পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

৪০০ টাকায় বিদেশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখতে পাবো যে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তের বেনাপোল থেকে কলকাতা কয়েক ঘণ্টার পথ। উত্তরের বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি খুব কাছের শহর নয়। সিলেট সীমান্ত থেকে গৌহাটি, শিলং বেশ দূরবর্তী। কিন্তু আগরতলা? একদম গা-ঘেষাঁ স্বল্প খরচে যারা ভারতে ঘুরতে এবং কেনাকাটা করতে চান তাদের জন্য আগরতলা হতে পারে উত্তম গন্তব্য। সীমান্তের খুবই কাছে। আখাউড়া হয়ে যেতে রেলপথসহ খরচ ৪০০ টাকার বেশি না!

শামসুল আলম

ঢাকা থেকে ভারতের সবচেয়ে কাছের রাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলা। এখানে মিলবে বেশকিছু দর্শনীয় স্থানও।

উদয়পুর বিজ্ঞান কেন্দ্র:
আগরতলা থেকে ৫১ কিমি দূরে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম জেলা “গোমতী” জেলা সদর এর নাম উদয়পুর। এক সময় এই উদয়পুর তথা রাংগাামাটিই ছিল ত্রিপুরার রাজধানী। গোমতী নদীর কোল ঘেষে সুন্দর নিরিবিলি ছিমছাম প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে করোনাকালে উদ্বোধন করা হয়েছে উদয়পুর বিজ্ঞান কেন্দ্র। বিজ্ঞানের ছোট ছোট ম্যাজিক বা অনেকগুলো চমকপ্রদ কলাকৌশল তুলে ধরা হয়েছে সাজানো গোছানো কমপ্যাক্ট বা ছোট্ট পরিসরের এই বিজ্ঞান কেন্দ্রে।

সিপাহিজলা অভয়ারণ্য:
সিপাহিজলা অভয়ারণ্য আগরতলা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে সিপাহিজলা অভয়ারণ্য। অনেকটা সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মতো। আগরতলা থেকে সিপাহিজলা যাবার পথটি বেশ রোমাঞ্চকর।

হেরিটেজ পার্ক:
আগরতলা শহরে অবস্থিত হেরিটেজ পার্কটিতে মিনিয়েচার ফর্মে তুলে ধরা হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতিকে। এই পার্কটি এক চক্কর দিলে সমগ্র ত্রিপুরার রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সব নদ, নদী, পাহাড়, পবর্ত, রেলপথ এবং দর্শনীয় স্থান সমূহ ছোট অবয়বে রিপ্লিকার মত দেখা হয়ে যায়। এটি একটি অসাধারণ ধারণা এবং চমৎকার উদ্যোগ। পার্কটির নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণও করা হচ্ছে খুবই যতœ সহকারে। সমগ্র পার্কটি এবং এর প্রতিটি কর্ণারই আবর্জনা মুক্ত, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। হেরিটেজ পার্ক সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

উজ্জয়ন্ত প্যালেস
আগরতলার রাজবাড়ি উজ্জয়ন্ত প্যালেসের বাইরের পরিবেশ চমৎকার। এর নির্মাণ শৈলি, খোলা মাঠ, প্রশস্থ বাগান, পানির ফোয়ারা সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার পরিবেশ। জাদুঘরটি খুব বেশি সমৃদ্ধ না হলেও এর একটা অংশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সে সময়ের প্রকাশিত পত্রিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক ছবি আছে, যেটি দেখলে ভাল লাগবে।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। প্রবেশ ফি স্থানীয়দের জন্য ২০ রুপি আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ রুপি। মনে রাখবেন, উজয়ন্ত প্যালেস সোমবারে বন্ধ থাকে। উজয়ন্ত প্যালেসের আশেপাশে অনেক স্ট্রিট ফুড পাবেন।
আর শহরের বাইরে উনকোটি, নীরমহল আর নর্থ-ইস্টে হিল সাইড আছে যা ভ্রমণ সময়সাপেক্ষ।

নীরমহল :
ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘর মহুকুমায় ৫.৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত বিশাল রুদ্রসাগর লেকের মাঝে তৈরি করা হয়েছে এই নীরমহল। সমগ্র ভারত বর্ষে এটি সবচেয়ে বড় ওয়াটা প্যালেস। মানিক্য বংশের শেষ রাজা বীর বিক্রম মানিক্য ১৯৩৫-১৯৩৮ সময়কালে এই বিশাল মহলটি নির্মান করেন। প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুট দীর্ঘ ২৪ কক্ষ বিশিষ্ট বিশাল এই মহলের এক পাশে রাজ পরিবারের সদস্যদের শয়ন কক্ষ, দরবার কক্ষ, নাচ কক্ষ, বাগান ইত্যাদি এবং অন্য পাশে ছিল রাজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় রক্ষিত প্রহরীদের থাকার ব্যবস্থা। আগরতলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীরমহল। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৩০মিনিট। রুদ্রসাগরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে মুসলিম স্থাপত্য রীতিতে তৈরি মহলটি দেখতে অনেক সুন্দর। ৩০ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে ট্রলারে করে মহলে যেতে হয়। শহর থেকে বাসে অথবা গাড়ি ভাড়া করেও নীরমহল যেতে পারেন। উজ্জয়ন্ত প্যালেসের সামনে অথবা মটর স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি রিজার্ভ করতে পারবেন। সারাদিনের জন্য সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা নিবে। গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে ড্রাইভারকে বলে রাখবেন বিকেল ৫টার আগে যেন চেকপোস্টে নামিয়ে দেয়। এতে সন্ধ্যা ৭টায় আখাউড়া থেকে মহানগর গোধূলি ট্রেনে ঢাকা ফেরত আসতে পারবেন।

কীভাবে যাবেন:
সরাসরি আখাউড়া ট্রেন না পেলে আজিমপুর (বিবাড়িয়ার পরের স্টপেজ) এ যেয়ে অটো নিতে পারবেন। সকাল সকাল গেলে ঢাকা থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ভাল অপশন। তবে, আগরতলা যাত্রা ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করলে সকাল ১১টার মধ্যে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে নামিয়ে দিবে। ভাড়া ১৮০ টাকা। এছাড়া গুলিস্থান থেকেও সরাসরি বাস যায় ভাড়া ৮০০ টাকার মত।
এরপর গন্তব্যে পৌঁছে সকালের নাস্তা সেরে অটোরিকশা অথবা সিএনজিতে করে চেকপোস্ট চলে যাবেন। ভাড়া নিবে সিএনজি জনপ্রতি ৩০-৫০ টাকা। চেকপোস্টে ১ হাজার টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে অভিবাসন অফিসের কাজ শেষ করে ঢুকে পড়বেন ভারতীয় সীমানায়। সেখানে সব কাজ শেষ করে ভারতের মূল ভূখন্ডে প্রবেশ। তবে দুই ইমিগ্রেশনের কোন প্রান্তেই কাউকে কোন বাড়তি টাকা বা ঘুষ দিবেন না। পাশাপাশি আগরতলা থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ভারতের প্রায় সব গন্তব্যে কম খরচে ভ্রমণ করা যায়। উল্লেখ্য, এয়ারপোর্ট শহর থেকে অনেকটা দূরে (বর্ডার থেকেও ৮ কিলোর বেশি)। যেদিন আগরতলা ঢুকবেন ফ্লাইট তার পরদিন হলে উজয়ন্ত প্লেস বা কামান চৌমুহনীর আশেপাশেই হোটেল নেবেন এয়ারপোর্টের কাছে না নিয়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়