পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

হাইস্ট্রিট ফ্যাশনের পথিকৃৎ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পোশাকে উজ্জ্বল রংয়ের ব্যবহারে তিনি মাতিয়েছে ষাটের দশক। তার কারণেই টিউনিকের জায়গা দখলে নেয় ছোট, আয়তাকার, সাদামাটা স্কার্ট। জনপ্রিয় হয় মিনিস্কার্ট। বলছি, ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার ডেম মেরি কোয়ান্টের কথা। হাইস্ট্রিট ফ্যাশনের পথিকৃৎ এই ফ্যাশন ডিজাইনার স্টাইলের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে পরার আনন্দ। আর পোশাককে করেছেন ক্রয়সাধ্য। প্যাটার্ন করেছেন টাইটস হটপ্যান্ট ও প্ল্যাস্টিক রেনকোটেরও।

আশরাফুল ইসলাম রানা

ইতিহাস কথা বলে
উইনস্টন চার্চিল একবার বলেছিলেন আ গুড স্পিচ শুড বি লাইক আ উওম্যান’স স্কার্ট; লং এনাফ টু কভার দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড শর্ট এনাফ টু ক্রিয়েট ইন্টারেস্ট।
অর্থাৎ, ভালো বক্তৃতা অনেকটা মেয়েদের স্কার্টের মতো হওয়া উচিত। যাতে বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট বলার পরেও তা নিয়ে পর্যাপ্ত কৌতূহল রেখে দেয়া যায়।
মিনি স্কার্ট নিয়ে লেখার শুরুতেই এই দুই বাক্য বলে নিলে পরের গাঁথুনির কাজটা সহজ হয়, তাই উদ্ধৃতিটা গোড়াতেই জানিয়ে দেয়া। এতে বিষয়ের আভাস দিয়ে খানিক কৌতূহলও হয়তো তৈরি করা গেল!
ব্রিটিশ এই ফ্যাশন ডিজাইনার ১৯৬০-এর দশকে মিনি স্কার্ট তৈরি করে ইতিহাস গড়েছিলেন ডেম মেরি। অন্য এক দল অবশ্য বলেন, মেরি নন। মিনি স্কার্টের জন্ম আন্দ্রে ক্যুরেজেসের হাত ধরে। কিন্তু এই তত্ত্ব তেমন জোরালো নয়।
কিন্তু মেরি বা আন্দ্রের আগে কি মিনি স্কার্টের চল ছিল না? ইতিহাস ঘাঁটলে মনে হয়, বহু বহু আগে থেকেই ছোট কাপড়ের টুকরো স্কার্টের মতো ঘিরে পরার অভ্যাস ছিল মানুষের। এ ক্ষেত্রে মিশরীয় সভ্যতার নানা ফ্রেস্কো আর্কিওলজিস্টদের হাতে থাকা অন্যতম বড় প্রমাণ। সেখানে দেখা যায়, ৫ হাজার ৪০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এ ধরনের পোশাকে শরীরের নি¤œভাগ আড়াল করার চল ছিল। ৪৭৬ থেকে ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যুদ্ধের সময়ে চিনের পুরুষদেরও এমন পোশাক পরতে দেখা গিয়েছে।
১৯২৫-এর আশপাশে মার্কিন এন্টারটেইনার জোসেফাইন বেকার তার বিখ্যাত ‘বানানা ডান্স’-এর পোশাকে ঝড় তোলেন। খাটো ওই পোশাক অনেকটা ছোট স্কার্টের মতোই, তবে অনেক বেশি সাহসী। এবং তা নাকি তৈরি করা হয়েছিল কলা দিয়ে।
তবে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের আগে মিনি স্কার্ট নিয়মিত ফ্যাশনের অঙ্গ হয়নি। বিপ্লবের সঙ্গে সমর্থকও হয়নি। ১৯৫৮-এ বিখ্যাত গাড়ি মিনি কুপারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মেরি তার তৈরি ছোট স্কার্টের নাম রেখেছিলেন ‘মিনি স্কার্ট।’ মেরির প্লাস্টিক পিটার প্যান কলার টপের প্রবল চাহিদা থাকলেও তাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল মিনি স্কার্টই।

ব্রিটেনে হইচই এবং অত:পর
গত শতকের পাঁচের দশক থেকে একটু একটু বদলাতে শুরু করেছিল ফ্যাশন। তখনই মিনিস্কার্টে নিরীক্ষাধর্মী কাট ও উদ্ভাবন করে তিনি হইহই ফেলে দিয়েছিলেন ব্রিটেনে। ১৯৫৭ সালে সেই সময়ের অন্যতম হাই প্রোফাইল মডেল লেসলি লসন, যিনি টুইগিগ নামেই খ্যাতিমান ছিলেন, তিনি মেরির তৈরি মিনিস্কার্ট পরে কেবল লন্ডন নয়, সাড়া দেন বিদেশেও। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন লন্ডনের ইয়ুথকোয়েকের পোস্টার গার্ল।
অনেকেই তাকে মিনিস্কার্টের উদ্ভাবক বললেও তিনি তা নন; বরং তার সময়কার তরুণীদের কাছে এই পোশাককে জনপ্রিয় করে তোলায় ভূমিকা রাখেন তিনি। আর তিনি নিজেও সব সময়ই পরতেন মিনিস্কার্ট। এমনকি অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) সম্মাননা গ্রহণের সময়ও পরেন মিনিস্কার্ট।
ভিদাল স্যাসুন হেয়ারকাট ছিল তার সিগনেচার। কেবল মিনিস্কার্ট পরা নয়, এর নানা ডিজাইনও করেছেন মেরি কোয়ান্ট। কেবল মিনিস্কার্টের বিবর্তনেই নয়, বরং নানাভাবে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন ফ্যাশনকে। এর অন্যতম উদাহরণ হতে পারে, একটা ফ্যাশন লেবেলকে ব্র্যান্ডে রূপান্তরের ঘটনা। সে সময় সেটা করে দেখিয়েছেন তিনি। সে সময়ই তিনি নিজের লেবেলে নিজেই লোগো ডিজাইন করেছেন। পরে প্যাকেজিংকেও দৃষ্টিনন্দন করেছেন। আর ১৯৬৩ সালের তুলনায় কম দামের পোশাক ও মেকআপ লাইন বাজারে আনেন। নাম দেন জিঞ্জার গ্রুপ। তিন বছর পর বাজারে আসে তার প্রসাধনী; যেটা আজও অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
সে সময় তরুণদের কথা সেভাবে ভাবা হতো না। এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মেরি কোয়ান্ট তরুণদেরই নিয়ে এসেছেন মধ্যমঞ্চে। তাদের জন্য ডিজাইন করেছেন। পোশাকে রং ছড়িয়েছেন। ষাটের দশকের ফ্যাশনকে উচ্ছলতায় ভরিয়ে তরুণদের কাছে কোয়ান্ট হয়ে ওঠেন রোলমডেল।

ট্যাপডান্সিং থেকে অনুপ্রেরণা
মেরি কোয়ান্টের মা ও বাবা ছিলেন ওয়েলসের। উভয়ই ছিলেন শিক্ষক। কোয়ান্টের জন্ম ১৯৩০ সালে, লন্ডনে। স্কুলে থাকতেই তিনি নিজের স্কার্টের ঝুল কমাতে থাকেন। তিনি প্রাণিত হয়েছিলেন ট্যাপডান্সিং ক্লাসে একজনকে ছোট স্কার্ট পরতে দেখে। এরপর তিনি এটাকে ক্রমে দৈর্ঘ্য কমিয়ে মিনিতে পরিণত করেন। ১৯৫৫ সালে কোয়ান্ট ও তার স্বামী আলেকজান্ডার প্লাংকেট গ্রিন মিলে কংস রোডে খোলেন বাজার নামে একটি স্টোর। সে সময়ই মেরি কোয়ান্ট রিটেইলের চিরাচরিত নিয়মকে বদলে ফেলেন তার ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে। আর বেশির ভাগ সময়ই তিনি বটমের ডিজাইন করেছেন। চমকে দিয়েছেন উজ্জ্বল সব রঙের ব্যবহারে।

স্রষ্টার বিদায়
গতবছর এপ্রিলে ৯৩ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন ডেম মেরি কোয়ান্ট। ব্রিটিশ এই ফ্যাশন ডিজাইনার ১৯৬০-এর দশকে মিনি স্কার্টের বৈচিত্র্য এনে তৈরি করে ইতিহাস গড়েছিলেন। শোনা যায়, একবার লম্বা স্কার্ট পরে বাসের পিছনে দৌড়তে গিয়ে নাকি সমস্যায় পড়েছিলেন মেরি। তার পরেই মিনি স্কার্টের গোড়াপত্তন।
যে কারণে মেরি বলতেন, পথই এই পোশাকের জন্ম দিয়েছে। গতবছর এপ্রিলে মারা যাবার পর ‘দ্য ইকনমিস্ট’-এর সংখ্যায় মেরির একটি স্মৃতিচারণ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তার স্কার্টের বিষয়ে লেখা ‘হঠাৎই সাজগোজে বদল! টিউনিকের জায়গা নিল ছোট, আয়তাকার, সাদামাটা স্কার্ট।
কিশোরী মেয়েকে বাবা-মা সেটা কিনে দিতে রাজি না হলেও মেয়েদের জেদের সামনে হার মানতে বাধ্যই হতেন এক সময়ে। স্রষ্টা বিদায় নিলেও জনপ্রিয়তায় যুগ যুগ বেঁচে থাকুক তার সৃষ্টি করা মিনি স্কার্ট।

সূত্র : ভোগ, গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল ও হাল ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়