জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করুন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা আর নয় : নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী > বিশ্ব নেতাদের প্রতি ৬ প্রস্তাব শেখ হাসিনার

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্য শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ : কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী > শিক্ষক সংকটও চরমে > বিদেশে চাকরি ও প্রশিক্ষণে বাধা

পরের সংবাদ

নতুন সংসার, সুখের হয় বোঝাপড়ার গুণে!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিয়ে নিয়ে সকলেরই অনেক ভাবনা থাকে। মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় এই সম্পর্ক মানামানি আর মানিয়ে চলার ওপর। বিয়ে মানে শুধু দুটো মনের মিল নয় এর সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক দায়িত্ব, তৈরি হয় আরো অনেক নতুন সম্পর্ক, থাকে অনেক চাওয়া পাওয়া। একারণে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি হাত বাড়ানোটা জরুরি। ঘরের কাজ নারীর, বাইরের কাজ পুরুষের এ ধারণাকে বিদায় বলতে হবে। যদি বিবাহিত জীবনকে যদি একটা খেলার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে এই খেলায় আপনি জিতলে শুধু আপনার সঙ্গী হারবে না, সঙ্গে আপনিও হেরে যাবেন। জয়ী হবেন যখন আপনার সঙ্গীও জিতবেন। লক্ষ্য জয় বা পরাজয়ের না, সমতার। পথচলাটা এগিয়ে যাবার নয়, সঙ্গে চলার।

আশরাফুল ইসলাম রানা

পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিন
আপনার বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি দুটো কিন্তু আলাদা পরিবার। দুটো পরিবারের ধারাটাও আলাদা হবে। নতুন পরিবারের নতুন পরিবেশে আপনাকে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে। পরিবর্তন গুলোকে বিরক্তির সাথে না দেখে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবুন। ধরুন, আপনার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই কিন্তু শ্বশুরবাড়ির সকলে জলদি ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এই ধরনের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোকে বিরক্তির সাথে না দেখে ভাবুন এটা আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। গবেষণায় দেখা গেছে, কোন কাজ যদি টানা ২১ দিন করা হয় তবে সেটি অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই পরিবর্তন গুলোকে প্রথম থেকে পজিটিভ ভাবে নেন তবে আপনার জন্য নতুন কিছুর সাথে খাপ খাওয়ানো অনেক সহজ হবে।

শ্রদ্ধাশীল থাকুন
মনে রাখবেন, পরিবারের বড়দের কখনো অপমানজনক কথা বলবেন না। হয়তো তাদের মন মানসিকতা বর্তমান যুগের মতো নয়। তাদের বোঝার চেষ্টা করুন। শ্বাশুড়ি মা শ্বশুরবাড়িতে আপনার প্রথম আশ্রয়স্থল। তাকে যেহেতু মা বলে ডাকছেন তাকে নিজের মা ভাবুন। তারসাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তিনি পাশে থাকলে নতুন সংসারে মানিয়ে নেওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন কিছু মনে হবেনা। মনে রাখা দরকার, শ্বশুরবাড়ি কখনই আপনার প্রতিপক্ষ নয়। তাদেরকে নিজের পরিবারের একটা নতুন সংযোজন বলে ভাবুন, দেখবেন যে তা তখন এত অপরিচিত মনে হবে না। আপনার স্বামী এই পরিবারেই বড় হয়েছেন এবং পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে এই পরিবারকে তিনি বেশি ভালবাসেন। আর তার ভালবাসার মানুষরা তো আপনারও ভালবাসার মানুষ।

নিজের করে ভাবতে শিখুন
বিয়ে মানে শুধু দুটো মনের মিল নয় এর সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক দায়িত্ব, তৈরি হয় আরো অনেক নতুন সম্পর্ক, থাকে অনেক চাওয়া পাওয়া। তাই যে মানুষটির সাথে সারাজীবন পথ চলার স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি জীবন শুরু করেছেন তার মতো তার পরিবারকেও নিজের ভাবুন। কারণ, বিয়ের আগে আপনি ছিলেন কারোর কন্যা, কারোর বোন। আর বিয়ের পর আপনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে আরো নতুন সম্পর্ক।

সরাসরি কথা বলা
সরাসরি কথা বলুন। কোন সদস্যের সাথে কোন কিছু নিয়ে সমস্যা হলে সেটা আগে ভালভাবে বুঝুন, আদৌ সেটা সিরিয়াস কিনা, যদি মনে করেন সিরিয়াস তাহলে সরাসরি কথা বলুন, তবে সেটা যেন হয় বিনয়ের সাথে, শাশুড়ির সাথে সমস্যা হল, সঙ্গে সঙ্গে মাকে ফোন করে ডেকে এনে তাকে দিয়ে বলানোর চেয়ে আগে নিজে চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টাতেই সবচেয়ে ভালো সমাধান আসে। এগুলো-ই সুখী দাম্পত্য জীবনের সহজ রহস্য।

তুলনা নয়
দুই পরিবার নিয়ে কখনো তুলনা করা যাবে না। একদম ভিন্ন পরিবেশ, সামাজিক অবস্থান আর পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছেন দুজন। তাই ‘আমার পরিবারের কেউ তো এটা বলেনি বা চাননি তোমরা বলেছ বা চেয়েছ’ ধরনের কথা বলা যাবে না। প্রতিটি পরিবারের নিজস্বতা আর সীমাবদ্ধতা থাকে। সময় নিন, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন। প্রত্যেকটা মানুষকে জানুন।

রাগ নিয়ন্ত্রন করতে শিখুন
সংসারে অনেক কিছুই হয়ে থাকতে পারে যা হয়তো আপনার মন মতো নয় কিন্তু তাই বলে যদি আপনি রাগের বশে এমন কিছু করে ফেলেন যার জন্য পরে ভুগতে হবে তাহলে ক্ষতিটা আপনারাই হবে। গুরুজনেরা অনেক সময় অনেক কিছুর আদেশ করতে পারেন। তাদের কথায় বিরূপ মনোভাব না দেখিয়ে শুনুন তারপর নিজের মতামত দিন। কোন কিছু নিয়ে খুব সমস্যা হলে তাদের খুলে বলুন। আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল বিষয় সহজ হয়ে যায়।

নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
দূরে কাছের সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যদি আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি বা দেবর-ননদ আপনাদের সাথে না থাকেন, তাহলে প্রতিদিন একবার আপনার শ্বশুর-শাশুড়িকে ফোন করুন, তাদের দিন কেমন কেটেছে জিজ্ঞেস করুন, আপনি সারাদিন কী কী করলেন সেগুলো তাদের বলুন।
এতে করে সম্পর্ক অল্পদিনেই সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া অন্য সদস্য যেমন দেবর-ননদ তাদের সাথে সপ্তাহে অন্তত দু-তিন বার যোগাযোগ করুন। এতে সম্পর্ক ভালো থাকবে। টেকসই হবে। পাশাপাশি বাড়িতে ছোট সদস্য থাকলে তাদের সাথে সময় কাটান, গল্প করুন। দেখবেন নিজের পরিবারকে ফেলে আসার কষ্টটা অনেকখানি লাঘব হয়ে গেছে। তাদের জন্মদিন কখন জেনে নিন, তাদের পছন্দের খাবার গুলো বানিয়ে নিন। তাদের সাথে বাইরে ঘুরতে যান।

সঙ্গীর প্রশংসা করুন
স্ত্রীর পাশাপাশি স্বামীরও কিছু দায়িত্ব থাকে। তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করুন। নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সম্মানবোধ তৈরি করুন। একে অপরের বন্ধু হন, তার কাজগুলোয় সাহায্য করুন। পারবো না বা কষ্ট হবে এরকম মন মানসিকতা দূরে রাখুন। তার পরিবারকে সম্মান করুন। এছাড়াও সম্পর্কের শুরু থেকেই আপনার সঙ্গীর প্রশংসা করুন। দেখুন ভালো দিক, বিরক্তিকর দিক সবারই আছে। তাই সম্পর্কের যতœ নিতে হবে উভয়েরই।

ভুল সবারই হয়
ভুল সবারই হয়, তা ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে চেষ্টা করুন। মনের কথা মনেই থাক, সেটাকে বাইরে আনার দরকার নেই। এখন আপনাকে বাড়ির ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। মাথায় বুদ্ধি রেখে যতœবান স্বভাব দিয়ে নতুন পরিবারের মানুষগুলোর মন জয় করতে হবে।

ইগোকে না বলুন
ইগো কে না বলুন। সম্পর্কে তিক্ততা আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে আমাদের ইগো। সবসময় বিনয়ী থাকুন, ইগোকে দূরে সরিয়ে রাখুন। যেকোনো খালি স্পেস ভালবাসা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব, সময় লাগতে পারে, কিন্তু অসম্ভব নয়। নতুন সংসার সুন্দর করে গরে তুলতে আপনার ইগোকে পরিহার করতে হবে। তাই সবার সহযোগিতা যেমন কাম্য, তেমন নিজেকেও সহযোগী মনোভাব রাখতে হবে। ছোট এবং বয়োবৃদ্ধ, তাদের আপনার ভক্ত করে ফেলুন। এতে সবার মনে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে। মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনুন।

সাধারণত, বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবনের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই কথা মাথায় রাখতে হবে। বিয়ের পরে নতুন মানুষ, নতুন সংসার একটু আধটু অসামঞ্জস্য থাকবেই। সেগুলো নেগেটিভ-ভাবে না নিয়ে, তাদের বোঝার চেষ্টা করুন। এই সময়টা আনন্দের, একে অপরকে ভালবাসার।
তাই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট না করে বুদ্ধিমত্তার সাথে এগুলো মোকাবিলা করুন। মনে রাখবেন একটি নতুন সংসার সুখের হয় বোঝাপড়ার গুণে। দেখবেন, বছর ঘুরে আসার আগেই এই নতুন পরিবারও আপনার আপন হয়ে গেছে।

ছবি: দম্পতিদের নিজস্ব

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়