়েছিল আমাদের। সে জন্যই তারা আমাদের ভাষার ওপর আঘাত করেছিল।
ভাষা আন্দোলনই মূলত বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের বীজ বপন করে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর ও জব্বাররা।
ভাষাশহীদদের আত্মা প্রথম শান্তি পায় ১৯৫৬ সালে ২৩ মার্চ পাকিস্তানের সংবিধানে যে দিন বাংলা ভাষাকে দেশের অনত্যম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০০০ সালে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেয়, তখন ভাষাশহীদদের আত্মা দ্বিতীয়বার প্রশান্তি লাভ করে। আমরা এখন দিবসটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করি। সারা বিশ্ব দিবসটি পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
ভাষা আন্দোলনে উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতা আন্দোলনে মাত্র ৯ মাসেই তাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। অবশ্য এ জন্য দিতে হয় এক সাগর রক্ত আর সীমাহীন ইজ্জত। ’৭১-এ দেশ স্বাধীন হলো বাঙালি জাতি পেল একটা মানচিত্র, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হলেন। ১৯৭২ সালের ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি ঐতিহাসিক নির্দেশ জারি করেন। দেশের আইন ও আদালতের রায় বাংলা ভাষায় লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার ও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ কি এখনো পুরোপুরি আমরা মান্য করছি। ভাষার মাস এলেই কেবল আমরা আমাদের জাতীয় পরিচিতির স্মারক নিয়ে ভাবি, কথা বলি।

কাজী মো. আতাউর রহমান : প্রধান শিক্ষক, ভলাকুট ক্ষেত্রনাথ বিশ্বাস (কেবি) উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়