নামাজ পড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা : গাজীপুর

আগের সংবাদ

মাঝপথে কাজ বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে বরিশালের বাসিন্দারা : সড়ক নয় যেন ধুলার রাজ্য

পরের সংবাদ

সিয়েরা লিওন বাংলা ভাষায় কথা বলা ভিনদেশি মানুষের দেশ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিয়েরা লিওনকে বলা হয় হীরের খনিতে পরিপূর্ণ পশ্চিম আফ্রিকার একমাত্র গরিব দেশ। দেশটির মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে চকচকে হীরে। আর এ হীরে নিয়েই পশ্চিমাদের যত লুলুপ দৃষ্টি। এ হীরে নিয়েই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলেছে বছরের পর বছর। ১৯৯১ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দেশটিতে গৃহযুদ্ধে মারা গেছে ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষ। ২০০২ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান হলেও এখনো পশ্চিমা দেশগুলো দেশটিতে ঘাবটি মেরে বসে আছে। দেশটিতে ব্যাপক হীরে থাকার পরও ৭০ ভাগ মানুষ এখনো গরিব। সিয়েরা লিওনের প্রতি ঘরে ঘরে সন্তানরা একটু বড় হলেই হীরে খোঁজার কাজে নেমে পড়ে আর এ কাজে মদদ দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। এ হীরেগুলো তারা তাদের কাছ থেকে কিনে নেয় পানির দামে। ১৯৬১ সালে ২৭ এপ্রিল স্বাধীনতা লাভ করার পর সিয়েরা লিওন ওই বছরেই জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। তার তিন দশক পরই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, সে গৃহযুদ্ধ চলে এক দশকজুড়ে।
এ গৃহযুদ্ধ থামানোর জন্য জাতিসংঘ নিয়োগ করে বিভিন্ন দেশের চৌকস সেনাবাহিনী আর এ জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিয়েরা লিওনকে পুনর্গঠন করতে গিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইংরেজি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সিয়েরা লিওনবাসীর সঙ্গে বাংলা ভাষায়ও কথা বলতে শুরু করে। আর বাংলাভাষাকে সিয়েরা লিওনবাসী খুব সহজে গ্রহণ করতে থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা এ ভাষায় কথাও বলতে শিখে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলতে সিয়েরা লিওনবাসী এক সময় বাংলা ভাষার ভক্ত হয়ে যায় এবং এ ভাষায় তারা ভাবের আদান প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ করতে থাকে। এমনকি অসংখ্য সিয়েরা লিওনবাসী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পর্যন্ত একেবারে বিশুদ্ধ বাংলায় মুখস্থ করে তা গাইতে থাকে। গৃহযুদ্ধের পর সিয়েরা লিওন পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলহাজি আহমদ তেজান কাববাহ বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই সিয়েরা লিওনবাসী ক্রমেই বাংলা ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এখন সেখানে বাংলা ভাষার স্কুল গড়ে উঠেছে যেখানে ছোট ছোট শিশুরা বাংলা ভাষা চর্চা করছে। প্রকৃতপক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে সেখানে সিয়েরা লিওনের মতো একটি ভিন্ন ভৌগোলিক এবং ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষজন বাংলা ভাষায় কথা বলছে এটি বাংলাদেশ এবং আমাদের জন্য পরম গর্বের। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের মাতৃভাষা অন্য একটি দেশের বেশিরভাগ মানুষ বলতে পারাটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। দেশটির মানুষের মধ্যে উক্ত ভাষা শেখার জন্য প্রাণের তাড়না না থাকলে তা কখনো সম্ভব হত না। এ ক্ষেত্রে সিয়েরা লিওনবাসী আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছে এবং এ ভাষা দ্রুত শেখারও তাগিদ অনুভব করেছে, তাই তারা এ ভাষাকে সহজেই আত্মস্থ করতে পেরেছে।
এর আগেও ব্রিটিশ আমলে আমরা লক্ষ করেছি অনেক ব্রিটিশই বাংলা ভাষায় আদো আদো গলায় কথা বলতে পারত, তবে তারা এটা বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে শেখেনি। এ ভাষা তারা শিখেছিল এদেশে প্রশাসনিক কার্য পরিচালনার সুবিধার জন্য। ব্রিটিশরা এদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর বাংলা ভাষাকে তারা আর মনেও রাখেনি। এখন অবশ্য কালের সাক্ষী হিসেবে বিভিন্ন নাটক কিংবা ছায়াছবিতে ইংরেজদের সে আদো আদো বাংলা ভাষায় কথা বলা আমরা দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে সিয়েরা লিওন সম্পূর্ণ আলাদা। তারা বাংলা ভাষাকে শুধু শেখেনি তার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে কাগজে কলমে স্বীকৃতিও দিয়েছে এবং হৃদয়ে ধারণও করেছে। এটি সিয়েরা লিওনবাসীর আরেকটা দেশের ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার নিদর্শন। প্রকৃতপক্ষে কোনো একটি দেশের ভাষাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হলে সে ভাষা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ গবেষণা করা দরকার।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়